“লেখাটি ৪০ জনকে পাঠান, ইনশাল্লাহ ৪০ দিনের মধ্যে কোন ভালো খবর পাবেন।” বিষয়টা কেমন জানুন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সুপরিচিত একটি লাইন।

আচ্ছালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন সবাই। সরাসরি লেখায় চলে যাচ্ছি।

মোবাইলে SMS আদান-প্রদান যখন শিখলাম তার কিছুকাল পর যখন SMS খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করল, তখন নিচের মতো SMS আমরা প্রায় সবাই পেয়েছি।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ), এই কালিমা ২০ জনকে পাঠান (আমি বাদে)। ইনশাল্লাহ ২০ দিনের মধ্যে ভালো কোনো সংবাদ পাবেন। আর যদি অবিশ্বাস করেন তাহলে ২০ দিনের মধ্যে খারাপ কোনো সংবাদ পাবেন।

লাইনটা মুটামুটি এই। তবে কালিমার স্থলে মহান আল্লাহর গুণবাচক নাম, কোনো পরিচিত দুআ, বর্ণমালায় আরবী শব্দ ব্যবহারের প্রচলন (যেমনঃ A for Allah, B for Banda, C for Caalima, D for Dua etc.) ইত্যাদিও ব্যবহার করে SMS পাঠাতেও দেখেছি।

তবে মাঝে ব্যাপারটা অনেকক্ষেত্রে সমালোচিত হবার পর দেখেছি অনেকে আর যদি অবিশ্বাস করেন......... লাইনটা তুলে দিয়ে SMS পাঠাচ্ছেন।

শেষকালে, ব্যাপারটা এরকমও দাঁড়িয়েছে যে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ), এই কালিমা ২০ জনকে পাঠান (আমি বাদে)। ইনশাল্লাহ ২০ দিনের মধ্যে ভালো কোনো সংবাদ পাবেন। কারণ, আপনার পাঠানোর জন্য ২০ জন মানুষ কালিমা পাঠ করবে।

এখন ফেসবুকেও দেখছি এরকম SMS পাঠানো হয়। এতে দেখি অনেকে বিরক্তও বোধ করেন আবার অনেকে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও পাঠাতে বাধ্য হন। কারণ, ক্ষতির কথাও উল্লেখ থাকে। কিছু বললে বলেন যে, একজন বন্ধু পাঠালো তাই শেয়ার করলাম।

আবার, স্কুলে পড়াকালীন সময়ে একটা লিখিত কাগজ খুব পেতাম। বিষয়টা মুটামুটি এরকম,

জনৈক এক বাবা অমুক মাজারে একদিন শয়ন করিতেছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, মহানবী (সাঃ) তাকে বলছেন যে, কলিযুগে পাপ অনেক বেড়ে গেছে। তাদেরকে সঠিক পথে ফিরানোর জন্য যেন তিনি চেষ্টা করেন। আর যে এই খবরটা পড়বে সে যেন ২৫ জন লোককে এই কাগজটা পৌছে দেয়।

মহানবী (সাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর মানুষকে সৎপথে ফিরানোর জন্য পবিত্র কুরআনে অনেক আগে থেকেই বলা আছে। এরপর। কাগজটা বিলি করার কথা বলা হয়েছে।

সেখানে আরো বলা হয়ে থাকে যে, চট্টগ্রামের অমুক লোক কাগজটি ২৫ জনকে বিতরণ করে আর ৭ দিন পর সে মাটি খুঁড়ে একটা সোনার হাঁড়ি পায়। পরে সে আরো ১০০০ কপি বিলায়। আবার কোনো একজন বেকার কাগজটির ৫০ কপি করে লোকজনকে দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই তার চাকুরি হয়ে যায়।

আবার বলা হয়, একজন লোক অবিশ্বাস করে কাগজটি ছিঁড়ে ফেলে, পরদিন তার স্ত্রী মারা যায়। এরকম আরো অনেক ক্ষতি হয়। তাই অনেকেই লাভ হোক না হোক, ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য সেটা কপি করে বিতরণ করত।

আমরা আসলে একটা ধর্মীয় ব্যাপার আমাদের কাছে আসলে সেটা যাচাই না করেই বিশ্বাস করে নিই। যার ফলে ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক কাজ করা মানুষের সহজ হয়। আপনি হয়তো পাঠাতে চাচ্ছেন না কিন্তু ঐ যে ধর্মের দোহাই, তার উপর না পাঠালেও ক্ষতির কথা লেখা আছে। তাই আপনি পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। আসুন দেখি এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে-

আমি আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় যত হাদীসের বই-পুস্তক পড়েছি তা থেকেই বলব। আর আমি প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহের উপরই বিশ্বাসী। কারণ, মানুষ এখন আল্লাহকে এত মাত্রায় ভুলে গেছে যে হাদীসের বই সম্পাদন করতেও তাদের মনে এতটুকুও দ্বিধা হয় না।

তার আগে বলে রাখা ভালো যে এটা ইসলামের কোন্‌ পর্যায়ে পড়ে।

মানতঃ কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য পূরণ বা সাধনের জন্য শারিরীক, মানসিক, আর্থিক, অনৈতিক (অনেক ক্ষেত্রে), কষ্টদায়ক, ঘৃনিত(অনেক ক্ষেত্রে) কাজের পণ করাকেই বলা হয় মানত।

তাই ব্যাপারটা মুটামুটি এরকম দাঁড়াচ্ছে। আমি কালিমাটি শেয়ার করব যেন আল্লাহ আমাকে একটা ভালো সংবাদ উপহার দেন। তাই এটাও মানতের পর্যায়ে চলে গেল। আসুন দেখি হাদীসে মানত সম্পর্কে কী উল্লেখ আছে। সহীহ মুসলিম থেকে আমি মানত সম্পর্কে কতকগুলো হাদীস পড়েছি। সেগুলো উল্লেখ করলাম। আর বিশেষ অংশগুলো বোল্ড করে উল্লেখ করলাম।

৪১০২। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা,ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধকে দেখতে পান সে তার দুই পূত্রের মাঝে তাদের উপর ভর দিয়ে চলেছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, এ ব্যক্তির কী ব্যাপার? তার দুই পূত্র বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তার উপর (হেঁটে যাওয়ার) মানত ছিল। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওহে বৃদ্ধ! তুমি আরোহণ কর। কেননা আল্লাহ তোমার ও তোমার মানতের মুখাপেক্ষী নন। এ শব্দ হল কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) এর।

৪০৯১। যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদেরকে মানত কর্য থেকে নিষেধ করতে থাকেন এবং বলেনঃ যে, তা (তাকদীরের) কিছুই ফিরিয়ে দেয় না। তবে এর মাধ্যমে কৃপনদের হাত থেকে কিছু বের করা হয়।

৪০৯২। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ, মানত কোন কিছুকে না এগিয়ে আনতে পারে, আর না পিছিয়ে দিতে পারে। তবে এর মাধ্যমে কৃপণ থেকে কিছু বের করা হয়।

৪০৯৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত নিষেধ করেছেন। আর বলেছেনঃ, তা কোন রকম কল্যাণ বয়ে আনে না। তবে এর মাধ্যমে কৃপণ লোকের থেকে কিছু বের করা হয়।

৪০৯৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মানত করো না। কারণ, মানত তাকদীর থেকে কিছু মাত্র মুক্তি দেয় না। তার মাধ্যমে কেবল কৃপণের কিছুই বের করা হয়।

৪০৯৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ তা তাকদীরকে ফিরাতে পারে না। এর মাধ্যমে কেবলমাত্র কৃপণের থেকে কিছু বের করা হয়।

৪০৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানত এমন কোনবস্তুকে মানুষের নিকটে এনে দেয় না, যা আল্লাহ তার তাকদীরে রাখেননি। কিন্তু মানত যদি তাকদীরের অনুকুলে হয়ে যায় তখন এর দ্বারা কৃপণের সেই মাল বের করা হয়, যা বের করতে সে ইচ্ছুক ছিল না।

৪০৯৯। যুহায়র ইবনু হারব ও আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, সাকীফ গোত্র ছিল বনূ উকায়ল গোত্রের মিত্র। সাফীফ গোত্রের লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুজন সাহাবীকে বন্দী করে। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা বনূ উকায়ল গোত্রের এক ব্যক্তিকে বন্দী করে এবং তার সাথে আযবা (নান্মী উষ্ঠী)কেও আটক করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন। তখন সে বাধা অবস্হায় ছিল। সে ডাক দিল , ইয়া মুহাম্মাদ! ইয়া মুহাম্মদ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট এলেন এবং বললেনঃ তোমার কী অবস্থা? সে বললো, আমাকে কী কারণে বন্দী করেছেন? আর কেনই বা হাজ্জ (হজ্জ)ীদের অগ্রগামী উষ্ট্রীকে আটক করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, বিরাট কারণে। তোমার মিত্র সাকীফ গোত্রের অপরাধের জন্য তোমাকে বন্দী করেছি। এরপর তিনি তার কাছ থেকে ফিরলেন। সে আবার তাঁকে ডেকে বলছেন, ইয়া মুহাম্মাদ! ইয়া মুহাম্মাদ! আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, বড়ই দয়ালু এবং নম্র স্বভাবের। তাই তিনি তার দিকে আবার এলেন, এবং বললেনঃ তোমার কি অবস্হা? সে বললোঃ আমি একজন মুসলমান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তুমি যদি এ কথা তখন বলতে, যখন তোমার ব্যাপার তোমার অধিকারে ছিল, তবে তুমি পুরোপুরি সফল হতে। এরপর তিনি ফিরলেন। সে আবারও তাকে ডাক দিয়ে বললো, ইয়া মুহাম্মাদ! ইয়া মুহাম্মাদ! তিনি আবার তার কাছে এলেন এবং বললেনঃ, তোমার কী হয়েছে? সে বললো, আমি ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দিন, এবং তৃষ্ণার্ত, আমাকে পান করান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, এই তোমার প্রয়োজন। অতঃপর তাকে সেই দু-ব্যক্তির বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়। রাবী বলেনঃ, একবার এক আনসার মহিলা বন্দী হয় এবং আথবা নাম্বী উষ্ট্রী (তাদের হাতে) ধরা পড়ো মহিলাটি বাধা অবস্হায় ছিল। গোত্রের লোকদের অভ্যাস ছিল তারা তাদের পশু গৃহের সামনে রাখত। এক রাত্রে রমনিটি বন্ধন মুক্ত হয়ে পলায়ন করে এবং উটের কাছে আসে। সে যখনই কোন উটের কাছে আসতো, উট আওয়াজ করতো এবং তখন সে তাকে পরিত্যাগ করতো। অবশেষে সে আযবার, কাছে এসে পৌছো আযবা কোন আওয়াজ করলো না। এ উটনী ছিল বড়ই বাধ্যগত। সে তার পিঠের উপর বসে এবং তাকে হাকায় আর সে চলতে থাকে। তখন তারা তার পলায়ন টের পেয়ে গেল এবং তার অন্বেষণে ছুটল। কিন্তু আযবা তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়। রাবী বলেনঃ, মহিলাও আল্লাহর নামে মানত করে যে, আল্লাহ যদি এ উষ্ঠীর সাহায্যে তাকে মুক্তি দেন, তবে সে অবশ্যই তাকে কুরবানী করবে। ষখন সে মদিনায় পৌছে, তখন লোকজন তাকে দেখে বললো, এতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উষ্ট্রী আযবা। তখন সে বলল যে, সে মানত করেছে যে, আল্লাহ যদি তাকে এ উষ্ঠীর উপর রক্ষা করেন, তবে সে অবশ্যই তাকে কুরবানী দিবে। তারপর তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে এবং ঘটনাটি তাকে বললো। তিনি বললেনঃ, সুবাহানাল্লাহ! কি মন্দ প্রতিদান, যা সে তাকে দিয়েছে। সে আল্লাহর নামে মানত করেছে যে, যদি আল্লাহ তাকে এ উষ্টীর উপর রক্ষা করেন তবে সে তাকেই কুরবানী করে দিবে। (জেনে রাখ) পাপের ব্যাপারে মানত করলে সে মানত পূরণ করতে নেই। আর সে বস্তুর মানতও পূরণযোগ্য নয়, যার মালিক সে বান্দা নয়। ইবনু হুজর (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর নাফরমানীর বিষয়ে মানত সংঘটিত হয় না।

তাহলে চিন্তা করুন সবকিছুরই তো মালিক আল্লাহ। তাহলে আপনি কেনো কোনো জিনিসের উপর মানত করতে যাবেন যেখানে কোনো ফায়দা নেই!

৪১০১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক বৃদ্ধকে দেখলেন যে, সেঁতার দুই পুত্রের উপর ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, এর অবস্হা কি? তারা বললোঃ সে হেটে যাওয়ার জন্য মানত করেছে। তিনি বললেনঃ, এ ভাবে নিজেকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার কোন প্রয়োজন নেই। অতঃপর তিনি তাকে সাওয়ার হতে বলেন।

৪১০৪। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ মিসরী (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমার ভগ্নি নগ্নপায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ যাওয়ার মানত করে। সে আমাকে তার পক্ষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফাতওয়া জানার জন্য আদেশ করে। আমি তাঁর কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ, সে পায়ে হেঁটে ও আরোহণ করে যাক।

আমার মনে হয় উপরের আলোচনা থেকে বিষয়টা স্পষ্ট যে মানত আসলে আপনার ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারবে না। আর ভালো সংবাদ, খারাপ সংবাদ সবকিছুই মহান আল্লাহ নির্ধারণ করেন। তাই আল্লাহর হুকুম-আহকামগুলো আগে মেনে চলুন। সঠিকভাবে সালাত কায়েম করার চেষ্টা করুন। দোয়া কবুলের কিছু শর্ত থাকে। এগুলোর মধ্যে পবিত্রতা, সালাত কায়েম ও হালাল রিজিক গ্রহণ উল্লেখযোগ্য।

তাই আপনি অপবিত্র থাকলেন, সালাত আদায় করলেন না, হারাম রিজিক খেলেন আর এদিকে কালিমা শেয়ার করে গেলেন। তাহলে আপনি কীভাবে ভাবেন যে আল্লাহ আপনাকে খুশির সংবাদ দেবেন! আর এদিকে কিন্তু আপনি ঠিকই অন্যকারো মনে বিরক্তির সৃষ্টি করছেন।

ধারণা করা হয়, অসাধু মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার লাভের লক্ষে এভাবে ধর্মভীরু লোকদের কাছ থেকে ধর্মের দোহাই দিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। আর কাগজ বিলির কাজগুলো যে কোনো অসৎ ফটোকপির দোকানদারের কাছ থেকে শুরু হয়েছে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এরই পথ ধরে অনেকে যাচাই বাছাই না করে, ধর্মের কথা শুনে আবেগী হয়ে ফেসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে এধরনের SMS শেয়ার করে যাচ্ছেন।

আবার দেখা গেল একটা ফেইসবুক পেইজে ‘প্রেম-ভালবাসা’র একটা কাহিনী লেখা হয়েছে। আর সেখানকার কমেন্টে দেয়া থাকে, দেখি কতজন মুসলিম ভাই আছেন নিচের কালিমাটিতে লাইক দেন। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

ভাই, কালিমা অত্যন্ত দামী জিনিস। এটার স্থান যেখানে সেখানে না। কমেন্টে স্থাপন না করে আপনার অন্তরে যদি একটুও স্থাপন করতে পারেন, তাহলেই অনেক লাভবান হবেন। এক ভাইকে বোঝাতে গিয়েছিলাম। উল্টো তিনি আমাকে গালি দিয়েছেন। ব্লক করার আগে একটা ম্যাসেজই দিয়েছিলাম যে ভাই, আপনি যদি সত্যিই মুসলিম হতেন তাহলে অন্য মুসলিমকে গালি দিতেন না। এটা ইসলামে নিয়মে পড়েনা। ইসলামকে জানুন, বুঝুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

আর একটা কথা বলি।

‘কবি ইকবাল' একটা বই লিখেছিলেন। বইটার নাম ছিল ‘শেকোয়া’। বইটিতে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। যেমনঃ আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহকে আমরা দেখি না কেনো? ইত্যাদি।

তখনকার আলেম সমাজ ক্ষেপে গিয়ে কবি ইকবালকে ‘কাফির ইকবাল’ নামে ভূষিত করে। এরপর ‘কবি ইকবাল’ আরেকটা বই লেখেন। বইটার নাম ‘জওয়াবে শেকোয়া’। এই বইতে তিনি ‘শেকোয়া’-তে যেসব প্রশ্ন করেছিলেন তার প্রতিটি প্রশ্নেরই উত্তর দেন এবং তা কুরআন ও প্রসিদ্ধ হাদীস থেকে। এবার আলেম সমাজ উল্লসিত। তারা তখন ‘কাফির ইকবাল’এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘আল্লামা ইকবাল’। আমরাও একইরকম। কোনো কিছু বিচার না করেই সিদ্ধান্ত নিই। যে কাজটা করার কথা ছিল ঐ আলেম সমাজের, কবি ইকবালকে দেখিয়ে দেবার জন্য যে, না ইকবাল, তুমি ভুল। সেইকাজটা ‘কবি ইকবাল’ই করে দেখিয়ে দিলেন যে আমরা কোনোকিছু স্বেচ্ছায় বিচার করতে পারি না। তাই ধর্মীয় ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রে আগে যাচাই করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। ধর্মের কথা উল্লেখ আছে বলেই যে সত্য হয়ে গেল তা মনে করবেন না। আগে কুরআন ও হাদীসে সে সম্পর্কে জানবেন তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।

আর একটা জিনিস যখন কোনো জিনিস সহজ বা সস্তা হয়ে যায় তখন তার উপর আর দরদ বা ভালোবাসাটা কমে যায়। আমি খুব ভালোভাবেই লক্ষ করেছি। ফোনে যখন কুরআন পড়তাম তখন যেমনটা পবিত্র অনুভব হয়, পুস্তক আকারে কুরআন পড়লে তার চেয়ে বেশি পবিত্র অনুভব হয়। এর কারণ নিঃসন্দেহে জিনিসটাকে বেশি সহজ করে ফেলা। তাই আর ফোনে কুরআন পড়ি না।

আর যুগটা এমন যে ধর্ম রক্ষা খুব কঠিন হয়ে গেছে। একদম পুরোটা ইসলামী নিয়মে চলা খুবই কঠিন। কারণ, আমাদের দেশে ইসলামী শারিয়াহ আইন চালু নেই। তারপরও অনেক বিষয় মানিয়ে চলা যায়। যেসব বন্ধুদের সালাত আদায় করতে বলতাম তাদের একটাই বাহানা ছিল যে প্যান্ট ঠিক নাই। বললাম কেন। বলে যে জিন্স প্যান্ট পড়ে নাকি বসা যায় না বা বসতে সমস্যা হয়। কথা সত্য একটু সমস্যাই হয়। তাই অনেকদিন আগে থেকেই আর জিন্স পড়িনা। গ্যাভাড্রিন-য়েই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এতে পবিত্রতা অর্জনে কোনো সমস্যাই হয় না। এরকম আরো বহু বিষয় মানিয়ে চলা যায়। সর্বোপরি, সত্য-মিথ্যা, হারাম-হালালটা বেছে চলতে পারলে আপনার জীবনটা সুন্দর হতে যথেষ্ট।

আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এরকম অপ্রয়োজনীয়, অহেতুক যা কোনো উপকারে আসেনা, শুধুমাত্র ধারণার বশবর্তী হয়ে, কোনো কিছু যাচাই না করে, ধর্মীয় বিষয়কে বিশ্লেষণ না করে ঝোঁক বা আবেগের বশে এধরনের লাইন শেয়ার করা তথা মূল্যবান জিনিসগুলোকে মূল্যহীন করার অভ্যাস না করাই মনে হয় শ্রেয়। তার বদলে পবিত্র কালিমাটা পবিত্র হয়ে নিজ মুখে ঐ সংখ্যকবার পাঠ করুন। অনেক সাওয়াব পাবেন।

আমার স্বল্প জ্ঞানে যা পারলাম লিখলাম। তবে অনলাইনে আরো অনেক জ্ঞানী লোক আছেন। আমার লেখাতে কোনো ভুল-ত্রুটি হলে অবশ্যই তা জানাবেন। আর কিছু জানার থাকলে মন্তব্য করবেন।

আর প্রয়োজন মনে করলে শেয়ার করুন। ৪০ দিনের ভিতর ভালো বা খারাপ খবর পাবেন কিনা তা বলতে পারব না। কারণ, এটা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে আল্লাহ বেঁচে রাখলে ৪০ দিনের মধ্যে আরো কিছু টিউন দিতে পারব ইনশাল্লাহ।

ফেইসবুকে আমি: Sandpiper Mehedee

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভালো লিখেছেন ভাই

জেনে বুঝে ইসলাম পালান করা শ্রেয়, এতে সওয়াব না হক গুনাহ হবে না। আপনার টিউন টা সত্যি সময় উপযোগী। খুব ভালো লিখছেন, আশা করি অনেকের মনের ভ্রান্ত ধারনা গুলো পালটে যাবে।

এডমিনের কাছে বিনীত অনুরোধ, এটা একটা সচেতনতামূলক প্রতিবেদন। তাই এটাকে প্রতিবেদন বিভাগেই রাখা হোক।

khub sundor vabe bujhiesen vai, dhonnobad.

অনেক আগের কথা মনে করিয়ে দিলেন, আমি শুনেছি এগুলো নাকী স্বর্নকারেরা স্বর্নের দাম বাড়ানোর জন্য এমনটি করে থাকে, LoL

ভালো, তথ্যবহুল টিউন। এর থেকে সবাই যদি ৪০দিন রেগুলার নামাজ পড়ে নামাজী হইতো!