বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আসসালামুআলাইকুম । সবাইকে আমার আন্তরিক প্রীতি, সম্মান, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জ্ঞাপন করছি। আশাকরি আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।

এখন যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে যাচ্ছি তা হয়তো পরিপূর্ণ কোন টিউন নয়। আমার অনেকবার এই বিষয়টি আপনাদের কাছে তুলে ধরতে ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু মন কেনো জানি সায় দেয় নি। পাছে কেউ যদি আমার তির্যক কথায় কষ্ট পেয়ে বসেন।

আসল কথায় আসি। শুনুন। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি টেকটিউনসে এমন এমন ভাই/বোনরা নিয়মিত আসেন, কাছে থাকেন, মাঝে মাঝে হয়তোবা বাংলিশে কিছু কিছু মন্তব্যও করেন। কিন্তু দেখা যাবে এরা আমরা যারা টিউন করি তাদের থেকে হয়তোবা হাজারগুন বেশী জানেন।

ক্বলবে জোর আছে কিন্তু কলমে বাঁধা পড়েন। লিখতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু লিখেন না। একমাত্র কারণ বাংলাটাইপ না জানা কিংবা বাংলা টাইপের প্রতি অনিহা কিংবা বাংলাভীতি। আমিও একসময় বাংলা টাইপ জানতাম না। যখন কম্পিউটারের উপর ডিগ্রি নিয়ে বেড় হই তখনও না। এমন কি আমি যাদের মাধ্যমে টেকটিউনসকে চিনেছি তারাও জানেন না বাংলা টাইপিং। কিন্তু কেন? অনেকে “আমি বাংলা টাইপ জানি না” এই কথাটি এমন ভাবে বলেন, যেন বাংলাটাইপ না জানা গর্বের কিছু। আমি হাজারো গ্রাজুয়েটদের সাথে চ্যালেঞ্জ ধরে বলতে পারি তারা একটি ইংলিশ মুভির ৩০% কথা বোঝেন কিনা সন্দেহ। তারপরও তাদের ইংলিশ মুভি প্রিয়। এতে কোনো অভিযোগ করছি না কারণ আমরা সবাই কমবেশী জানি দুই বাংলার মুভি গুলোর চেয়ে হলিউড, বলিউড, তামিল, ইরানী, পোলিশ ইত্যাদি মুভি গুলোর গঠনশৈলী ও কারিগরি দিক অনেক অনেক বেশী উন্নত। স্বভাবতই এক্ষেত্রে ভিন্ন ভাষার মুভি প্রিয় হতেই পারে।

এখন কেমন জানি প্রযুক্তির জগতে বাংলাভাষা তুষের আগুনের মত জ্বলছে। এর মানে বাংলাভাষা একসময় বিজরী শিখার মত জ্বলে ওঠার পাশাপাশি গর্জেও উঠবে। জাপান সেই রবিন্দ্রযুগেই বিজ্ঞানের পরিভাষা তৈরি করে প্রযুক্তির চরম শিখরে অবস্থান করে নিয়েছে। আজও তারা উন্নত। রবিন্দ্রনাথের একটা প্রবন্ধে জাপানিজ দের ভবিষ্যৎ জয়গাঁথা গাওয়া হয়েছিলো। আজ যা সত্যি। আবার প্রমথ চৌধুরী যে কিনা ঠাকুর পরিবারের জামাই, অনেক কষ্টের বিনিময়ে তার হাত ধরে সাধুরীতির পাশাপাশি চলতি রীতিকে নিয়ে এসেছেন। আর আজ সধুরীতি মৃতপ্রায়। সময় সহোজ টাকেই মেনে নেয়। কিন্তু এগিয়ে আসতে হয় সবার। আমি সাহিত্যের লোক নই। আমি মনেপ্রাণে ও লেখাপড়ায় কম্পিউটার জগতের এক জন লোক। তাই ঐ সব মহাপুরুষদের মত আমি বক্তৃতায় বখতিয়ার খিলজী নই।

আমি বাংলার চেয়ে কোনো ভাষাই ভালো বুঝি না। তবে আমি চেয়ারের জায়গায় কেদারা, ওপেন এর জায়গায় উম্মিলন কিংবা ডাটা বা ডেটার জয়গায় উপাত্ত বসাবার পক্ষপাতি না।

নজরুলের একটা কবিতার লাইন “বন্ধু গো আর কহিতে পারি না, বড় বিষ জ্বালা এই বুকে। তাই দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, যাহা আসে কই মুখে।” আমি তেমন অনেক এক্সপার্ট মানুষের মধ্য বাংলা লেখার অনিহা দেখে নিজে নিজে দুঃখ পাই। “আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে।“ আমার স্বপ্ন আমরা বাংলা ভাষায় ইন্টারনেট এর সব তথ্য পাবো, বাংলা ভাষায় সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজবো, বাংলায় চেটিং করবো। এমনিকরে দেখা যাবে খুব অল্পসময়ের ব্যবধানে আমাদের মোটামুটি সবাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই এক্সপার্ট হয়ে গেছে।

বিশ্বাস করুন আমি উপদেশ দেয়ার জন্য লিখছি না। আমি খুঁজছি সেই অনাগত টিউনারকে যিনি অনেক কিছু দিতে পারেন শুধু বাংলা টাইপিং না জানা কিংবা ভাষা খুঁজে না পাবার কারণে দিতে পারছেন না। দয়াকরে কেউ আমার কথাকে উপদেশ মনে করবেন না প্লিজ!!!

