Apple Pay, Samsung Pay এবং Android Pay সম্পর্কে যা না জানলেই নয় ডিজিটাল মোবাইল পে সিস্টেম, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি কেমন আছেন আপনারা? আচ্ছা আপনাদের যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি কী প্রয়োজন হয়? হুমম. অনেক কিছুই দরকার হয় তবে সবথেকে বেশি দরকার হয় টাকা বা অর্থের বা Money. Money is Honey তাই না 😉

আর অর্থ আমাদের প্রতিনিয়ত কোন না কোন ভাবে পেমেন্ট করতে হয়। পৃথিবী এখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। মোবাইল ফোন মানুষের জীবন ব্যবস্থার ধারাকে বদলে দিয়েছে। মোবাইল ফোন এখন আর শুধু কল করা আর ধরা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা হয়েছে উঠেছে সকল কাজ ও বিনোদনের কেন্দ্রভুত মাধ্যম। ডিজিটালাইজড এই যুগে অর্থ আর কাগুজে নোট এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই পরিবর্তিত হয়ে তা কার্ড, মোবাইল সহ আরও অনেক ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। আর অর্থের ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমে পরিবর্তিত হবার সর্বশেষ আধুনিক সংষ্করণটি হচ্ছে মোবাইল পে সিস্টেম।

মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেম

মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেম এখন বেশ জনপ্রিয়। ধীরে ধীরে অনেক উন্নত হচ্ছে ডিজিটাল মোবাইল পে সিস্টেম। বর্তমানে বেশ কিছু মোবাইল পে সিস্টেম চালু আছে কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু সিস্টেম আমাদের কনফিউজড করে তোলে। যদিও বেশ কিছু উন্নত সিস্টেম এখনও মোবাইল পে সিস্টেমে অ্যাড করতে পারে নাই, তবে প্রতিনিয়ত এটা অনেক আরও উন্নত হচ্ছে এবং  ব্যবহারকারীর কাছে খুব বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সামনে আমাদের ভবিষ্যৎ মোবাইল পেইমেন্টের উপর খুব বেশি নির্ভর করবে এটা এখন বোঝা যায়।

যদিও আমাদের দেশে বিকাশ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে মোবাইল পেমন্ট করা যায় তবে অত্যাধুনিক মোবাইল পে সিস্টেম হলো সরাসরি স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে পেমেন্ট। এমন কি আপনার সব ক্রেডিট কার্ড আর ডেবিট কার্ড সহ যে কোন ব্যাংক একাউন্ট থেকে পেমেন্ট করা যায় মাত্র কয়েকটি টাচে।

২০১৪ সালে বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি অ্যাপেল সফল ভাবে তাদের মোবাইল পে সিস্টেম এর ঘোষণা দেয়। সেই সাথে অ্যাপেল অন্যান্য  প্রতিদন্দিরাও মোবাইল পে সিস্টেম নিয়ে আসে।

কি এই মোবাইল পে সিস্টেম?

খুব সহজ আর মুহুর্তেই পেমন্টের এক অভিনব ব্যবস্থা। কথা কম ভিডিও বেশি। নিচের ভিডিওটি দেখুন তাহলেই সব বুঝে যাবেন।

এখন জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে Apple Pay, Samsung Pay, and Android Pay ব্যবহারকারীর কাছে সমাদৃত। কিন্তু সবগুলোসিস্টেমেরই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। তাহলে আসুন আমরা জানি কিভাবে এই পে সিস্টেম কাজ করে, আরও কি কি বিষয় উন্নত করা দরকার এবং কারা এটা এখন বেশি ব্যবহার করছে।

অ্যান্ড্রয়েড পে (Android Pay):

সম্প্রতি মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে গুগল তাদের মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড পে'র ঘোষণা দেয়। অ্যান্ড্রয়েড পে হবে একটি মোবাইল পেইমেন্ট সফটওয়্যার যেখানে অন্যরা তাদের পে অ্যাপ তৈরি করতে পারবে। গুগল মুলত মোবাইল পেইমেন্ট লেআউট সফটওয়্যার তৈরি করবে, যেখানে থার্ড পার্টিরা তাদের পছন্দমতো অ্যাপ তৈরি করতে পারবে। এখানে সবথেকে আশার কথা হলো অন্যদের মোবাইল পেইমেন্টের মুল কাঠামো তৈরি না করে শুধু পেইমেন্ট অ্যাপ তৈরি করলেই হয়ে যাবে। গুগল মোবাইল পেইমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করবে থার্ড পার্টি শুধু হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করলেই হবে।

