কেন আপনি গুগল ক্রোম বাদ দিয়ে মজিলা ফায়ারফক্স ব্যবহার করবেন?

টিউন বিভাগ ফায়ারফক্স
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

মজিলা ফায়ারফক্সের নতুন আপডেট ৫৭ তে ফায়ারফক্সকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এবং এর নাম দেওয়া হয়েছে ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম। যারা যারা অলরেডি তাদের ফায়ারফক্সকে ৫৭তে আপডেট করে নিয়েছেন তারা সবাই এখন ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম ব্যবহার করছেন এবং পার্থক্যটা নিজেই বুঝতেছেন। তাদেরকে বলছি ফায়ারফক্সের ৫৮তম সংস্করণটিও চলে এসেছে। আপগ্রেড করে নিন। কিন্তু যারা এখনো ফায়ারফক্স ব্যবহার করেন না বা আগে করতেন এখন আর করেন না তাদের জন্যই আমার আজকের এই টিউন। টাইটেলটা ইন্টারেস্টিং করতে চেয়েছিলাম তাই এরকম টাইটেল দিয়ে দিলাম।

বিগত বছরগুলোতে মজিলা ফায়ারফক্স এর আপডেটগুলোতে তেমন কিছুই ছিল না, শুধু সংস্করণগুলো একে একে বাড়তে থাকতো আর অন্যদিকে এই নতুন সংস্করণের মজিলা ফায়ারফক্স গুলো গুগল ক্রোমের থেকে স্লো ছিল, At least আমার কাছে গুগল ক্রোমের থেকে মজিলা ফায়ারফক্স স্লো মনে হতো। আমি মজিলা ফায়ারফক্স ছেড়ে গুগল ক্রোমে সেদিন চলে যাই যেদিন দেখিযে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার সহ অনান্য খুঁটিখাটি সফটওয়্যার গুগল ক্রোমে আগে থেকে ইন্সটলকৃত ভাবে রয়েছে। কিন্তু এবারের ফায়ারফক্স কোয়ান্টামে আশাকরিয়ে নিতে পারবে বলে আমি আশা করছি। ফায়ারফক্স টেস্ট সদস্য হিসেবে তাদের টিমে থাকায় ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম রিলিজের এক সপ্তাহ আগে থেকেই আমি সংস্করণটি ব্যবহার করা শুরু করেছি আর যতটুকু বুঝেছি, হয়তো এবার সময় হয়েছে গুগল ক্রোম বাদ দিয়ে আবারো মজিলা ফায়ারফক্সে চলে আসার!

ফায়ারফক্স আবারো দ্রুততর হয়ে উঠেছে।

মজিলা ফায়ারফক্স আমি প্রথম ব্যবহার করেছিলাম সেই ২০০২ সালে, যখন ক্লাস ৬ য়ে পড়তাম তখন। তখন ফায়ারফক্সকে Phoenix নামে চেনা হতো এবং তখনকার সময়ে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের দারুণ বিকল্প একটি ব্রাউজার হিসেবে এই Phoenix এর ব্যবহার হতো। কিন্তু মাঝে গুগল ক্রোম ব্রাউজারটি এসে গিয়ে তার মর্ডান আর্কিটেকচার এর মাধ্যমে আরো ফাস্ট, আরো সুরক্ষিত এবং মর্ডাম পিসির হার্ডওয়্যারের ভালো ব্যবহারের জন্য গুগল ক্রোমের দিকে মানুষ ঝুঁকতে থাকে। যেমন বেশ কয়েকটি ট্যাব এবং ওয়েবসাইট একসাথে চালু রাখলে ফায়ারফক্স স্লো হয়ে যেত, কিন্তু অপর দিকে ক্রোম স্লো হতো না কারণ ক্রোম আপনার পিসির হার্ডওয়্যারকে ব্যবহার করছে অন্যদিকে মজিলা তার সফটওয়্যারের পাওয়ারকেই ব্যবহার করতো।

কিন্তু এটা আর নেই। মজিলার রিসেন্ট হার্ডওয়্যার্কের কারণে ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম এখন আবারো আগের মতো দ্রততর হয়ে উঠেছে। ডিফল্ট অনুসারে ফায়ারফক্সের প্রতিটি প্রসেসকে আলাদাভাবে ট্রিট করা হয় এবং প্রতিটি প্রসেস সহ ফায়ারফক্সের সকল কার্যক্রম এখন সরাসরি আপনার প্রসেসর এবং র‌্যামকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করবে। এর মাধ্যমে ফায়ারফক্সে যতগুলোই ট্যাবে ওয়েবসাইট চালান না কেন আপনার পিসি যদি ভালো পারফরমেন্সের হয়ে থাকে তাহলে ফায়ারফক্স আর স্লো হবে না।

এতদিন পর ফায়ারফক্স মাল্টি-প্রসেসের গুরুত্ব বুঝতে পারলো!

আর সরাসরি পিসির প্রসেসর আর র‌্যামকে ব্যবহার করায় মজিলার মতে ফায়ারফক্স গুগল ক্রোমের তুলনায় ৩০% বেশি ফাস্ট হবে এভারেজ পিসিগুলোতে।

ক্রোম যারা ব্যবহার করেন তারা জানেন যে ক্রোমও মজিলার মতো তাদের ব্রাউজারের গতি বৃদ্ধির জন্য পিসির প্রসেসকে ব্যবহার করে থাকে কিন্তু দুর্বল পিসিতে যদি সব প্রসেস ক্ষমতা একটি ব্রাউজার টেনে নিয়ে যায় তাহলে পিসির অনান্য কাজ আর করা যায় না। কিন্তু অন্যদিকে ফায়ারফক্স কোয়ান্টামে আপনি কতগুলো প্রসেস আর কতটুকু সিস্টেম মেমোরি ফায়ারফক্স ব্যবহার করবে সেটা আপনি নিজেই নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। তবে ৪ থেকে ৬ গিগাবাইট র‌্যামের পিসিগুলোকে ফায়ারফক্সের স্পিড নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না।

তবে ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে স্পিড বেঞ্চমার্কের ভিক্তিতে নির্ধারণ করা উচিত নয়, এগুলো নিজে ব্যবহার করে নিজের সাচ্ছন্দ্য পাবেন যেটায় বেশি সেটাই ব্যবহার করা উচিত। আর আমার কাছে গুগল ক্রোমের থেকে ফায়ারফক্স কোয়ান্টামটাই বেশি ফাস্ট লেগেছে। কোয়ান্টাম সংস্করণে নতুন একটি CSS ইঞ্জিন ব্যবহার করায় পারফরমেন্সে এত উন্নতি যখন হয়ে তখন আমরা বলতে পারি যে নিকট ভবিষ্যৎতের আপগ্রেডগুলোকে ফায়ারফক্সের জন্য আমরা আরো উন্নত কিছু ফিচার পেতে যাচ্ছি।

ক্রোমের থেকে উন্নত টেক্স কোয়ালিটি।

গুগল ক্রোমের টেক্স নাকি হিজিবিজি এবং বিশ্রি! হ্যাঁ! এই অভিযোগটাই কয়েকজন ক্রোম ব্যবহারকারীরা করে থাকেন যারা থ্রিডি মনিটর বা হাই কোয়ালিটি মনিটর ব্যবহার করে থাকেন। এই সব হাই এন্ড মনিটরগুলোতে ডিসপ্লে কোয়ালিটি আলাদা হওয়ায় অনেক সময় ক্রোম তার সঠিক টেক্স কোয়ালিটি রেন্ডার করতে পারেন না। এছাড়ার এভারেজ কম্পিউটার গুলোতেও আপনি দেখবেন যে ক্রোমের টেক্স অনান্য উইন্ডোজ এপ্লিকেশনগুলোর থেকে আলাদা, কারণ তারা তাদের টেক্সকে আলাদা করেছে তাই।

চিত্রে উপরের লেখাটি ফায়ারফক্স কোয়ান্টামের আর নিচেরটি গুগল ক্রোমের। পার্থক্যটা এখানেই আপনি বুঝতে পারবেন।

এটা আপনি নিজেই ট্রাই করতে পারেন যদি আপনার পিসিতে ক্রোম আর ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম দুটোই থাকে তবে। দুটো ব্রাউজারের এড্রেস বারে লিখুন example.com এবং এন্টার দিন। এবার আপনি দেখবেন যে ফায়ারফক্সের থেকে ক্রোমের টেক্সগুলো একটু চিকন আর একটু বেশি lighter। আর অন্যদিকে ফায়ারফক্সের লেখাগুলো নরমাল এবং ক্রোমের থেকে একটু ডার্ক টাইপের। আর সে জন্যই ফায়ারফক্স কোয়ান্টামের টেক্সগুলো সহজে যেকোনো কোয়ালিটির মনিটরে পড়া যাবে। উল্লেখ্য যে, মাইক্রোসফট Edge ব্রাউজারেও একই কোয়ালিটির টেক্স ব্যবহার করা হয়েছে।

ফায়ারফক্স এক্সটেনশনকেও আপগ্রেড করা হয়েছে।

অনেকের কাছে এটা একটি চমৎকার ফিচার কিন্তু আবার অনেকের কাছেই এটা একটা পেইনও বটে। ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম থেকে এখন আর আপনি পুরাতন এক্সটেনশনগুলোকে ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম তার জন্য নতুন সব এক্সটেনশনকে যুক্ত করেছে। আগের ফায়ারফক্স সংস্করণগুলোতে সেই ৩.০ থেকে সকল পুরাতন এক্সটেনশনগুলোকে আনসার্পোটেড করে দিয়েছে। এখন থেকে ফায়ারফক্স ক্রোমের মতো Managed extensions গুলোকে ব্যবহার করবে। পুরাতন এক্সটেনশন সিস্টেমে এক্সটেনশনগুলোর ফায়ারফক্স সিস্টেম ইন্টারফেসে পূর্ণ একসেস ছিল, যারা কারণেই এক্সটেনশনগুলোর শক্তিশালিও ছিল বটে তবে এখন এটার পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে কারণ কোনো থার্ড পার্টি সফটওয়্যার আপনার সিস্টেমের পূর্ণ একসেস থাকলে ভালোর পাশাপাশি খারাপও করতে পারে। আর পুরাতন এক্সটেনশনগুলো এই মর্ডান মাল্টি-প্রসেস আর্কিটেকচারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না।

রিডার ভিউ মোড!

ফায়ারফক্সে রিডার ভিউ মোড সিস্টেমটিও রয়েছে, যেটি অনান্য মর্ডান ব্রাউজার যেমন অ্যাপেলের সাফারি এবং মাইক্রোসফট Edge ব্রাউজারেও এই রিডার ভিউ মোডটি রয়েছে। কিন্তু গুগল ক্রোমে এই ফিচারটি একদমই নেই। তো আমি বলতে পারি যে রিডার ভিউ মোড এর জন্যেও ফায়ারফক্স গুগল ক্রোমের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে।

এছাড়াও ক্রোমের মতো ফায়ারফক্সেও আপনি সিংঙ্কিং ফিচারটি পাবেন, যার মাধ্যমে একটি ইমেইল দিয়ে ফায়ারফক্সে লগইন করার মাধ্যমে আপনার সকল ডিভাইসে আপনার যাবতীয় পাসওর্য়াড, সাইট কুকিস এবং অনান্য দরকারী ব্রাউজিং জিনিসপাতি একসেস করতে পারবেন। রয়েছে ফায়ারফক্সের মোবাইল অ্যাপস। অফিসিয়াল ফায়ারফক্স এপ্লিকেশনটি আইফোন, আইপ্যাড আর অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য এখন পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ফায়ারফক্স মোবাইলে Sending Tabs নামের একটি ফিচার রয়েছে সেটা ক্রোমের মোবাইল অ্যাপসে নেই। যার মাধ্যমে আপনি সরাসরি কোনো ট্যাবকে আপনার অনান্য পিসি বা মোবাইলে ফায়ারফক্স সিংঙ্ক এর মাধ্যমে সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারবেন।

তো টিউনের শেষে এসে বলতে পারি যে, ফায়ারফক্স বর্তমানে গুগল ক্রোমের থেকেও দ্রুততর একটি ব্রাউজার তবে আমি বলছি না যে ফায়ারফক্স ক্রোমের থেকেও বেশি ভালো, আগে ক্রোম ফায়ারফক্সের থেকে এগিয়ে ছিল কিন্তু এবার ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম এর মাধ্যমে ফায়ারফক্স আর ক্রোমের মাঝে সমতা এসেছে। ক্রোমের চেয়েও বেশি কিছু ফিচার আপনি ফায়ারফক্সে এখন পাচ্ছেন। তো ব্যবহারের ব্যাপারটি সম্পূর্ণই আপনার ব্যাপার। অনেকেই গুগল ক্রোম ব্যবহার করেন না কারণ ক্রোমের আপডেট সিস্টেমটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক। মানে নতুন কোনো সংস্করণ আসলে ক্রোম সেটা নিজে নিজেই আপগ্রেড করে নেয়। যারা সীমিত বা লিমিটেড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা অনলাইন গেমিং কিংবা অনান্য গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন কাজে ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য এই অটো আপডেট ব্যাপারটি বেশ বিরক্তিকরপূর্ণ হতে পারে।

তো এই ছিল আজকের টিউন। আশা করবো আজকের টিউনটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। তবে ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম নিয়ে আরো তথ্য জানতে ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম নিয়ে আমার পোস্টকৃত আগের টিউনটি দেখতে পারেন:

ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম, মজিলার নতুন চমক!

ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম, মজিলার নতুন চমক!

আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। টিউনটি সম্পর্কে আপনাদের যেকোনো মতামত আমাকে জানাতে পারেন নিচের টিউমেন্ট বক্সে টিউমেন্ট করে। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে! টিউন পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আমি ফায়ারফক্স ভক্ত। কিছু স্পেশাল স্ক্রিপ্ট বা সাইট ক্রোম ছাড়া রান করেনা দেখে ক্রোম রাখতে হয়। তাছাড়া গুগল এর নিজস্ব কিছু সার্ভিস ওরা ইচ্ছে করেই অন্য ব্রাউজারে ঝামেলা করে, তখন ক্রোম ব্যবহার করি।

দারুণ টিউন