বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স – Amazon অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা Jeff Bezos জেফ বেজোস সম্বন্ধে অজানা সব তথ্য

সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার আজকের টিউন শুরু করছি। আমার আজকের বিষয়টা একটু ভিন্ন। আপনার অনেকেই জেফ বেজোস এর নামটা শুনে থাকবেন। আর না শুনে থাকলে আজই জেনে নিন তার সম্পর্কে। আমরা যে Amazon.com এর নামটা জানি তার পেছনে যে মানুষটা আছেন তিনি হলেন জেফ বেজোস। আজকের এই অনলাইন শপিং পদ্ধতির জনক তিনিই। তিনিই প্রথম অনলাইন শপিং চালু করেন এবং অ্যামাজন.কম প্রতিষ্ঠা করেন।

বর্তমানে এই মানুষটি বিশ্বের ২১ তম ধনী ব্যক্তি। তার মোট সম্পদের পরিমাণ হল ২৮.৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই মানুষটা কোন স্থন থেকে শুরু করে আজ এই পজিশনে আছেন এা আমরা অনেকেই জানি না। তবে, আজ আমরা তার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা আজ জেফ বেজোস এর জীবন সম্পর্কে ২০ টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানব ম যার মাধ্যমে আমরা সবাই অনুপ্রেরণা পেতে পারি। তো চলুন, শুরু করা যাক।

জেফকে যে মানুষ করেছিলেন তিনি তার আসল পিতা ছিলেন না

Jeffrey Preston Jorgensenlit নামের এই ব্যক্তি, যেটা তার ছোট বেলার নাম, তিনি ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা ও মায়ের নাম হল জ্যাকলিন গিস র্জগসেন এবং টেড জর্গসেন। তারা বিয়ের মাত্র ১ বছর পরেই ডিভোর্স হয়ে যান। তারপর তার মা আবার মিগুয়েল মাইক বেজোস নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন।

Source: Biography.com

Image Source: Achievement.org

তার দাদুর কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা

জেফ বেজোস এর দাদু যিনি লরেন্স প্রিস্টন, যিনি ইউ এস এটোমিক এজেন্সি কমিশনের রিচিওনাল ডিরেক্টর ছিলেন, জেফ এর জীবনে তার অবদানই মনে হয় সবথেকে বেশী। এবং এই দাদুর কারণেই জেফ কম্পিউটারের প্রতি ঝুকে পড়েন যেটা তার পরবর্তী জীবনকে বদলে দিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

Source: Wired.com

Image Source: Achievement.org

যেকোন বিষয়ে ছিল ব্যাপক আগ্রহ

জেফ বেজোস এর একটা শখ ছিল। সেটা হল কোন জিনিস কভিাবে কাজ করে সেটা বোঝা এবং কোন নষ্ট জিনিস মেরামত করা। এই কাজে তিনি সবসময়ই অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে ছিলেন। তার ছোটবেলার সপ্ন ছিল মহাকাশ সম্পর্কিত কাজ করা।

Source: Wired.com

Image Source: Biography.com

জেফ ছিলেন অত্যান্ত ক্রিয়েটিভ একজন মানুষ

তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন খুবই ক্রিয়েটিভ মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় বিভিন্ নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারের ভেতর ডুবে থাকতেন। যেমন তিনি ছোটবেলাতেই সোলার কুকার, হোভারক্রাফট, রোবট, ইলেকট্রিক এলার্ম ইত্যাদি আবিষ্কার করেন। তার তৈরী করা এলার্ম তিনি একটা সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে কাজে লাগাতেন।

Source: Biography.com

তার হাইস্কুল লাইফ

জেফ বেজোস হাই স্কুলে পড়াড় সময়ই নিজেকে একজন খুবই মেধাবী ও দক্ষ ছাত্র হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। তিনি প্রথমে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্সে পড়া শুরু করেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি কম্পিউটার সায়েন্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেন।

Source: Achievement.org

Image Source: Snakkle.com

জীবনের সবথেকে বড় দর্শন

২০১০ সালে প্রিন্সটন ইউুনর্ভাসিটিতে এক বক্তৃতা কালে তিনি তার জীবনের একটা কাহিনী বলেন। তিনি যখন তার দাদীকে তার সিগারেট খাওয়া সম্পর্কে জানান তখন তার দাদী খুবই দুঃখ পান। তারপর তার দাদু তাকে বলেছিলেন যে “জেফ, একদিন তুমি বুঝবে দয়ালূ হওয়া চালাক হওয়া থেকে অনেক কঠিন”। এই কথা তার জীবনে প্রতি ক্ষেত্রে চরমভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।

Source: Princeton.edu

Image Source: Npr.org

চাকরিতে যোগদান করা

জেফ তার কর্মজীবনের প্রথমে ফিটেল নামের একটা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীতে চাকরি করতেন। সেই কোম্পানীটা ২ বছর টিকেছিল। তারপর তিনি ব্যাংকার্স ট্রাস্ট এ একটা চাকরি করতেন। এরপর তিনি D.E. Shaw নামের একটা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে জয়েন করেন। এটা ছিল ওয়াল স্ট্রীটে।

Source: Biography.com

একজন কলিগের প্রেমে পড়া ও বিয়ে

ম্যাকেনজি বেজোস নামের তার একজন কলিগ ছিল D.E. Shaw কোম্পানীতে। তিনি এই কোম্পানীতে কাজ করার সময় এ্ই মেযের প্রেমে পড়েন। অঃতপর তারা ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন। এইসময়ই তারা অ্যামাজন ডট কম এর প্লান তৈরী করেন।

Source: WSJ.com

Image Source: Edge.org

জেফ বেজোস এর সন্তান সন্ততি সমাচার

জেফ এবং ম্যাকেনজির জীবনে মোট ৩ টি ছেলে ও একটি মেয়ে ছিল। এই মেযেটি অবশ্র তাদের নিজের না। মেয়েটিকে তারা চায়না থেকে দত্তক নেন।

Source: CNN.com

Image Source: Dailymail.co.uk

চাকরি ছেড়ে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

একটা সময় জেফ অ্যামাজন কোম্পানী স্টার্ট করার সিদ্ধান্ত নেন। জেফ এইসময় D.E. Shaw কোম্পানীর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই চাকরি টা ছেড়ে দেন। এইসময় তিনি একটা বাড়ি ভাড়া নেন এবং তার প্রথম কর্মচারী শেল কাপান কে নিয়ে অ্যামাজন এর কাজ শুরু করেন।

Source: Wired.com

Image Source: Geekwire.com

একদিনেই অ্যামাজন নাম আসেনি

অ্যমাজন.কম কিন্তু একদিনেই অ্যামাজন.কম হয়নি। মানে জেফ যখন অনলাইন শপিং এর চিন্তুভাবনা নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন তখন এটার নাম অ্যামাজন ছিল না। প্রথমে শুরু করার সময় এটি Cadabra বা Relentless.com নামে পরিচিত ছিল। পরে এটার নতুন নামকরণ করা হয় Amazon.com। এটার নাম মুলত নেওয়া হয়েছে দক্সিণ আমেরিকার নদী Amazon এর নাম থেকে। অর এর লোগোটার ডিজাইনে A তেকে Z পর্যন্ত একটা তীর চিহ্ন রয়েছে। এটা দ্বারা জেফ বোঝাতে চেয়েছেন যে এখানে মানুষের যত রকম পণ্য প্রয়োজন ততরকম সব পণ্যই পাওয়া যাবে।

Source: TheGuardian.com

Image Source: Amazon Media Room

জেফ ছোট ছোট কাজে বিশ্বাস করতেন

জেফ তার ব্যক্তিগত জীবনে “Two Pizza Rule” এ বিশ্বাস করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে একটা টীমকে যদি একটা পিজার ২ টা অংশ দ্বারা না সন্তুষ্ট করা যায় তাহলে এটা অনেক বড় একটা কাজ। তার কাছে সবার মতামত একসাথে করে সিদ্ধান্ত নেবার থেকে তার স্বাধীন চিন্তাধারাই গুরুত্ব খুব বেশী ছিল যেটা তার জীবনের মোড় ঘোরাতে অনেক সহায়তা করে।

Source: FastCompany.com

Image Source: MT.nl
তিনি এখনও খুবই হিসাবী ব্যক্তি
জেফ তার বাস্তব জীবনে ছিলেন খুবই মিতব্যায়ী। তার এই বৈশিষ্ঠটা Amazon.com শুরু করার সময় থেকেই প্রকাশ পায়। তার গ্যারেজে কাজ করার সময় তিনি একটা কাঠের দরজা থেকে একটা টেবিল তৈরী করেছিলেন। মজার ব্যাপার হল এখন পর্যন্ত Amazon.com এর কাঠের টেবিল গুলো সেই ডো-ডেস্ক মডেলে তৈরী।

Source: Businessweek.com

Image Source: Artdaily.org

শুধু কাজ নয়, মহানুভবতাও ছিল জেফ এর ভেতর

জেফ শুধু একজন ভাল ব্যাবাসয়ীই ছিলেন না। কিনি একজন খুবই উদার মনের মানুষ ছিলেন। তার একজন কর্মচারী একবার ওয়াশিংটনে একটা সেম সেক্স ম্যারেজ এর জন্য তার কাছে ১ লাখ ডলার ডোনেশন চান। সেই সময় তিনি তাকে ২.৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে দেন। এটা থেকে বোঝা যায় যে তিনি কতটা উদার মনের মানুষ ছিলেন।

Source: NYTimes.com

Image Source: FreedomToMarry.org

প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তিনি ছিরেন একজন খুবই কঠোর প্রতিযোগী

জেফ এর ভেতর মনে হয় সবরকম গুণই প্রকট ছিল একজন সফল মানুষের যেগুলো থাকার দরকার। তিনি একজন খুবই প্রতিযোগিতাশীল মানুষ ছিলেন। তিনি তার প্রতিযোগীদের পরাস্ত করার জন্য তার কোম্পানীর পণ্যে একটা বিরাট ডিসকাউন্ট দিয়ে দেন। তার একজন খুবই কাছের পপ্রতিযোগী ছিল Quidsi, যিনি Diapers.com এর মালিক ছিলেন। জেফ তাকে মার্কেট থেকে বিদায় করার জন্য এক বিশাল ডিসকাউন্ট দেন। যেটা তার বিজনেসকে একেবারেই বিধস্ত করে দেয়।

Source: SeattleTimes.com

Image Source: WashingtonPost.com

অলসতা মোটেই পছন্দ করতেন না জেফ

জেফ তার কোম্পানী নিয়ে অনেক সচেতন ছিলেন। তিনি অনেক বেশী কমপিটেকটিউনসভ মাইন্ডের ছিলেন এবং তিনি তার কোম্পানীর কারও অলসতা মোটেও পছন্দ করতেন না। তিনি সবসময়ই তার কোম্পানীর জন্য কর্মঠ ও কম্পিটেকটিউনসভ মাইন্ডের মানুষ খুজতেন। তিনি তার কর্মচারীদের অনেক সময় ডিরেক্ট ইনসাল্ট ও করতেন। যেমন “ আপনি কী অলস বা আপনার ভেতর কী প্রতিযোগীতামূলক কোন মানসিকতা নেই?”

Source: Forbes.com

Image Source: Flickr.com

জীবনের ভয়াবহ এক্সিডেন্ট

২০০৩ সালে জেফ একটা হেলিকপ্টার এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হন এবং এটার ফলে তার মাথায় মারাত্ম আঘাত লাগে। আর মজার ব্যাপার হল এই ঘটনার পর থেকে জেফ হেলিকপ্টারে চড়াই বন্ধ করে দেন।

Source: FastCompany.com

Image Source: TheSmokingGun.com

নিউজপেপার কোম্পানী ক্রয়

জেফ বেজোস ২০১৩ সালে Washington Post কিনে নেন ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। এটার মাধ্যমে তিনি অনেক পত্রিকার ও নিউজের হেডলাইনে পরিণত হন।

Source: WashingtonPost.com

Image Source: Dailymail.co.uk

আরও অনেক শখ

আগেই বলেছি যে জেফ এর ছোটবেলার ইচ্ছা ছিল এ্যরোস্পেস নিয়ে। তিনি বর্তমানে ২০১০ সালে ব্লু অরিজিন নামের একটা স্পেস কোম্পানী তৈরী করেন। এটা মানুষকে কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণের একটা সুযোগ করে দিচ্ছে।

Source: Forbes.com

Image Source: Blueorigin.com

অ্যামাজনের পরবর্তী চিন্তাভাবনা

জেফ এর লেটেস্ট প্রোজেক্ট হল “Amazon Prime Air”, যেটাতে তিনি তার বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন দেশে ডেলিভার করার জন্য ড্রোন ইউজ করছেন। যদিও Federal Aviation Administration (FAA) এখনও তার এই বিষয়টা এপ্রুভ করেনি কারণ, কর্মাসিয়াল প্রয়োজনে ড্রোন ইউজ করার কোন নিয়ম এখনও নেই। যদিও জেফ এই বিষয়ে অত্যান্ত আশাবাদী যে তিনি আগামী কয়েক বছরের ভেতরই এই প্রজেক্ট সফল ভাবে শুরু করতে পারবেন।

Source: USAToday.com

Image Source: Amazon.com

আজ এই পর্যন্তই। আবার পরে কোন একদিন অন্য কোন বিষয় নিয়ে আসব আপনাদের সামনে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন। কোন কিছু  জানার থাকলে টিউমেন্টে বলবেন। ধন্যবাদ।

Level 2

আমি অরিন্দম পাল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 81 টি টিউন ও 316 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 20 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

মানসিক ভাবে দূর্বল । কোন কাজই কনফিডেন্টলি করতে পারি না , তবুও দেখি কাজ শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় । নিজের সম্পর্কে এক এক সময় ধারণা এক এক রকম হয় । আমার কোন বেল ব্রেক নেই । সকালে যে কাজ করব ঠিক করি , বিকালে তা করতে পারি না । নিজের...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাল লাগলো পড়ে ! ধন্যবাদ

জানানোর জন্য ধন্যবাদ ।

ভালো লিখেছেন, ধন্যবাদ ৷

thanks, onek valo laglo.

চমৎকার শেয়ার। ধন্যবাদ।