মাইক্রোসফট পেইন্টের কিছু বিকল্প সফটওয়্যার

টিউন বিভাগ মাইক্রোসফট
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

মাইক্রোসফট পেইন্ট! ছোটবেলায় হিজিবিজি এবং আজেবাজে ড্র করার জন্য পিসিতে বসেই পেইন্ট এপ্লিকেশনে ডুকতাম। এটাকে ফটোশপ শেখার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবেও বলতে পারেন। আজ আমি মাইক্রোসফট পেইন্টের বিকল্প কিছু সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলতে এসেছি এবং এটা অবশ্যই ফটোশপ হবে না কারণ মাইক্রোসফট পেইন্ট আর ফটোশপ দুটো দুই নক্ষত্রের জিনিস। যদিও মাইক্রোসফট পেইন্টের কাজগুলো আপনি ফটোশপে করতে পারবেন কিন্তু ফটোশপের কাজগুলো আপনি পেইন্টে করতে পারবেন না। আর ফটোশপ সবাই ব্যবহার করতে পারবেন না কারণ ফটোশপ একটি কমপেক্স সফটওয়্যার।

১৯৮৫ সাল থেকে মাইক্রোসফট পেইন্ট সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে আমরা দেখছি। কিন্তু সম্প্রতি উইন্ডোজ ১০ Fall Creators Update সংস্করণ থেকে আপনারা আর মাইক্রোসফট পেইন্টকে দেখতে পাবেন না। কারণ এই সফটওয়্যারটি মাইক্রোসফট ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্য উইন্ডোজ ৭ এর পর মাইক্রোসফট পেইন্ট এর কোনো বিশেষ আপগ্রেড আমরা দেখতে পারিনি। তো RIP MS Paint (1985-2017)!

তবে আপনি এটাকে এখনো উইন্ডোজ স্টোরে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন, মাইক্রোসফট পেইন্ট এখনো উইন্ডোজ স্টোরে রয়েছে। বর্তমানে মাইক্রোসফট তাদের নতুন সফটওয়্যার Paint 3D এর উপর ফোকাস করে রয়েছে। মূলত এই পেইন্ট থ্রিডি সম্পূর্ণ রূপে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠা পর্যন্তই উইন্ডোজ স্টোরে আপনি পুরোনো পেইন্ট সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

তো পেইন্ট চলে গেল, এখন কি ব্যবহার করবেন আপনি? ফটোশপ শিখে নিবেন নাকি? তবে আপনি চাইলে মাইক্রোসফট পেইন্ট এর মতো অনান্য কিছু ফ্রি সফটওয়্যার পরখ করে দেখতে পারেন। তো চলুন চলে যাই মূল টিউনে:

১) পেইন্ট.নেট

২০০৪ সালে একটি স্টুডেন্ট প্রজেক্ট হিসেবে Paint.NET এর সূচনা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি অন্যতম ইমেজ এডিটর সফটওয়্যার হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। আপনি যদি ফটোশপ দিয়ে টুকটাক হালকা পাতলা ইমেজ এডিটিংয়ের কাজ করে থাকেন তাহলে এটি আপনার জন্য ফটোশপের বিকল্প হিসেবে বললে ভুল হবে না। আর আপনি যদি মাইক্রোসফট পেইন্ট ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে এই সফটওয়্যারে এসে আপনার সবথেকে সহজ যেই জিনিসটি মনে হবে সেটা হলো এর লুকস! পেইন্ট ডট নেট সফটওয়্যারটি দেখতেও প্রায় মাইক্রোসফট পেইন্ট এর মতোই।

মাইক্রোসফট পেইন্ট এর মতো দেখতে হলো এটি পেইন্ট এর থেকেও অতিরিক্ত বেশ কয়েকটি ফিচার রয়েছে। এখানে আপনি পাচ্ছেন ফটোশপিস লেয়ার সিস্টেম, অনেকগুলো স্পেশাল ইফেক্টস, আনলিমিটেড আনডু এবং রিডু করার ব্যবস্থা, রয়েছে তাদের নিজস্ব অসংখ্য প্লাগইনস। তাদের অফিসিয়াল সাইজে তাদের এই সফটওয়্যারের সার্পোটেড প্লাগইনস এর একটি লিস্ট সম্বলিত পিডিএফ ফাইল রয়েছে যেটার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৫! তার মানে বুঝুন কতটুকু ভালো সাফল্য হলে কোনো সফটওয়্যারের এতগুলো প্লাগইনস থাকতে পারে! তবে আপনি তাদের এই বিশাল প্লাগইনস থেকে আপনার পছন্দ এবং কাজের প্লাগইনস যেমন এক্সট্রা ব্রাশ, কালার, ইফেক্ট ইত্যাদিকেও নামিয়ে নিতে পারবেন ফ্রিতে।

➡ Paint.NET ডাউনলোড করে নিন তাদের অফিসিয়াল সাইট থেকে এখানে ক্লিক করে।

২) ইরফান ভিউ

যদি আপনার কাছে পেইন্ট ডট নেট সফটওয়্যারটি চালানো কঠিন মনে হয় তাহলে আপনি এই IrfanView সফটওয়্যারটি পরখ করে দেখতে পারেন। আর আপনি যদি কোনো বেসিক ইমেজ এডিটর খুঁজে থাকেন তাহলে এই ইরফানভিউ সফটওয়্যারটি আপনারই জন্য।

সফটওয়্যারটির বেশকিছু হেডলাইন ফিচারগুলো অনেকটা মাইক্রোসফট পেইন্ট এর সাথে মিলে যায়। IrfanView সফটওয়্যারে রয়েছে ইজি-টু-ড্র শেইপস, রোটেটিং করার জন্য টুলস, সহজ ফ্লিপিং এবং ছবি রিসাইজিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে গ্রে-স্কেল সহ ছবির রং একক্লিকে কনর্ভাট করার ফিচার।

মাইক্রোসফট পেইন্ট এর থেকে এর নিজস্ব কিছু আলাদা ফিচার রয়েছে যার মাধ্যমে ইরফান ভিউ সফটওয়্যারটি আপনার কাছে আরো ব্যবহারযোগ্য হিসেবে হয়ে উঠবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রিভিউ ফিচার রয়েছে এনিমেটেড GIF ফাইল প্রিভিউ করার সুবিধা ইত্যাদি। আর এখানে আপনি ফটোশপের ফিল্টারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন, পারবেন Batch কনর্ভাসেশন করার সুবিধা এবং এতে রয়েছে IPTC metadata.

➡ IrfanView সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে তাদের অফিসিয়াল সাইট থেকে ঘুরে আসুন এখানে ক্লিক করে।

৩) পিনটা

Pinta সফটওয়্যারটির দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে এটি আগে হয়তো আপনি কোথাও দেখেছেন! আরে হ্যাঁ! এটি আগের Paint.NET সফটওয়্যারের উপর ভিক্তি করেই নির্মিত করা হয়েছে। তবে এটি পেইন্ট ডট নেট এর মতো অতটা মর্ডান ফিচার সমৃদ্ধ নয়। যারা বেসিক পেইন্ট এর কাজ করতেন তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। মানে বেসিক ইমেজ এডিটরের কাজ করার জন্য পিনটা সফটওয়্যার আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

তবে পেইন্ট ডট নেট এর মতো ফিচার নেই বলে সফটওয়্যারটির থেকে আকর্ষণ হারালে চলবে না। আমি এখানে শুধুমাত্র বলেছি যে এটিতে বেসিক সকল কাজ করা যাবে শুধু এডভান্স কিছু ফিচার এতে দেওয়া নেই যেটি পেইন্ট ডট নেট সফটওয়্যারে রয়েছে। তবে Pinta সফটওয়্যারে আপনি পাচ্ছেন ফটোশপের মতো লেয়ার নিয়ে কাজ করার সুযোগ, রয়েছে ফটোশপের মতো রং পরিবর্তন করার বক্স, রয়েছে আনলিমিটেড হিস্টোরি বক্স, ৩৫টি ইমেজ ইফেক্ট রয়েছে এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য ড্রয়িং টুলসও রয়েছে।

