যে সকল কারণে আপনার VPN ব্যবহার করা উচিৎ

টিউন বিভাগ অন্যান্য
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

বর্তমান যুগটা সম্পূর্ণই ইন্টারনেট আর তথ্য প্রযুক্তির যুগ, বাংলাদেশে এই ইন্টারনেট এর প্রচলন অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে তবে উন্নত বিশ্বে আরো অনেক বছর আগে থেকেই ইন্টারনেট ভিক্তিক হয়ে পড়েছে। ব্যাকিং সেবা, ট্রান্সপোর্ট সেবা, হসপিটাল সেবা সহ দেশের বিভিন্ন খাতকে এখন আমরা ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে পিসি বা মোবাইলের টাচের মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছি। সে হিসেবে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটে আমাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ীক জীবনের কতটুকু ডাটা বা তথ্য জড়িয়ে থাকে সেটা একবার চিন্তা করুন! আর বিশ্বের সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক দুটোই রয়েছে আর ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও তাই। আগে ব্যাংক ডাকাতি হতো ব্যাংকে গিয়ে আর ইন্টারনেটের সাহায্যে ডিজিটাল ডাকাত বা হ্যাকাররা তাদের বাড়িতে বসেই ব্যাংক লুটে নিচ্ছে! ব্যাংক না লুটে নিলেও আপনি যদি বড়সড় বিজনেসসম্যান বা গুরুর্ত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পারসোনাল ডাটাগুলোও এভাবে নেটে চুরি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে থাকবে। ইন্টারনেট জগতে নিজের প্রাইভেসিকে রক্ষা করতে এবং কনট্রোল করতে আপনি ভাচুর্য়ার প্রাইভেট নেটওর্য়াক বা VPN ব্যবহার করতে পারেন! আর আজ আমি টেকটিউনসে সেটাই বলতে এসেছি। কেন আপনি ভিপিএন ব্যবহার করবেন? ভিপিএন ব্যবহার করার সুবিধা কি? আর ভিপিএন ব্যবহার না করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে আপনার এসব কিছুই আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে আনার চেষ্টা করবো। তো চলুন ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনে চলে যাই:

ভিপিএন কি এবং এটা কিভাবে কাজ করে?

ভিপিএন নিয়ে কোনো কিছু বলার আগে সবচেয়ে প্রথমে যেটা বলতে হয় সেটা হলো ভিপিএন এর সংঙ্গা! মূলত ভিপিএন আপনার ইন্টারনেট সংযোগ এবং উক্ত ভিপিএন এর রিমোট সার্ভারের ভিতর একটি টানেল তৈরি করে। আর এর মাধ্যমে আপনার পিসিতে আগত সকল ইন্টারনেট তথ্যাবলি এই টানেলের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হতে থাকে। আর এর মাধ্যমে আপনার আসল আইপি এড্রেসটি ইন্টারনেট জগতে প্রকাশিত হয় না বরং ওই ভিপিএন টানেলের সাভার্রের আইপি এড্রেসটি আপনার আইপি এড্রেসের উপর মাস্ক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। আর ইন্টারনেট হতে কোনো হামলা যদি এসে থাকে তাহলে আইপি এড্রেসের উপরেই আসে আর যেহেতু আইপি এড্রেসটি আপনার নয় তাই আপনি ইন্টারনেটে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

মূলত কোনো HTTPS সাইটে ব্রাউজিং চলা কালে তেমন কোনো হামলা হবার ভয় থাকে না তবে অনান্য প্রটোকলে নিয়মিত যদি আপনি কাজ করে থাকেন বা ব্যক্তিগত কাজে ব্রাউজিং করে থাকেন তাহলে আপনার এক্ষুনি একটি ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করা উচিত!

ধরুন কোনো পাবলিক ইন্টারনেটে যেমন কোনো ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পটে আপনি কোনো কিছু চিন্তা না করেই ঢুকে গেলেন। কিন্তু আপনি জানবেন না যে কে বা কারা এই ওয়াইফাইয়ের উপর নজর রাখছে। এর মাধ্যমে আপনার ডিভাইসের সবকিছুই তারা চুরি করে নিতে পারবে। আর এইসকল ফ্রি ওয়াইফাইতে শুধুমাত্র আপনার এন্টিভাইরাস আপনাকে পুরোপুরি সুরক্ষিত রাখতে পারবে না। আপনার ডিভাইসের পাসওর্য়াড, ব্যাকিং ডাটা, ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার ইত্যাদি সকল সেন্সিটিভ তথ্যগুলোকে আপনি ভিপিএন এর মাধ্যমে সুরক্ষিত করে রাখতে পারবেন।

একই ফ্রি ওয়াইফাইতে যদি আপনি ভিপিএন এর মাধ্যমে প্রবেশ করেন তাহলে আপনি উক্ত নেটওর্য়াকে আপনার প্রাইভেসি নিয়ে সম্পূর্ণ রূপে নিরাপদ এবং নিশ্চিত থাকতে পারবেন, কেউই আপনার প্রাইভেসিতে হানা দিতে পারবে না। এমনকি উক্ত ওয়াইফাই নেটওর্য়াকের মালিক বা এডমিনরাও আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারবে না।

আর ভিপিএন এর ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আরেকটি সুবিধা পাবেন সেটি হলো ব্লকড ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন। অনেক সময় অনেক দেশে বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে ব্লক করে রাখা হয়। কিংবা আপনার স্কুল কলেজে দেখবেন যে ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি সাইটগুলো ব্লক করা থাকে। মানে আপনি বাসায় আপনার ডিভাইস দিয়ে ফেসবুক এবং ইউটিউব ব্রাউজ করতে পারছেন কিন্তু কলেজে গেলে সেখানকার ওয়াইফাই দিয়ে ফেসবুক আর ইউটিউব ব্রাউজিং করতে পারছেন না কারণ সেখানে এই দুটি সাইট ব্লকডকৃত করে রাখা হয়েছে।

কিন্তু ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি এইসকল যাবতীয় ব্লকড ওয়েবসাইটেও ব্রাউজিং করতে পারবেন আরামসে! যেহেতু ভিপিএন তাদের নিজস্ব আইপি এড্রেস ব্যবহার করে তাই আপনি এর ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার নেটওর্য়াকের ব্লকলিস্টের বাইরে থাকতে পারবেন। আর এর মাধ্যমেই ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি আপনার আইডেন্টিটি ইন্টারনেটে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

প্রায় সকল ভিপিএন এর ক্ষেত্রেই উইন্ডোজ আর ম্যাকওএস ভিপিএন ক্লায়েন্টের মধ্যে কোনো পাথর্ক্য থেকে থাকে না তবে আমার কাছে টেস্টিং এর সময় কিছু পার্থক্য ধরা পরেছে এই দুটি প্লার্টফর্মের ভিপিএনগুলোতে। এটা মেজর কোনো পার্থক্য নয়, উইন্ডোজতে আপনাকে কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে ভিপিএন সেটিংস করে নিতে হয় আর ম্যাকে সেটা অন্যভাবে করা লাগে। আর দুটো ক্ষেত্রেই আপনাকে ভিপিএন সার্ভিসে লগইন করে নিতে হয়।

আর মোবাইল ডিভাইসের জন্য ভিপিএন সার্ভিসগুলো একটু সহজ প্রকৃতি হয়ে থাকে। প্রায় সকল ভিপিএন কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য আলাদা এপপ রয়েছে। কারণ আমরা মূলত মোবাইল ডিভাইস দিয়েই এই জাতীয় নেটওর্য়াকে কানেক্টেড হয়ে থাকি। তবে মোবাইলে ভিপিএন ব্যবহার করার আগে ভিপিএন কোম্পানির সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিবেন।

অন্যদিকে আইফোনের ভিপিএনগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে অন্য নিয়মে। কারণে অ্যান্ড্রয়েডের থেকে আলাদা কাউন্টারপার্টে আইফোনগুলো কাজ করে থাকে। তবে আইফোনের নিজস্ব ভিপিএন প্রটেক্টশন থাকার কারণে আইফোন ব্যবহারকারীরা ভিপিএন এর ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

নাসা এবং আইএসপি?

প্রাইভেসির শত্রু হিসেবে ইন্টারনেট জগতে আমরা দুটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ ভাবে দোষারোপ করতে পারি। এরা হলো নাসা এবং আপনার ISP কোম্পানিটি।

বিভিন্ন বছরে আমরা নাসার বিরুদ্ধে প্রাইভেসি লঙ্ঘনের অভিযোগ শুনতে পাই। এরমধ্যে আমেরিকার সিটিজেনদের পারসোনাল বিভিন্ন বিষয়ের উপর নাসার গোপন গবেষণার কথাও আমরা কিছু বছর আগে শুনেছিলাম। নাসার একটি দারূণ ক্ষমতা রয়েছে আর তা হলো এরা ইন্টারনেটে প্রেরিত এবং আগত সকল তথ্যতে অনুপ্রবেশ এবং এনালাইজ করার ক্ষমতা নাসা রেখে থাকে।

একটি ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি নাসার এই ক্ষমতার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। যেহেতু ভিপিএন সার্ভিসটি একদম আলাদা একটি আইপি এড্রেস ব্যবহার করে থাকে তাই নাসা আপনার আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারবে না। তবে তারা এটা বুঝতে পারবে যে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করছেন!

অন্যদিকে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারাও এই গুপ্তচরের কাজটি করে থাকতে পারে। কারণ আপনি তাদের কাছ থেকে নেট সার্ভিস নিচ্ছেন এবং সাধরণতই আপনার নেটের সকল একসেস তাদের কাছে থাকছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটি চিন্তার কারণ নয় কিন্তু আপনি যদি কোনো অফিসে বা গুরুর্ত্বপূর্ণ বিজনেস সেক্টরে লক্ষ্য করেন তাহলে আইএসপিও কিন্তু প্রাইভেসি হানির জন্য একটি কারণ হিসেবে আখ্যয়িত করা যায়।

ভিপিএন যেগুলো করে না.

এখানে একটি বিশেষ নোট রাখা দরকার যে ইন্টারনেটে শুধুমাত্র একটি উপায়ে বা একটি মাধ্যমে আপনার প্রাইভেসি ট্রাক করা হয় না। ইন্টারনেটে আপনার প্রাইভেসিকে অনেকগুলো পদ্ধতিতে একসেস করা যাবে। তাই ভিপিএন ব্যবহার করার পরেও বিশেষ কিছু ওয়েবসাইট যেমন গুগল, ফেসবুক, আমাজন ইত্যাদি ওয়েবসাইটগুলো আপনার ব্রাউজিংয়ের উপর ট্রাকিং চালিয়ে যেতে পারবে।

আর বিশ্বের কোনো কিছুই ১০০% পারফেক্ট নয়। আর ভিপিএনও এই কথার ব্যতিক্রম নয়। ভিপিএন ব্যবহার করার পরেও অনেক শক্তিশালী নেটওর্য়াকগুলো ভিপিএন ক্রাক করতে পারে।

তাই আপনি যদি নেটে একদমই anonymize হয়ে থাকতে চান তাহলে আপনাকে ডার্ক ওয়েবে চলে যেতে হবে। কারণ শুধুমাত্র ডার্ক ওয়েবেই কোনো ব্যবহারকারীকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা যায় না। কারণ ডার্ক ওয়েবে প্রতিটি ব্যবহারকারীর আইপি এড্রেস বিভিন্ন সার্ভার নোডের মধ্যে বাউন্সিং আকারে থাকে আর এ কারণে এই ডার্ক ওয়েবে কোনো ইউজারের আশাকরি। আর যদি দেখেন যে ভিপিএন ব্যবহার করার পরেও আপনার প্রাইভেসি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি বেশ গুরুর্ত্বপূর্ণ একটি ব্যক্তি এবং যে বা যারা আপনার প্রাইভেসির উপর হামলা চালাচ্ছে তারাও বেশ দক্ষ কারিগর!

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই এত সব তথ্য দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। কোন ভিপিএন Software টি ভাল দয়াকরে যদি বলতেন।

@মো আব্দুল মোমিন টুটুল

ExpressVPN, PureVPN, NordVPN, HideMyAss VPn,

Tnx for Info..