এবার আমি বাংলা ভীতি দূর করার সহোজ কিছু উপায় বলবো

• ১. অনেকে মনে করেন বাংলায় এত এত অক্ষর ও যুক্তবর্ণ কিভাবে আয়ত্ব করবো। তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছি বাংলা টাইপিংটা পুরোপুরি লজিক্যাল। লজিক দিয়ে মনে রাখলে জীবনে আর ভুলবেন না। এর একটা সহজ সমাধান হতে পাবে আগে ‘কার’ ও স্বরবর্ণ শেষ করে পরে ব্যাঞ্জনবর্ণ প্রাকটিস করা এবং যুক্তবর্ণসমূহ পুরোপুরি লজিক্যাল উপায়ে শিখতে হবে।
• ২. অনেকের ফিঙ্গারীং ঠিক নেই। ফিঙ্গারীংটা ঠিক করতে হবে। এবং অবশ্যই তা ইংরেজী অক্ষর ও টাইপিং টিউটর বা টাইপিং মাস্টার এ ধরনের সফটওয়্যার দিয়ে। এ ধরনের সফটওয়্যার দিয়ে প্রাকটিস করলে কম্পিউটারই আপনার টিচার হয়ে যাবে। আর মজাও পাওয়া যাবে। পরে বাংলা/ইংরেজী টাইপ করতে কী-বোর্ডএর দিকে তাকানোর প্রয়োজনই হবে না।
• ৩. বাংলা টাইপিং একটা ছোটলোকি বা অপারেটরের কাজ এ ধরনের ভিত্ত্বিহীন ভয়ঙ্কর কথাবর্তা মনেও আনা যাবে না।
• ৪. মাত্র কয়েকদিন মন থেকে বাংলা লে-আউট অথবা কী-বোর্ডকে সময় দিন দেখবেন আপনিও পারবেন হাজার-লক্ষ-নিযুত বাংলা টিউন কমেন্ট ইত্যাদির জন্মদিতে।
• ৫. আমরা যদি বাংলা আয়ত্ব করে বাংলায় সব কাজ করার চেষ্টা করি এমনিতেই সবকিছু বাংলায় পাওয়া যাবে।

আমার কথায় কেউ যদি বিন্দুপরিমাণ আঘাত পেয়ে থাকেন আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আমার এই টিউনের রেশ ধরে কেউ নতুন বাংলা শিখে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে পারে সেটা হবে আমার পরম পাওয়া। হোক না ভুলে ভরা তবুও তো বাংলা।

টিউন করা সর্ম্পকিত কিছু টিপস:

• ১. ভীরু মন নিয়ে কিছু হয় না। এত সুন্দর ভাষার দরকার নেই। আপনি যেভাবে অন্যের সাথে কথা বলে ঠিক সেই ভাবে লিখুন।
• ২. কোনো বানান নিয়ে সন্দেহ থাকলে অনেক্ষণ ধরে সঠিক বানান খোঁজার কোনো মানে হয় না। প্রয়োজন বোধো টিউনটিতে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিতে বলুন আমরা হেল্প করবো। যেটা আমার নিজের বেলায় সবসময় বলি।
• ৩. টিউনটি করার পরে অন্য কাউকে দিয়ে পড়ান তাহলে ভুল সমূহ সহযে ধরা পরবে সাথে আঞ্চলিকতার টান থাকলেও ধরা পড়বে। মাস্ট!!!
• ৪. কোনো টিপস দিলে ঐ কাজটা এমন কাউকে করতে বলুন যিনি এ টিপস অথবা ট্রিকসটা জানে না। তাহলে বুঝতে পারবেন অন্য কেউ আপনার নির্দেশনা কতখানি সাবলিল ভাবে বোঝে।
• ৫. লেখার ভাষা হবে সাবলিল। ঠিক আপনার মনের মত। যদি তা রুক্ষ শুনায় তাতেও অসুবিধা নেই।
• ৬. টেকনোলজির জগতে কিংবা বর্তমান দুনিয়ায় লেখার সাথে মানায় এমন ছবি দেয়া বাঞ্চনীয়। তাহলে দেখতে আকর্ষনীয় হয়।

বাংলা ভাষার কয়েকটি লিংক-

• কৃষি ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
• ঢাকার সব তথ্য সম্বলিত একটি ওয়েবসাইট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
• প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এখানে ক্লিক করুন।
• সাপ্তাহি রাশিফল দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
• বাংলার বিখ্যাত কলামিস্টদের কলামগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
• বাংলা সংবাদপত্রের লিংক দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
• নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ফোন/মোবাইল নম্বর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

একটা মজার গল্প বলি আমাদের সামু (সামহোয়য়্যার...) থেকে কিন্তু আমি আমার বিজয়ের লেখাগুলো ইউনিকোডে কনভার্ট করতাম। কিছুদিন যাবৎ আর দরকার হয় না কারণ এখন আমি অভ্রতে অভ্যস্থ।

এই টিউনটির মধ্যে কিংবা আমি অন্যকোনো টিউনে আমি বাংলাশেখার একদম সহোজ কি উপায় আছে তা হাতে কলমে দেখানোর ব্যবস্থা করছি। যেদিন সবাই কী-বোর্ডে বাংলা লেখার তাল শিখে টেকটিউনস সহ বাংলা ওয়েবসাইট গুলোতে সুর তুলবে সেদিন আমি আনন্দে আকাশে উড়বো। আপনারা আমাকে উড়তে দেখবেন কিন্তু আকাশ থেকে নামাতে পারবেন না। জলদি মতামত জানান।

আমি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত ও পরিতৃপ্ত। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমার নিত্যদিনের প্রেরণা।