➡ Pinta সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিন এখানে ক্লিক করে।

৪) ক্রিতা

Krita সফটওয়্যারটি মূলত ডিজিটাল আর্টিস্টদের প্রতি লক্ষ্য রেখেই বানানো হয়েছে। বিশেষ করে এই সফটওয়্যারটির নির্মাতারা কনসেপ্ট আর্টিস্টদের কাজকে আরো সহজ করার জন্য এই ক্রিতা সফটওয়্যারটি নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও ইলাস্ট্রেটরস, টেক্সচার এবং matte আর্টিস্টদের জন্যেও এই সফটওয়্যারটি অনেক কাজে সহযোগীতা করতে পারবে।

সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে চালু করলেই আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন এক্সট্রা ফিচার যেগুলো মাইক্রোসফট পেইন্টে নেই। এতে রয়েছে কুইক কালার সিলেক্টর, রয়েছে ব্রাশ স্টাবেলাইজার, ফাইল লেয়ার, ভেক্টর, ফিল্টার, গ্রুপ সহ বিভিন্ন ফটোশপের ফিচারগুলো আপনি এতে পেয়ে যাবেন।

এছাড়াও ক্রিতা আপনাকে বেস্ট কয়েকটি শেইপ ড্রয়িং টুলসও অফার করবে। আর এতে রয়েছে Drawing Assistants যার মাধ্যমে আপনি আরো সহজে ড্রয়িংয়ের কাজ করতে পারবেন।

➡ Krita ডাউনলোড করে নিন তাদের অফিসিয়াল সাইট থেকে এখানে ক্লিক করে।

৫) ফটোস্কেপ

ফটোস্কেপ মূলত ফটো এডিটিংয়ের উপর ভিক্তি করে বানানো হয়েছে। তাই আপনি যদি মাইক্রোসফট পেইন্টকে দিয়ে মূলত ফটো এডিট ও ঘষামাজার কাজ যদি করে থাকেন তাহলে ফটোস্কেপ এপ্লিকেশনটি আপনার জন্য একটি পারফেক্ট রিপ্লেসমেন্ট। এছাড়াও ফটোস্কেপে আরো এক্সট্রা অনেকগুলো টুলস রয়েছে যেগুলো এমএস পেইন্টে ছিলো না। এটি দিয়ে আপনি মাল্টিপল ছবিকে সহজেই একটি ছবিতে সেট করে দিতে পারবেন, স্লাইডশোতে ফটোসগুলো দেখতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ছবিকে RAW ফরম্যাট থেকে JPEG তে কনভার্ট করে নিতে পারবেন, পারবেন একটি ছবিতে বিভিন্ন খন্ডে খন্ডিত করে ফেলতে।

বেসিক ফটো এডিটিং ছাড়াও ফটোস্কেপ দিয়ে আপনি বিভিন্ন এডভান্স ফটো এডিটিং করে নিতে পারবেন। ইমেইজ রিসাইজ, ব্রাইটনেস এবং রং এডজাস্টমেন্ট, white Balance এডজাস্টমেন্ট, ব্যাকলাইট কারেক্ট করা, টেক্স যুক্ত করা, পিকচার ড্র করা, ফিল্টার যোগ করা, রেড আই ইফেক্ট পরিস্কার করা সহ বিভিন্ন টাস্ক আপনি এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে করে নিতে পারবেন।

➡ Photoscape সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিন এখানে ক্লিক করে।