সবথেকে ইতিবাচক দিক হলো ডেভেলপারদের পেইমেন্ট সিস্টেমের মেইন স্ত্রাকচার তৈরি করার প্রয়োজন পড়বে না, তারা শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড পে নিয়ে কাজ করলেই হবে। অন্যদিকে কাস্টমাররা খুশি থাকবে কারণ তারা গুগলের ডাটা সিস্টেমের প্রতি আস্থা রাখে।

রিলিজ ডেটঃ

মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে গুগল এক্সাট কনো ডেট দেইনি অ্যান্ড্রয়েড পের লাউন্সের ব্যাপারে। তবে এটা ধরে নেওয়া যায় কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা এটি ব্যবহার করতে পারবো। বিশ্বস্ত সুত্র জানায় মে মাসের দিকেই অ্যান্ড্রয়েড পে আমাদের নাগালে চলে আসবে।

গুগল অয়ালেটের (Google Wallet) কি হবেঃ

অনেকে ভাবতে পারেন তাহলে গুগল অয়ালেটের কি হবে? চিন্তা করার কোন কারণ এটি আগের অবস্থায় থাকবে। তবে হয়তো গুগল অয়ালেট অ্যান্ড্রয়েড পে'র বিভিন্ন সুবিধা পাবে। গুগলের অয়ালেট (২০১১) সেবা খুব ভাল করতে পারে নি কিছু ট্রাবেলশুটের কারনে। ২০১৬ সালের মধ্যে গুগল অয়ালেট নতুন ভাবে আসবে এটা ব্যবসায়িদের সাথে সাথে গুগলেরও আশা।

গুগল অয়ালেট (Google Wallet)

কোন ডিভাইসে অ্যান্ড্রয়েড পে চলবেঃ

এনএফসি (NFC - Near Field Communication) সুবিধা সম্বলিত সকল ডিভাইসে অ্যান্ড্রয়েড পে ব্যবহার করা যাবে, কারণ ম্যাক্সিমাম অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে এনএফসি সুবিধা আছে। তবে আপনি যদি সর্বোত্তম সিকিউর থাকেতে চান তাহলে আপনাকে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার সুবিধা সম্বলিত ফোন ব্যবহার করতে হবে।

স্যামসাং পে (Samsung Pay):

স্যামসাং পে সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড পে এবং অ্যাপেল পের মতো  একটি স্বতন্ত্র মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেম। এটার সবথেকে মজার বিষয় হলো কার্ড সুইপার থাকলে স্যামসাং পে আপনি সব জায়গা থেকে ব্যবহার  করতে পারবেন, এনএফসি (NFC) সুবিধা না থাকলেও। এনএফসি(NFC) সুবিধা থাকলেও আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

এটা একটি সর্বশেষ টেকনোলজি দিয়ে তৈরি পেইমেন্ট সিস্টেম। যেটা স্যামসাং এর সর্বশেষ গ্যালাক্সি এস ৬ এবং গ্যালাক্সি এস ৬ edge এ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা কার্ডের মতো ম্যাগনেটিক সিগন্যাল দিতে সক্ষম। এটাকে Magnetic Secure Transmission (MST) বলা হয়। স্যামসাং এই প্রজুক্তি তাদের সর্বশেষ LoopPay পদ্ধতি থেকে নিয়ে আসছে এবং এটাই হয়তো মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেমকে নতুন মাত্রা দিবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তাছাড়া এখানে থাকবে একটি রেগুলার মোবাইল পেইমেন্ট অ্যাপ। যেটা আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য মনে রাখতে পারবে এবং যখনি আপনি আপনার ফিঙ্গার প্রেস করবেন সেটা ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার পড়তে পারবে। তখন সেটা এনএফসি রিডার বা ম্যাগনেটিক স্ত্রিপ রিডার দ্বারা প্রসেস হবে।

কম্পাটিবলঃ

তবে এই সেবা এখন পর্যন্ত গ্যালাক্সি এস ৬ এবং গ্যালাক্সি এস ৬ edge এ সীমাবদ্ধ, তবে এনএফসি ব্যবহারে নিয়ে আসলে অন্যান্য আগের মডেলগুলোতেও এটা ব্যবহার করা যাবে।

অ্যাপেল পে (Apple Pay):

মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে এই অ্যাপেল পেই একমাত্র ব্যবহার হচ্ছে, যদিও সেটা শুধুমাত্র অ্যাপেল ৬ এবং ৬ প্লাসে সীমাবদ্ধ, তাও সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে এটি রিলিজ পায়। যদিও সকল সুবিধা সম্পন্ন এটা এখনও না, তবে সবাই আশা করছে এটি অনেক সুবিধা সম্পন্ন হবে।

অ্যাপেল পে সিস্টেম

তবে অনেক ব্যবহারকারি এটাতেও সমস্যায় পড়ে, কারণ তারা এনএফসি(NFC) সেপ্টেম্বর থেকে অনেকে ডিযাবেল করে ফেলে, যেহেতু CurrentC নামক একটা নতুন পাইমেন্ট সিস্টেম চালু হওয়ার কথা ছিল। সেহেতু অ্যাপেল পেও গুগল ওয়ালেটের মতো কম্প্যাটিবল ইস্যু তৈরি করে। তবে আশার কথা হচ্ছে ২০১৬ এর মধ্যে ইউএসএ তে বেশিরভাগ রিটেলার এনএফসি সুবিধা চালু করবে।

অ্যাপেলের নতুন ফোনগুলোতেও ফিঙ্গার প্রিন্ট সেবা চালু করছে, যেটা প্রত্যেক পারচেইজে ব্যবহার করা যাবে। এমনকি নির্দিষ্ট অ্যাপ দিয়েও এটি করা যাবে। আরেকটা বিষয় অ্যাপেল তাদের পে সিস্টেমে সিকুরিটি নিয়ে খুব প্রশংসিত। তারা জানায় এটা পেমেন্ট প্রসেস এর সময় কেউ আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য পড়তে পারবে না এমনকি আপনি কোথা থেকে কেনাকাটা করছেন তা ট্রেকিং করাও সম্বভ হবে না।

অ্যাপেল মোবাইল পে

কম্পাটিবলঃ

শুধু মাত্র অ্যাপেল ৬ এবং ৬ প্লাসে এই পে সিস্টেম সীমাবদ্ধ। যদিও অ্যাপেল ওয়াচে এই সেবা ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু সেটা এখনও সামনের মাসে মানুষের কাছে এভালেবল হবে।
আপনার কোনটা পছন্দ হলো? 
অ্যান্ড্রয়েড পে আপনি শুধু অ্যান্ড্রয়েড এবং গুগল ওয়ালেটে ব্যবহার করতে পারবেন, অন্যদিকে অ্যাপেল পে আপনি অ্যাপেল ৬ এবং ৬ প্লাস ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন না। যদিও পরবর্তীতে তাদের সকল ফোন এই সুবাধা সম্বলিত হতে পারে।

মোবাইল পেইমেন্টঃ ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

আর স্যামসাং পে শুধু স্যামসাং ৬ এর উপরের ভার্সনে ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে। অন্য মডেল এখনও সেবার বাইরে। অ্যান্ড্রয়েড পে ভবিষ্যৎ এর বিষয়।

সেহেতু ফোন যদি আপনার  ইস্যু না হয়, তাহলে কোন পেইমেন্ট সিস্টেম আপনি ব্যবহার করতেন। কোন মোবাইল পেইমেন্ট সিস্টেম ভবিষ্যতে লিড দিতে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন টিউমেন্টে আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

আরও কিছু স্পেশাল ফিচার টিউন (কাজের সময় এটিই আপনি খোঁজেন)

Level 2

আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

খুব ভাল হবে apple google আগে থেকে সফটওয়্যার দিয়ে রাখবে যখন ইচ্ছে আমাদের টাকা চুরি করতে পারবে ।

ফিচারগুলো আসলেই অস্থির, দুর্দান্ত আর সেইসাথে ভয়ঙ্করও 😉 এখনও যদিও ডিভাইস নির্ভর কিন্তু আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেখা যাবে এমনকি দেশেও কার্ডগুলোকে সব যাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে!!! যদিও এই বান্দার মাথায় এখনও কলাকৌশলের সবটা ঢুকে নাই কিন্তু স্মার্টফোন বাস্তবতার যুগে ধাক্কা খেয়েও মানুষ এগিয়ে যায় বৈকি 😉

টিউনটার জন্য ধইন্যা পাতা জোড়া জোড়া…..ব্যতিক্রমী বিষয়গুলোর আলোকপাত বেশ ভালো লাগে 🙂

    @নিওফাইট নিটোল: যুগ বদলাচ্ছে, সেই সাথে জীবন যাত্রাও চেঞ্জ হচ্ছে, সেই সাথে আমাদের পথ চলা। আশা করি ভালো হবে। 🙂 ধন্যবাদ।