অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের পাঁচটি কুফল

টিউন বিভাগ অন্যান্য
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে করে দিয়েছে সহজ এবং আরামদায়ক তা বলার অবকাশ রাখে না। প্রযুক্তির এই ব্যাপক উৎকর্ষ একদিকে যেমন সুফল বয়ে এনেছে, তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহারে রয়েছে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন দুনিয়া হাতের মুঠোয় বলা যায়। আর দুনিয়া হাতের মুঠোয় নিয়ে চলা যায় এমন সবচেয়ে ছোট ও পরিবহনযোগ্য ডিভাইস হলো স্মার্টফোন।

একটি গবেষণায় জানা গেছে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

আজকের আর্টিকেলে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

" অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং অরিজিনাল আর্টিকেলটি পড়তে ভিজিট করতে পারেন "

 

Disadvantages of Excessive Mobile Phone Use

 

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের পাঁচটি কুফল

 

স্মার্টফোন আসক্তি:

আমেরিকায় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে একজন কলেজ স্টুডেন্ট দিনে গড়ে ১০ ঘন্টা ফোন ব্যবহার করে।

হতে পারে সেটি ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা কিংবা পিডিএফ ফাইল পড়া কিংবা মেসেজিংসহ বিভিন্ন কাজ।

মজার বিষয় হলো দিনে তারা বিভিন্ন সোশ্যাল সাইট সহ যতগুলো মেসেজ আদান প্রদান করে তত কথা তারা সারাদিনে কারো সাথে বলেনা।

আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকার প্রতি পাঁচ জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে তিন জনই ৬০ মিনিটের বেশি একবারও ফোন চেক না করে থাকতে পারে না।

পুরো বিশ্বেই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের অবস্থা কম-বেশি এরকমই। কাউকে যদি বলা হয় ফোন ছাড়া থাকতে হবে তখন তার মাঝে একরকম ভয় দেখা দেয়, যাকে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন নোমোফোবিয়া।

 

দৃষ্টি-শক্তির সমস্যা :

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের খারাপ দিকগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য আরেকটি সমস্যা হলো এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করতে পারে।

স্মার্টফোনের নীল আলো আমাদের রেটিনার জন্য ক্ষতিকর। টানা অনেকক্ষণ ধরে অতিরিক্ত পরিমাণ স্মার্টফোন ব্যবহার রেটিনার মারাত্নক ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ম্যাকুলার ডিজেনারেশান বলা হয়।

স্মার্টফোনের নীল আলো সরাসরি আমাদের চোখে এসে পড়ায় এবং খুব কাছ থেকে এটি ব্যবহার করাই চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এক জরিপ অনুযায়ী, ২ হাজার মানুষের মাঝে ৫৫% স্বীকার করেছেন যে কিছুক্ষণ ফোন ব্যবহার করার পর তাদের চোখে তারা অস্বস্তি অনুভব করেন। এজন্য মহামূল্যবান চোখকে রক্ষা করতে স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন।

এটি অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না এবং যতক্ষণ ব্যবহার করবেন ২০-২০-২০ রুল অনুসরণ করবেন। এর মানে হলো, প্রতি ২০ মিনিট স্মার্টফোন ব্যবহারের পর ২০ সেকেন্ড ধরে ২০ ফুট দূরের কিছুর দিকে তাকাবেন।

এতে করে চোখ কিছুটা স্বস্তি পাবে এবং চোখের উপর চাপ কমবে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এমন সব খাবার প্রতিদিনের খাবার মেনুতে রাখতে চেষ্টা করবেন।

 

ঘুমের ব্যাঘাত :

২০১৩ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৯ বছরের ৬৩% মানুষ ঘুমানোর সময় তাদের স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট বিছানায় নিয়ে যায় এবং ৩০ থেকে ৬৪ বছরের ৩০% মানুষও এই একই কাজ করে থাকে।

চিন্তার বিষয় হলো, ২০১৫ সালে পাবলিশ হওয়া এক গবেষণা অনুযায়ী, ঘুমানোর আগে ফোন বা ট্যাবলেট এর নীল আলো ঘুমের যতটা ব্যাঘাত ঘটায় তা একটা ডাবল এসপ্রেসো কফিও পারে না।

যদিও আমরা ঘুমানোর আগে ডাবল এসপ্রেসো কফি নিয়ে কেউ বিছানায় যাইনা। কিন্তু ফোন বা ট্যাবলেট ঠিকই নিয়ে যাই।

 

নেতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি :

২০১১ সালে ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর উপর একটি জরিপ করা হয়। তাদের ২৪ ঘন্টা স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, সোশ্যাল সাইট থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।

ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী এর মাঝে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। তাদের দেখে মনে হয়েছিল তারা অনেক বেশি একা হয়ে গেছে। এমন কি অনেকে শেষ পর্যন্ত পারেইনি ২৪ ঘন্টা দূরে থাকতে।

 

শ্রবণ শক্তির সমস্যা :

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের খারাপ দিকগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো শ্রবণ শক্তির সমস্যা। সাধারণত স্মার্টফোনে চ্যাট, ব্রাউজিংয়ে আপনার কানের অর্থাৎ শ্রবণ শক্তির কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।

কিন্তু আপনি যদি বেশি পরিমাণে হেডফোন ব্যবহার করেন কথা বলা কিংবা গান শোনার জন্য, তবে আপনার সাবধান হওয়ার সময় এসে গেছে।

আমাদের কানের ভেতর খুব ছোট ছোট পাতলা লোমের মতো বস্তু থাকে। যার কাজ হলো বিভিন্ন নার্ভ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে রাসায়নিক সংকেত পাঠানো

হাই ভলিউমের শব্দ এই লোমগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হাই ভলিউম বলতে কেমন শব্দ বোঝানো হচ্ছে এখানে এই প্রশ্ন আসতে পারে।

Dangerous Decibels Public Health Campaign এর মতে ৮৫ ডেসিবেল এর বেশি মাত্রার শব্দই হাই ভলিউম শব্দ, যা আমাদের শ্রবণ শক্তির ক্ষতি করতে পারে।

স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হেডফোনে সর্বোচ্চ ১০৫ ডেসিবেল মাত্রার ভলিউম থাকে, যা কনসার্টে উৎপন্ন শব্দের মতোই। চার মিনিটয়ের বেশি এই সর্বোচ্চ ভলিউমে কেউ গান শুনলে তা কানের তথা শ্রবণ শক্তির মারাত্নক ক্ষতি করতে পারে।

এমনকি কেউ যদি ভলিউম কমিয়ে ৯৪ ডেসিবেলও করে, তবুও টানা ১ ঘন্টার বেশি সেই শব্দ কানের ক্ষতি করতে পারে। এগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের আরো অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।

প্রযুক্তির পরিমিত ব্যবহার যেমন আমাদের জীবন যাত্রাকে অনেক সহজ করে দিতে পারে, তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের ক্ষতিই করে এবং সেই ক্ষতি শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনা।
বিভিন্ন একসিডেন্ট সহ পারিবারিক-সামাজিক অশান্তি ডেকে আনতে পারে  মোবাইল  অতিরিক্ত ব্যবহার। তাই এ বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

Level 1

আমি হাসিবুল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি হাসিবুল ইসলাম বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল বিষয়ে আমি Bachelor of Science in Textile Engineering পাশ করেছি । প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসি । তাই চাকরির পাশাপাশি প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন লেখালেখি করি । আমার লেখা আপনাদের ভাল লাগলে নিজেকে সার্থক মনে করব ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস