LHC প্রজেক্টঃ ডেকে আনবে কি পৃথিবীর ধ্বংস নাকি সমাধান করবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য(আপডেটেড + মেগা টিউন)

পৃ্থিবী।আমাদের বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ।এরকম আরো গ্রহ এবং সূর্য নামের নক্ষত্র নিয়ে গঠিত আমাদের এ সৌরজগত।এছাড়াও মাহাকাশে রয়েছে ছায়াপথ,নিহারীকা,গ্রহাণু আরো কত কি!!!
আর এ সব কিছু নিয়েই গঠিত হয়েছে এ মহাবিশ্ব।কিন্তু এর সৃষ্টি সম্পর্কে যে তত্ত্ব সর্বাধিক প্রচলিত তা হল বিগব্যাং(Bigbang) যা সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশী জানি।এখন কথা হচ্ছে এই তত্ত্ব কতটুকু সঠিক।হ্যাঁ,এই তত্ত্বের সঠিকতা বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির আসল রহস্য সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই আর এর জন্য তারা করে চলেছেন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর তাদের গবেষণার সুবিধার্থে তারা তৈরি করেছেন বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি।তারই ফলশ্রুতিতে তারা এমনই একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছেন যার সংক্ষিপ্ত নাম LHC.এর মাধ্যমে এবার পৃথিবী সৃষ্টির আসল রহস্য এবং প্রক্রিয়া এবং সর্বাপেক্ষা পেছনের সময়,যতটুকু পর্যন্ত আমাদের জানার পরিসীমায় রয়েছে তারও পেছনের সময়ের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

LHC কি: LHC একটি সংক্ষিপ্ত নাম যার পূর্ণ অভিব্যক্তি হল Large Hadron Collider.এটি পৃথিবীর সর্ববৃহত মেশীন যার ওজন ৩৮০০০ টন এবং দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার।এটি একটি বৃত্তাকার টানেল বা সুড়ঙ্গ যা সুইডেন এবং ফ্রান্সের সীমান্ত বরাবর ১০০ মিটার মাটির নিচে অবস্থিত।এই প্রজেক্টটি পরিচালনা করছে ইউরোপীয় নিউক্লিয়ার গবেষনা প্রতিষ্ঠান CERN(European Council for Nuclear Research) আর এর পেছনে কাজ করছে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী,প্রকৌশলী এবং বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন,এই মহাবিশ্ব উদ্ভব হয়েছে বিগব্যাং এর মাধ্যমে এবং তখন থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমাগত ঠান্ডা হতে হতে তা শক্তি নিঃসরন করে চলেছে।তাদের মনে করা ধারনাকে সুনিশ্চিত করার জন্য তৈরি হল LHC.

LHC প্রজেক্টে মূলত তিনটি অংশ আছে
কোলাইডারঃএটি একটি টানেল যার মধ্য দিয়ে দুটি রশ্মি প্রবাহিত হবে।(এ সম্পর্কে একটু পরেই আলোচনা করা হবে
ডিটেক্টরঃ টানেলের চার কোণায় চারটি ডিটেক্টর যুক্ত থাকবে।
্রীডঃ এটি হল বিশ্বব্যাপী একটি কম্পিউটার নেটয়ার্ক যার মাধ্যমে ডিটেক্টর কতৃক রেকর্ডকৃ্ত ডাটা প্রসেসিং করা হবে।
LHC প্রজেক্টের মাধ্যমে উচ্চগতিসম্পন্ন পারমানবিক কণাগুলোর মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ ঘটানো হবে আর এর ফলে উতপাদিত হবে অতি উচ্চ শক্তি।সংঘর্ষের মাত্রা যত বেশি হবে শক্তির পরিমানও তত বেশী হবে এবং ততই পেছনের সময়ের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।LHC প্রজেক্টের আগেও এর মতই আরো কিছু প্রজেক্ট নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করেছিলেন তবে এবার যে পরিমান শক্তির উদ্ভব হবে তার মাত্রা হবে আগের অন্যান্য প্রজেক্টের থেকে ৭গুন বেশী।
আসুন এবার জেনে নিই LHC কীভাবে কাজ করবে।আগেই বলেছি,LHC একটি টানেল বা সুড়ঙ্গ।অসংখ্য পারমানবিক কণার সমন্বয়ে গঠিত দুটি রশ্মিকে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে পরস্পর বিপরীত দিক থেকে চালনা করা হবে অতি উচ্চ গতিতে।সময়ের সাথে এই গতি বাড়তে থাকবে আর যখনই গতি সর্বোচ্চ হবে তখনই এই বিপরীত দিক থেকে আসা এই রশ্মি দুটির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে অর্থাত এই রশ্মি দুটিতে অবস্থিত কণাগুলো পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।  এ ধরণের সংঘর্ষের ফলে পারমাণবিক কণাগুলো ভেঙ্গে আরো অসংখ্য নতুন কণার সৃষ্টি হবে।টানেলের চারটি পয়েন্টে চারটি ডিটেক্টর সেট করা থাকবে।এগুলো সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট কণার গতি,প্রকৃ্তি,সংখ্যা এবং সংঘর্ষ পরবর্তী সৃষ্ট কণার বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি ফোকাস করবে।এ ধরণের এক একটি ডিটেক্টর লক্ষ লক্ষ কণার সংঘর্ষ ফোকাস করতে সক্ষম।আর এ সংঘর্ষের ফলে যে বিপুল পরিমান শক্তি উতপন্ন হবে,তার উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের মৌলিক গঠন এবং ঐ সময়ে মহাবিশ্ব সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।শক্তির পরিমান যত বেশি হবে,ততই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কিত অতীতের তথ্য জানতে পারা যাবে।


এটি টানেলের বহির্ভাগ(উপরে)।




এটি টানলের ভিতরের ছবি (উপরে) ।
উল্লেখ্য,২০১২ সালে LHC প্রজেক্টটিতে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাটি চালাবেন।এর আগে ২০০৮ সালে একবার এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিলো কিন্তু টানেলের অভ্যন্তরীন কিছু সমস্যার কারণে ঐ পরীক্ষাটি তখনই স্থগিত করা হয়।
LHCপ্রজেক্টের মাধ্যমে যে সকল বিষয় জানতে পারা যাবে
১)পৃথিবী সৃষ্টির প্রকৃ্ত রহস্য
২)বিগব্যাং এ প্রকৃ্তপক্ষে কি হয়েছিল
৩)পারমাণবিক কণার ভর সম্পর্কিত তথ্য
৪)মৌলিক উপাদান যা দিয়ে পৃথিবী তৈরি
এই LHC প্রজেক্ট পৃথিবীবাসীকে করেছে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন।কেউ কেউ মনে করছেন এই প্রজেক্টে দুটি রশ্মির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে যে পরিমান শক্তির উদ্ভব হবে তার ফলে পৃথিবীর মাঝেই সৃষ্টি হবে আরেকটি মহাবিশ্ব এবং এই মহাবিশ্বের মতই পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে বড় হবে।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন যে,তারা এই প্রজেক্টের মাধ্যমে খুবই কম সময়ের জন্য বিগব্যাং এর সময়ের শক্তি এবং সে সময়ের অবস্থা সষ্টি করবেন তবে তা বিগব্যাং এর মুহুর্তকে সৃষ্টি করার মত যথেষ্ট নয়।সুতরাং মহাবিশ্ব সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

LHC প্রজেক্টটি মাটির নিচে করা পরিচালনা হবে বলে অনেকেই সন্দেহ করছেন যে,CERN কোনো গোপণীয় পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে।এই ব্যাপারে CERN এর অভিমত এই যে,ভূপৃষ্ঠের শিলা প্রাকৃ্তিক শীল্ড হিসেবে কাজ করে যার ফলে বিভিন্ন প্রাকৃ্তিক বিকিরণ থেকে ডিটেক্টরগুলো নিরাপদ দূরত্বে থাকবে।ফলে এই সকল বিকিরণের সাথে পারমাণবিক কণার সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট বিকিরণের উপরিপাতন হবে না।ফলে ডিটেক্টর কতৃক ধারণ করা ডাটার মান ভুল থাকার কোনো সম্ভাবনাও থাকবে না।তাই এই প্রজেক্টটি মাটির নিচেই চালনা করা হবে।
আরেকটি প্রশ্ন যা সবার মনেই জাগে তা হল,এই প্রজেক্টের মাধ্যমে যে উচ্চ শক্তির সৃষ্টি হবে তা কতটুকু ভয়াবহ এবং কোনো ত্রুটি হলে তা কতটা বিপজ্জনক হবে।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বলেন,LHC খুবই উচ্চ শক্তি সৃষ্টি করবে কিন্তু তার পরিমান খুবই কম।এতে দুটি রশ্মির সংঘর্ষের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে প্রচুর পরিমান উচ্চ শক্তির কণা সৃষ্টি হবে।কিন্তু ডিটেক্টরের মাধ্যমে সব কণার গতিকেই নির্দিষ্ট সময় পরে থামিয়ে দেয়া হবে।তবে পরীক্ষা পরিচালনায় কোনো ত্রুটি হলে তাতে LHC মেশীনের নিজেরই ক্ষতি পারে।যেহেতু রশ্মির কণাগুলো খুবই উচ্চশক্তিসম্পন্ন ফলে রশ্মির গতিশক্তি এবং LHC এর ম্যাগনেটিক সিষ্টেমকে বিচ্যুত করার ক্ষমতা এর আছে।তবে সিষ্টেমের বাইরে ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তারা জানিয়েছেন।
তবে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সবার মনে ভীতির সৃষ্টি করে তা হল,LHC প্রজেক্টের ফলে পৃথিবীর ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে কিনা।আগেই বলেছি কোলাইডারে লক্ষ লক্ষ পারমাণবিক কণার সংঘর্ষ ঘটানো হবে।এর ফলে কোলাইডারের ভেতরে ব্ল্যাক হোল বা কৃশ্নগহবরের সৃষ্টি হবে।আর এই গহবরের ভেতরে উদ্ভব হবে মহাশক্তির।আর এর ফলে সৃষ্টি হবে বিগ ব্যাং এর সময়ের তাপ।এই তাপ দিয়ে বিগ ব্যাং এর সময়ের তাতক্ষনিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।এই তাপ চার ট্রিলিয়ন (৪০০০০০০০০০০০০) ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেশী হবে যা আমাদের চেনা মহাবিশ্বে এর আগে কখনো তৈরি হয়নি।যেহেতু,এর ভেতরে ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি হবে সুতরা স্বাভাবিকভাবেই এর মাধ্যাকর্ষণ বল হবে কল্পনার চেয়েও বেশী।আর এর সাথে রয়েছে প্রচুর তাপ।এই বিরূপ পরিস্থিত কোলাইডার নামের এই সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।যা পৃথিবীর জন্য হূমকি স্বরূপ।হয়ত ব্ল্যাক হোল তার মাধ্যাকর্ষণ বলের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীকেই তার কেন্দ্রে টেনে আনবে। যদিও বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে আশ্বস্তের বানীই শোনাচ্ছেন।সর্বোপরি বলতে গেলে, এ ব্যাপারে সন্দেহ সবার মনেই থেকেই যাচ্ছে।

Level 0

আমি MITHU। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 88 টি টিউন ও 1232 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

খুবই ভালো হয়েছে, চালিয়ে জান…….

    Level 0

    ধন্যবাদ উতসাহিত করার জন্য

নতুন তথ্য জানলাম।
ধন্যবাদ।

    Level 0

    আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাহ! ইদানিং টেকটিউনসে আবার মানসম্মত টিউন আসা শুরু হয়েছে। খুব ভাল লাগছে ব্যাপারটা।

ভাল টিউন ধন্যবাদ,
আমাদেরও আশা ও প্রত্যাশা বিজ্ঞানের আরো আরো উন্নতি সাধিত হোক,
কারন বিজ্ঞান যতই উন্নতি সাধন করবে মানুষ তত বেশী আল্লাহ ও পবিত্র ক্বোরানকে বুঝতে সক্ষম হবে।

    Level 0

    আপনাকেও ধন্যবাদ।

চমৎকার…প্রিয়তে……টিটি যেন আমার প্রান ফিরে আসছে……….

Level 0

ধন্যবাদ।

থ্যাঙ্কু…….চমৎকার…..মজা………আল্লাহ হাফেয.

Comments are closed.