৬) ফটর

Fotor সফটওয়্যারটি তার নাম ইমেজ এডিটরে জায়গায় করে নিয়েছে মূলত এর ক্লাউড-ভিক্তিক ইমেজ এডিটিংয়ের জন্য। তবে বর্তমানে আপনি চাইলেই সফটওয়্যারটির স্ট্যান্ডএলন সংস্করণটি উইন্ডোজে নামিয়ে নিয়ে অফলাইনে এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি একটি এডভান্স ফটো এডিটিং সফটওয়্যার আর এতে প্রায় ফটোশপের ৭০ ভাগ কার করা যায়। আর যারা মাইক্রোসফট পেইন্টে এডভান্স ফটো এডিটিংয়ের কাজ করতেন তাদের জন্য এই ফটর সফটওয়্যারটি একটি পারফেক্ট বিকল্প সফটওয়্যার হিসেবে কাজে দেবে। লিস্টের এই Fotor হচ্ছে একমাত্র সফটওয়্যার যার পেইড সংস্করণ রয়েছে। প্রতি মাসে ৩.৩৩ মার্কিন ডলার দিয়ে প্রিমিয়াম একাউন্ট কিনলে আপনি মাস প্রতি ১০০টি নতুন ইফেক্ট, বিশেষ সংখ্যক স্টিকার, ফটো ফ্রেম, প্রোফেশনাল গ্রেড টাচ আপ টুলস এবং এড ফ্রি এক্সপেরিয়েন্স উপভোগ করতে পারবেন।

➡ Fotor সফটওয়্যারটি পরখ করে দেখুন এর অফিসিয়াল সাইট থেকে এখানে ক্লিক করে।

৭) পিক্সেল

আপনি যদি আসলেই এমএস পেইন্ট সফটওয়্যারটি আপনার সিস্টেমে যদি রাখতে না চান তাহলে অনান্য বিকল্প সফটওয়্যারগুলো দিয়েই বা কেন পিসি ভারী করে রাখবেন? এর থেকে ভালো কোনো অনলাইন ইমেজ এডিটর আপনি ব্যবহার করতে পারেন। আর অনলাইন-অনলি এডিটরের মধ্যে Pixlr হচ্ছে একটি বেস্ট এবং অন্যতম একটি ফটো এডিটর সার্ভিস।

পিক্সেল সফটওয়্যারটি অনেকটা ফটোশপের মতোই ডিজাইন করা হয়েছে আবার এখানে আপনি পেইন্টেরও কিছু টুলস দেখতে পারবেন। তবে পিক্সেল সফটওয়্যারটি লার্নিংয়ের জন্য আপনি যদি কিছুটা সময় ব্যায় করেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে পেইন্ট সফটওয়্যারটির বেস্ট রিপ্লেসমেন্ট হলো এই সফটওয়্যারটি। ফটো এডিটিংয়ের সকল বেসিক ফিচার আপনি এতে পাবেন এবং এছাড়াও এডভান্স ফিচার হিসেবে বেশ কিছু টুলসও আপনি এতে পাবেন যেমন smudging, blurring, লেয়ার সিস্টেম আর ফিল্টার এবং ইফেক্টস এর লম্বা একটি লিস্ট তো থাকছেই।

তবে পিক্সেল চালাতে হলে ভালো নেট কানেক্টশনের পাশাপাশি আপনার পিসি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের লেটেস্ট সংস্করণটি একটিভ থাকতে হবে।

এই ছিল আজকের সব আয়োজন। আশা করবো মাইক্রোসফট পেইন্টের জায়গায় আপনি এই সফটওয়্যারগুলো দিয়ে কাজ করে নিতে পারবেন। তবে একবার কস্ট করে ফটোশপ শিখে গেলে আর অন্য কোনো সফটওয়্যারের প্রয়োজন আপনার হবে না। ফটোশপ আপনি বাসায় বসেই নিজে নিজেই শিখে নিতে পারেন ভালো কোনো ফটোশপের গাইড বই থেকে। তবে ভালো করে ফটোশপ শিখতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভালো কোনো লানিং প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতেই হবে। বর্তমানে এমএস পেইন্টের মাধ্যমে ফটো এডিটিংয়ের বেসিক যে কাজগুলো আপনি করে থাকতেন সেগুলো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেও আপনি করে নিতে পারছেন।

তো আজ এ পর্যন্তই। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস