পৃথিবীর নতুন সপ্তাশ্চার্য গুলো! আফসোস করবেন এখনও না জেনে থাকলে

টিউন বিভাগ প্রতিবেদন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 7
২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা

প্রিয় টিউন পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালোই আছেন। বহুদিন আপনাদের জন্য টিউন নিয়ে আশাকরি ভালো লাগবে। ঝটপট মন দিয়ে পড়ে ফেলুন টিউনটি। চলুন শুরূ করা যাক।

বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চার্য এমন একটি প্রকল্প যার উদ্দেশ্য বিশ্বের নতুন বিস্ময় আবিষ্কার করে জনসম্মুখ্যে উল্লেখ করা। তারা ভোটের মাধ্যমে সাতটি জায়গা নিশ্চিত করে যা বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চার্য হিসেবে বিকশিত হয়। এগুলোর নাম ও বিস্তারিত আজ আমরা জানবো। চলুন টিউনের মুল টপিকে চলে যাই।

বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চার্য গুলো নিম্নরুপঃ

১.চিচেন ইৎজাঃ

চিচেন ইৎজা একটি মায়ান শহরের নাম যা মেক্সিকানের ইউকাটান উপদ্বীপে অবস্থিত। এটি তিনুম পৌরসভায় অবস্থিত যা মায়া সভ্যতার উত্তরাংশে অবস্থিত নিম্নভুমীর প্রধান কেন্দ্র ছিলো। সত্যি কথা বলেতে এটি বর্তমানে একটি আকর্ষণীয় পর্যটক স্থান এবং এমন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যা সারা বিশ্বের নিকট অতি পরিচিত।

ইউরোপের উপনিবেশদের আগমনের আগে মায়ান জনগণের সংস্কৃতি এবং কৃতিত্ব ছিলো চমৎকার। আর এটাকে আরো আকর্ষণীয় করতে এই অঞ্চলটিতে এখনও প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার হচ্ছে। প্রায় ১৯৮৮ সালে চিচেন ইৎজা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো এবং পরে ২০০৭ সালে চিচেন ইৎজা নতুন সেভেন ওয়ান্ডার্সের একটি হিসাবে জায়গা করে নেয়।

আধুনিক যুগের রিসর্ট শহর হিসেবে পরিচিত ক্যানকুন থেকে আনুমানিক ১২০ মাইল দুরে চিচেন ইতজা অবস্থিত যা মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপের আওতাভুক্ত। চিচেন ইৎজা নামটি মায়ান সভ্যতার ইটজার কূপের মুখ থেকে এসেছে।

অবশ্য এটি একটি মায়ান ভাষার শব্দ। অপরদিকে ইৎজা হলো মায়ানদের একটি নৃগোষ্ঠীর নাম যারা এই উপদ্বীপের উত্তর অংশে মায়া সভ্যতার বিকাশের সময় ক্ষমতার শীর্ষে পৌছেছিল বিজ্ঞানিদের মতে চিচেন ইৎজা মায়ানদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে বিকশিত এক স্থান যা এখন সবার আকর্ষনীয় ভ্রমনস্থল।

বেশ কিছু বিবরণ দেখে বলা যায় যে পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কালে এ মায়ান শহরটির প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে বেশ কিছু ঐতিহাসিকদের ধারণা এ স্থাপনাগুলি ঐ সময়ের কয়েক বছর পরে নির্মাণ করা হয়েছে। এই সময়কালে চিচেন ইৎজা মায়ান সভ্যতার বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে একটি ছিলো বলে জানা যায়।

চিচেন ইৎজা মায়ান সভ্যতার অতি পরিচিত একটী নিদর্শন। এ স্থানটি আজও পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। চিচেন ইৎজা উত্তর প্রান্তে অবস্থিত একটি বৃহৎ কূপ রয়েছে যার নাম মায়ান ভাষায় চেনোট। এখান থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উদ্ধার করা হয়।

এ স্থানে একটি গুজব প্রচলিত ছিলো যা হলো এই স্থানে মানুষ কারণ ছাড়াই আত্মহত্যা করে। এই কুপটি আনুমানিক ১৯০০ দশকের দিকে খোড়া হয়েছিল। এটাকে গুজব বলার কারণ এই কুপ থেকে যেসব কংকাল পাওয়া গেছে তা নিয়ে গবেষণা করে জানা গেছে এদেরকে হত্যা করা হয়েছিলো।

বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে পাওয়া যায় প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ পর্যটক মায়া সভ্যতার আর্কিটেকচারাল আশ্চর্য নিদর্শনগুলি আবিষ্কার করতে যায়। মায়ানের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে চিচেন ইৎজা পরিভ্রমণ করেন। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সবসময়ই জায়গাটিতে কাজ করে চলেছেন নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়।

২.স্ট্যাচু অব ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারঃ

বিশ্বের সপ্তাশ্চার্য গুলোর মধ্যে স্ট্যাচু অব ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার একটি। এটি ব্রাজিলের একটি স্থান রিওডি জেনিরোতে অবস্থিত। এটি যিশুখ্রিস্টেরই একটি মূর্তি। যেটাকে বিশ্বের বৃহত্তম আর্ট ডেকো মূর্তি হিসেবে পরিচিতি দেওয়া হয়।

পাহাড়ের চূড়ায় দাড়িয়ে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে অবস্থান করছে এই মূর্তিটি। যিশুর এই মূর্তি রিওডি জেনিরো শহরকে যেন আলিঙ্গন করছে। এই মূর্তিটির প্রকৃত নাম ‌দেওয়া হয়েছে স্ট্যাচু অব ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার। বিশ্বের প্রায় সব মানুষের কাছেই মূর্তিটা পরিচিত অর্থাৎ এই ভাস্কর্যটি অচেনা বা অজানা আছে এমন ব্যক্তি কমই পাওয়া যায়। ব্রাজিল বিশ্বের বুকে বিখ্যাত একটি দেশ।

বাংলাদেশের ব্রাজিলের ভক্তদের অভাব হবে না। কারণ তাদের ফুটবল খেলা, সাম্বা নৃত্য ও আমাজন বন এবং সেই সাথে রয়েছে একটি বৃহৎ আকার ভাস্কর্য স্ট্যাচু অব ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার। যারা ব্রাজিলের ফুটবলের সাথে অত্যন্ত পরিচিত তারা স্ট্যাচু অব ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের সাথেও পরিচিত। ব্রাজিলের পরিচিতি এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে আরো বিকশিত হয়েছে।

এউ মূর্তিটি স্তম্ভের ভিত্তি ৮ মিটার বা ২৬ ফুট ও ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট লম্বা এবং তার দুই পাশের প্রসারিত হাত গুলোর দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট। ব্রাজিলে একটি বন রয়েছে যার নাম তিজুকা ফরেস্ট যা ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এবং শহরকে আড়াল করে রাখা ২৩৪০ ফুট উচ্চতার কর্কোভাদো পাহড়ের চূড়ায় এটি অবস্থিত।

এই মুর্তিটি ব্রাজিলিয় খ্রিষ্টধর্মের একটি নিদর্শন যা রিওডি জেনিরোতে অবস্থিত এবং ব্রাজিলের জন্য একটি সংস্কৃতিও বটে। ইস্পাতশলাকা জল ব্যবহার করে দৃঢ়ীভূত কংক্রিট ও সোয়াপস্টনে বা সাজিমাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে এই মূর্তিটি।

এটি বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চর্য গুলোর মধ্যে একটি। এই মূর্তি টি যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত তার নাম কর্কোভাদো। এই পাহাড়ের উচ্চতা ২৩৪০ ফুট। পল ল্যান্ডোস্কি নামক এক আর্কিটেক্টকে মূর্তিটি তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় আনুমানিক ১৯২১ সালের দিকে। উদ্দেশ্যটা কিছুটা এই রকম ছিলো যে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের প্রথম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি মূর্তি বানানো যাক।

১৯৩১ সালে প্রায় দশ বছর পর শেষ হয় এই মূর্তিটির নির্মাণকাজ। মূর্তিটির গাঠনিক উপাদান ছিলো গ্রানাই। এই মূর্তিটি যে বেদীর ওপর স্থাপিত তারই উচ্চতা ২০ ফুট ছিলো। পাহাড় আর পানি দিয়ে ঘেরাও করা এই জায়গাটি যা রিও ডি জেনিরো শহরের সবচেয়ে দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

স্ট্যাচু অব ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এত বিশাল যে সাধারণ কোন ক্যামেরা দিয়ে এর ছবি তোলা সম্ভব নয়। বহু ফোটো গ্রাফার পাহাড়ের বিভিন্ন চুড়া থেকে এর পরিপূর্ণ ছবি তুলতে ব্যার্থ হয়েছে।

৩.চীনের মহাপ্রাচীরঃ

পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চীনের মহাপ্রাচীর। আমি একটা আর্টিকেলে পরেছি যে চীনের মহাপ্রাচীরই পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকে দেখা যায়। এই প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২৭৬ কিলো মিটার। তবে এই প্রাচীরের কিছু শাখা দেয়াল রয়েছে। এগুলো যোগ করলে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ৮৮৫২ কিলোমিটার।

যেহেতু চীনের মহাপ্রাচীর তাই এর একটা চাইনিজ নাম আছে আর তা হলো চাংছ্যাং যার অর্থ হলো লম্বা দেয়াল। এই দেয়ালের বয়স ২৩০০ বছর যা অনেকটাই পুরোনো। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, কিন সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট এই মহাপ্রাচীরটি নির্মাণ করেছিলেন। এই কথাটা আসলে পুরোপুরি সত্য নয়।

বিশেষজ্ঞ দের মতে, ঝাউ সাম্রাজ্যের শুরুতে চীনের মহাপ্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সম্রাট ঝাউ। খ্রিস্টের জন্মের পুর্বে ৮ম শতাব্দীতে এই কাজ শুরু হয় যা বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে আসল কাজ শেষ হয় কিন সাম্রাজ্যের সম্রাটের হাতেই। ২০৬ খ্রীস্টপূর্ব থেকে ২২০ খ্রীষ্টাব্দ সময়কালে এই প্রাচীর আরো দীর্ঘ করা হয়।

পরবর্তীতে মিং সাম্রাজ্যের সময়ে এই মহাপ্রাচীর মেরামত করা হয়। এই প্রাচীরের আধুনিক রূপের প্রকাশ এই সময়েই ঘটে। তাইতো এই দেয়ালকে মিং-এর দেয়াল বলেও চেনে। ধারণা করা হয় এক মিলিয়নের অধিক শ্রমিক বিপুল পরিমান সময় নিয়ে এই প্রাচীর নির্মাণ করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে এই প্রাচীর তৈরীর সময় অনেক শ্রমিকই মারা গেছে এবং তাদেরকে সে স্থানেই দাফন করা হয়েছে।

এই প্রাচীরের মূল উদ্দেশ্য বাইরের আক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে হেফাজত করা। এমন একটা সময়কাল ছিলো যে সময় মঙ্গলীয়রা খুবই আক্রমণাত্মক জাতি ছিলো। তারা বিভিন্ন সাম্রাজ্য জয় করার জন্য একটা বাহিনী গঠন করে যা তীরন্দাজ বাহিনী হিসেবে পরিচিত। যাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা একেবারে প্রায় অসম্ভব ছিলো।

মূলত তাদের থামাতেই এই মহাপ্রাচীরের আবির্ভাব। কারণ কিন সি হিউয়াং এর ইচ্ছা তার উত্তরাঞ্চলের সাম্রাজ্য শত্রু মুক্ত থাকুক। এজন্যই হাজার হাজার সৈন্য পাহাড়া দেয় এই প্রাচীর এর উপরে। বাইরের গতিবিধীর উপর নজর রাখতে এই প্রাচীরে সৈন্য থাকত সবসময়।

এই প্রাচীরটিতে রয়েছে বিভিন্ন টাওয়ার। যেখানে সেনারা পাহারা দেয় এবং আরো আছে সেনাদের জন্য বাসস্থাল। মিং সাম্রাজ্যের সময় আনুমানিক ১০ লক্ষ সৈনিক এই মহাপ্রাচীরটিতে পাহারা দিতো। সত্যিকথা বললে এটি ছিলো তাদের সামরিক প্রতিরক্ষার শিল্ড।

বেইজিং এর দিকে থাকা প্রাচীরের একটি অংশ রয়েছে। যেখানে পর্যটকদের যাওয়া আসার ব্যাবস্থা রয়েছে। একমাত্র সেই অংশ টুকুই ঠিক আছে। প্রাচীরের অন্যান্য অংশ ধ্বংসের শঙ্কায় আছে।

বর্তমানে প্রাচীরের প্রায় ২০০০ কিলোমিটার ক্ষয়ক্ষতির শিকার। এর মূল কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও প্রাচীরটি টিকিয়ে রাখার জন্য চীনের সরকারের চেস্টার কোন কমতি নেই। মহাপ্রাচীরের সুরক্ষার জন্য আইন ও প্রনয়ণ করেছে।

চীনের মহাপ্রাচীর দর্শনের জন্য অগনিত মানুষ সেখানে ভীড় জমায় প্রতিদিন। সবচেয়ে বেশি ভীড় হয় বেডেলিং নামক মহাপ্রাচীরের এক অংশে। সময়কাল ২০০১ এ এখানে এই অংশে প্রায় ৬ কোটি মানুষ ভীর জমায়। এই প্রাচীর ঘুরতে আসার সময়ে ভ্রমণ পিপাসুদের সংখ্যা দিনে ৭০ হাজারও ছাড়িয়ে যায়।

৪.মাচু পিচুঃ

আমাদের পৃথিবীটা এমন যে এর সৌন্দর্যের কোন অভাব নেই। আমাদের এ পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের উদাহরণ অসংখ্য। ঠিক একই রকম মানব সৃষ্ট সৌন্দর্য্য এর সংখ্যাও কম নয়। তবে এসব দর্শনীয় স্থান গুলোর অধিকাংশই প্রাচীন মানুষদের তৈরি করা। মাচু পিচ্চু অসাধারণ সৌন্দর্যের লীলাভুমি যা প্রাচিন মানুষের সৃষ্টি এবং পেরুতে অবস্থিত।

স্পেনীয় উচ্চারণ হিসেবে শহরটির নাম মাচু পিচু। কিন্তু অনেকেই এর নাম উচ্চাররণ করেন মাচু পিকচু। এর একটা অর্থ আছে যা হল পুরানো চূড়া। সত্যি কথা বলতে এটা বেশ প্রাচীন একটা শহর। এমন একটা প্রাচীন শহর কলম্বাসের আমেরিকা।
তবে এই শহর আবিষ্কারেরও আগের শহর এই মাচু পিচু।

সমুদ্র সমতল থেকে এই শহরটির উচ্চতা প্রায় ২.৪ কিলোমিটার বা ৭৮৭৫ ফিট। পেরুতে উরুবাম্বা  নামক এক উপত্যকা রয়েছে। এর উপরে পর্বত চূড়ায় এটি অবস্থিত। ধারণা করা যায় যে মাচু পিচু ইনকা শাসকদের রাজকীয় পবিত্র শহর।

অধিকাংশ পুরাতত্ববিদ ধারণায়, মাচু পিচুকে পাচাকুতিক নামক ইনকা রাজার শাসন আমলে সৃষ্ঠি করা হয়েছে। আনুমানিক ষোল শতাব্দীর দিকে স্প্যানিশরা ইনকা সভ্যতা আক্রমণ করে। ফলে কাকতালীয়ভাবে এই শহরটি জনগন শুন্য হয়ে পরে। স্পেনীয়দের এ আক্রমণ এর পর আরো চারশ বছর কেটে যায়। এই চারশ বছর এই ধ্বংশ হয়ে যাওয়া শহরটি লুকিয়ে ছিল পৃথিবীর সকল মানুষদের কাছে থেকে।

একসময় ১৯১১ সালে আমেরিকান আর্কিওলজিস্ট বা পুরাতত্ববিদ হিরাম বিংহাম এটির প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এখানে অসাধারণ কিছু দুর্গ ছিলো যা সম্পর্কে শুধু সেই এলাকার আশে পাশের বাস করা কিছু কৃষকরাই জানতো।

বর্তমানে এই মাচু পিচু শহরটি এমন একটা শহর যা ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত শহর হিসেবে পরিচিত। সময়কাল ১৯৮১ তে এই শহরটিকে পেরুর সংরক্ষিত শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো শহরটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলোর তালিকা ভুক্ত করে। আর আধুনিক সময়কালে এটি বিশ্বের নতুন সাত আশ্চর্যের একটি।

মাচুপিচু একটা প্রাচীন স্থাপত্য বিদ্যার নিদর্শন বহন করে। এ জায়গার স্থাপনাগুলোর দেয়াল পাথর তৈরি। মজার বিষয় হলো সিমেন্ট বা চুন সুরকির মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়নি এখান কার স্থাপনা গুলো তৈরি করতে। তাদের এই সৃষ্টির কৌশলকে বলা হয়ে থাকে অ্যাশলার। সে সময়ে এ কৌশলে তারা ছিলো বেশ দক্ষ। এই পদ্ধতিতে পাথরের খন্ড ক খুব নিখুতভাবে কেটে স্থাপন করা হতো। তারপর তাদের ইটের মতো করে যেটা যেখানে বসে সেখানে বসিয়ে দেয়া হত। ফলে এর মাঝখানে সিমেন্ট এর প্রয়োজন হতো না। তবে তাদের স্থাপনার পাথরের ফাকে একটা পাতলা ছুরির ফলাও ঢুকতো না। তাহলে ভেবে দেখুন তাদের তৈরি স্থাপনা কতটা সুনিপুণ হতো।

পেরুতে খুব বেশি ভূমিকম্প হয়। আমরা যে সিমেন্ট ব্যবহার করি তার ব্যবহার থাকলে স্থাপনাগুলো টিকার কথা না। কিন্তু পাথরের অসম্ভব অ্যাশলার কৌশল এর কারণে মাচুপিচুর এই স্থাপনাগুলো অনেকটাই ভূমিকম্প প্রতিরোধী। এই কারনেই মাচু পিচুর স্থাপনা গুলো গত ৪০০ বছরের ভুমিকম্পের পরেও টিকে আছে।

ইনকা সভ্যতায় চাকার ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় নি। বিষয়টা একটু আশ্চর্যের। তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে তারা চাকার ব্যবহার কখনোই করেনি। কিন্তু সম্রাজে এত বিশাল বিশাল পাথরের স্থাপত্য রয়েছে যেগুলো স্থানান্তর করেছে কিভাবে এই বিষয়টাই একটা রহস্য।

তবে মনে করা হয় এই পাথরগুলো পাহাড়ের সমতল জায়গা দিয়ে ঠেলে ঠেলে উপরে তোলা হয়েছে বা দড়ি দিয়ে বেধে অনেকে টেনে উপরে তোলা হয়েছে। হয়তো তারা এ কাজে ব্যবহার করেছিল অসংখ্য শ্রমিক। কিছু কিছু পাথরের পৃষ্ঠে হাতলের মতো একটা কিছু দেখতে পাওয়া যায়। এমনটা বলাই যায় যে এই হাতল গুলো ব্যবহার করেই পাথরগুলো নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হয়েছে। তারপর কাজ শেষে হাতল গুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

শহরটিতে ১৪০ টি স্থাপনা রয়েছে। এর কিছু কিছু মন্দির আর কিছু আবাসিক ভবন রয়েছে। এখানে ১ টি সিঁড়ি রয়েছে যা গ্রানাইট এ তৈরি। এছারাও আরো ১০০ টির বেশি সিরি রয়েছে। এখানে প্রচুর পরিমাণে ঝরনার রয়েছে যা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। এখানে সূর্য মন্দির রয়েছে যা ইনকা জনগণের জন্য।

যাতায়াত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ইনকারা মাচু পিচু পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। চলতি সময়ে হাজার হাজার পর্যটক এই পথেই পায়ে হেঁটে মাচু পিচু পরিভ্রমণ করে থাকেন। ২০০০ সালে এ শহরে ভ্রমণ কারীর সংখ্যা ছিলো প্রায় চার লাখ এর মতো।

অতিরিক্ত পর্যটকের চলাফেরার কারণে অনেকেই এ শহরের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। এরকম শহরগুলো আমাদের বিশ্ব ঐতিহ্য যা সংরক্ষণে আমাদের যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়া উচিত।

৫.পেত্রা নগরীঃ

প্রাচীনকাল থেকেই লোহিত সাগর এবং মৃত সাগরের মধ্যে অবস্থিত এই সুপরিচিত জয়াগা বা শহর রয়েছে। এই কাফেলা শহরটি আরব, মিশর ও সিরিয়ার মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ চৌরাস্তার মতো দেখতে ছিল। আর এই জায়গাটার নাম হলো পেত্রা নগরী।

পেত্রা নগরী পুরোটা নির্মিত হয়নি এবং অর্ধেক শিলার খোদাই করা পাথরে তৈরি। তাছাড়া এর প্যাসেজগুলি এবং স্তম্ভগুলো পাহাড় দ্বারা ঘেড়া। এটি বিশ্বের অন্যতম একটি প্রাচীন নিদর্শন। এই শহরটার নাকি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহি হেলেনিস্টিক স্থাপত্যের সাথে অনেকটা মিল রয়েছে।

পেত্রা একটা গ্রীক নাম বা শব্দ। সম্ভাবনা আছে যে এই নামটি বাইবেল থেকে সেলা শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। পেটোলিথিক ও নিওলিথিক সময়ে কিছু অবশিষ্টাংশ যা আবিষ্কৃত হয়নি তা পরে পেত্রায় আবিষ্কৃত হয়েছে। জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সালের দিকে একটি জাতি অঞ্চলটি প্রথম দখল করে যাদের নাম নাকি ইদোমাইট ছিলো।

শত শত বছর পরে নবাটাইন নামে একটি আরব উপজাতিকে এখানে দেখা যায় এবং এই সময়েই এখানে রাজ্যের রাজধানী গড়ে তোলে হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সময়কালে এই অঞ্চলটি সেলুসিড নামক এক বাহিনীর দ্বারা আক্রামনের শিকার হয় এবং তারা শহর দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে জানা যায়।

পেত্রা মশলা ব্যবসার জন্য বিখ্যাত কেন্দ্র হিসাবে সমৃদ্ধ হয়েছিল যা নবাইটাইন দের শাসন আমলে হয়েছিলো। এই সময়কালেই মিশর, গ্রীস, চীন এবং ভারত এই রাজ্যের সাথে ব্যাবসায়িক দিক দিয়ে জড়িয়ে পরে। সে সময় কালে এ শহরের জনসংখ্যা ছিলো ১০০০০- ৩০০০০ এর মধ্যে উন্নীত হয়েছিল যা ঐতিহাসিকরা ধারণা মাত্র।

১০৬ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে রোমানরা নবাটাইনদের আক্রমণ করে। ফলে রোমানদের কাছে নবাটাইরা পরাজিত হয়। তখন পেত্রা আরবে রোমান প্রদেশের অংশ হয়ে উঠে। এই কারনেই নাবাটাইন বাণিজ্যের ক্ষতি হয় বা পতন ঘটে।

যখন ৫৫১ সাল তখন ভূমিকম্পের কারণে প্রাচীন এ শহরটি প্রচুর ক্ষতি হয়। তখন থেকেই এখনে বসতির কিছু স্থান নষ্ট হয়ে যায়। সপ্তম শতাব্দী সময়কালে এখানে ইসলামী আক্রমণ ঘটে।

ক্রুসেডের পরে এই শহরটি পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এটি হারিয়ে যায় অর্থাৎ অজানা ছিলো যে এখানে একটি নগরী আছে। পরে ১৮১২ সালের দিকে সুইস ভ্রমণকারী জোহান লুডভিগ বার্কাডর্ট এটি খুঁজে পান।

জেরুজালেমের ব্রিটিশ স্কুল অফ আর্কিওলজি এর পক্ষ থেকে ১৯৫৮ সাল থেকে পেত্রা নগরীতে খনন কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তীকালে আমেরিকান সেন্টার অফ ওরিয়েন্টাল রিসার্চ পেত্রার প্রত্নতত্ত্ব উদ্ধারে ব্যাপকভাবে নিজ খরচে চেষ্টা চালান।

ধ্বংসাবশেষ থেকে সাধারণত সিক নামে পরিচিত সরু ঘাট যা পূর্ব থেকে আগত একটি রাস্তাকে নির্দেশ করে। এই ঘাট খুঁজে পাওয়া যায়। সিক থেকে প্রথম দেখা সাইটের মধ্যে খাজনা ট্রেজারি উল্লেখযোগ্য। এটি আসলে একটি বিশাল সমাধি। আলডেয়ার পেত্রার অন্যতম বিখ্যাত রক-কাট স্মৃতিস্তম্ভ।

শোনা যায় এটি একটি অসম্পূর্ণ সমাধির সম্মুখভাগ যেটা বাইজেন্টাইন সময়ে গির্জা হিসাবে পরিচিত ছিলো। কোরবানির জন্য হাই প্লেস নামে একটি নিদর্শন দেখা পাওয়া যায় যা বাইবেলের সময়কাল থেকে কাল্টিক বেদি পর্যন্ত একটি সংরক্ষিত সাইট ছিলো। প্রাচীন শহরের জনগনকে সহযোগিতার জন্য এর বাসিন্দারা বাঁধ, শিলা-খোদাই করা জলের চ্যানেল, জলাশয় এবং সিরামিক পাইপ সহ একটি বৃহৎ জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়।

১৯৯৩ সাল সময়কালে শুরু হওয়া খননকার্যে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির এবং স্মৃতিসৌধ আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীন শহরের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের বিষয়টিকে বিস্তারিত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে এ বিষয়গুলো ভুমিকা রাখে। বর্তমান সময়কালে এ ঐতিহ্য গুলো ধ্বংসাবস্থা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সত্যি কথা বলতে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভীর স্মৃতিস্তম্ভকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।

১৯৮৫ সাল সময়কালে পেত্রা নগরী ইউনেস্কোর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে নির্বাচিত হয়। ২০১৬ সাল সময়কালে স্যাটেলাইট চিত্র থেকে এবং সেই সাথে ড্রোন ব্যবহার করে একটি খুবই বৃহৎ এবং আগে আবিষ্কার হয়নি এমন একটি স্মৃতিসৌধের কাঠামো প্রত্নতাত্ত্বিক গন আবিষ্কার করেছিলেন। মনে করা হয় এর শুরুটা হয়েছিলো প্রায় ১৫০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালে। অর্থাৎ যখন নবাতিয়ানরা তাদের জন সাধারনের জন্য বাসস্থান নির্মাণ কার্যক্রম চালায়।

সত্যিকথা বলতে পেত্রা একটা প্রাচীন ইতিহাস। আর এর ইতিহাস আরো প্রাচীন। তাই এ সম্পর্কে যা কথা তা কিছুটা অস্পষ্ট। এর ভৌগলিক গুরুত্ব বিবেচনা করে পেত্রাকে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে মানা হয়। এর গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০৭ সালে পেত্রাকে নতুন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য এর অন্যতম একটি হিসেবে গন্য করা হয়।

৬.কলোসিয়ামঃ

রোম সাম্রাজ্যের কালজয়ী নিদর্শন হিসেবে পরিচিত এই কলোসিয়াম। ইতালিতে অবস্থিত রোম শহরকে বলা হয় চির শান্তির নগরী। আশ্চর্য একটা বিষয় এ নগরীতে রয়েছে গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ। আর সেই সাথে রোমান সাম্রাজ্যে টিকে থাকার লড়াইয়ের প্রতীক ও রক্তাক্ত লড়াইয়ের মঞ্চ কলোসিয়াম।

সত্যি কথা বলতে কলোসিয়াম প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের এক আশ্চর্য নিদর্শন। সেই সাথে রোমানরা যে কতটা হিংস্র আর নির্মাণশৈলী তারও এক অনন্য নিদর্শন এই কলোসিয়াম যা টিকে আছে শত শত বছর ধরে। সময়কাল ১৯৯০ এ ইউনেস্কো কলোসিয়ামকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হিসেবে নির্বাচিত করে। এটি পৃথিবীতে নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি বলে গণ্য হয় ২০০৭ সালে।

কলোসিয়াম একটি উপবৃত্তাকার ছাদবিহীন মঞ্চ যা ইতালির রোম শহরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যে নির্মিত মঞ্চকে সে সময় কালের শাসকরা গ্লাডিয়েটরসদের মাঝে লড়াইয়ের প্রতিযোগিতার প্রদর্শনীর কাজে ব্যবহার করত। রোমান সম্রাজের সবচেয়ে বড় স্থাপনা এই কলোসিয়াম। এটি নির্মাণের গাঠনিক উপাদান পাথর এবং কংক্রিট।

প্রায় ১৮ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই কলোসিয়াম মঞ্চ। কলোসিয়াম এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ মিটার এবং প্রস্থ ১৫৬ মিটার। এর প্রবেশদারের কথা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। কারণ এর দরজার সংখ্যা ৮০ টি। প্রায় পঞ্চাশ হাজার দর্শক এই গ্যালারিতে বসে যুদ্ধ দেখতে পারত সেই সময়কালে। রোমান সম্রাজের সময়কালে সে এলাকার নাগরিকেরা বিনামুল্যে সেখানে প্রবেশ করতে পারত।

এত দর্শক ধারণ কারী এই মঞ্চের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ৭০-৭২ খিস্টাব্দ সময়কালে। এ সময় ফ্লেবিয়ন সাম্রাজ্যের শাসক ভেসপাসিয়ানের রাজত্ব চলছিল। শোনা যায় ভেসপাসিয়ান এটি রোমান সাম্রাজ্যের মানুষদের জন্য বানিয়েছিলেন। আসল উদ্দেশ্য ছিলো ফ্লেবিয়ন সাম্রাজ্যের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। তাছাড়াও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য একটা মঞ্চ স্থাপন এবং সেই সাথে স্থাপত্যবিদ্যায় রোমানদের দক্ষতা প্রদর্শন। কিন্তু তার সময় কালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় নি।

ভেসপাসিয়ানের মৃত্যু হয়। তারপর তার অবশিষ্ট কাজে দায়িত্ব নেন তার পুত্র টাইটাস। তার মাধ্যমেই মঞ্চটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রায় দশ বছর লেগেছিলো এটি নির্মাণ করতে। ষাট হাজার ইহুদি দাসকে কাজে লাগিয়ে ৮০ খ্রিস্টাব্দে কলোসিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ করেন টাইটাস। তারপর এর একটি অফিসিয়ালি নাম দেয়া হয় যা হলো ফ্লেবিয়ন অ্যাম্পিথিয়েটর। তারপর তিনি এটাকে জনগনের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

এটার উদ্ভাবনের সময় থেকে ১০০ দিনব্যাপী এক উৎসবের আয়োজন করা হয় সেখানে। এই উৎসবের সাথে সাথে আয়োজন করা হয় গ্লাডিয়েটরসদের মধ্যে মল্লযুদ্ধ। এখানে বিভিন্ন ধরনের পশুর লড়াই ও দেখা যেত বলে শোনা যায়। পরবর্তীতে চারশ বছর এটি রোমানদের লড়াই এর রক্তাক্ত মঞ্চ হিসেবে কুখ্যাত।

Colosseum By Dennis Jarvis Source is Flickr is licenced under (CC BY-SA 2.0)

কলোসিয়ামে এক বিশেষ খেলার আয়োজন হতো রাজার নির্দেশে। এই খেলার সমস্ত অর্থ বহন করতেন রোমান সম্রাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হতো হাজার হাজার হাতি, গন্ডার ও সিংহ। এখানে ভালুকের সঙ্গে হাতি বা হাতির সঙ্গে বুনো মহিষ বা গন্ডার এর সঙ্গে হাতির লড়াই দেখতে আসত রোমানের অসংখ্য লোক।

কারো জন্য যেটা উৎসব সেটাই আবার কারো জন্য জীবন মৃত্যু খেলা। এখানে রোমান সম্রাট এবং রোমান অধিবাসীরা উৎসব করত পশু প্রাণীগুলোর জীবন-মৃত্যু খেলা দেখে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এখানকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৯০০০ পশুর প্রাণ গিয়েছে।

দীর্ঘদিন পশুর লড়াই দেখার পর রোমান সম্রাট টাইটাস বিরক্ত হয়ে এ খেলা বাদ দেন। এই বিষয়টি বাদ দিয়ে তিনি এর চেয়ে ঘৃনিত একটি বিষয় চিন্তা করেন তা হলো মানুষের মানুষের লড়াই। ফলে সুচনা ঘটে মৃত্যুর এক বীভৎস কাহিনীর।

এই এই খেলার শুরুর দিকে যুদ্ধবন্দীদের লড়াই হতো। যতক্ষণ না দুইজনের একজনের মৃত্যু হতো ততক্ষণ পর্যন্ত চলত এই ভয়াণক লড়াই। এর কিছু সময় কাল পর শুরু হয় গ্ল্যাডিয়েটরসদের লড়াইয়ের। গ্ল্যাডিয়াস শব্দের অর্থ খাটো তরবারী। এ তরবারীর সাহায্যে যারা লড়াই করে তাদের বলে গ্ল্যাডিয়েটর।

রোমান সম্রাজ্যে গ্লাডিয়েটররা ছিল সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাদের থাকত না কোন সামাজিক মর্যাদা। তাদেরকে চাকরের মতো ব্যবহার করা হতো আর ব্যবহার করা হতো এ ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের গ্যালারিতে। এই মরণপণ লড়াই একজন আহত হলেই উল্লাসে মেতে উঠতো পুরো কলোসিয়াম।

ক্ষত বিক্ষত মৃত্যু ভয়ে ভীত গ্ল্যাডিয়েটর রেওয়াজ অনুযায়ী হাত তুলে সম্রাটের দয়া প্রার্থনা করত বা প্রাণভিক্ষা চাইত। যা সম্রাটের মেজাজের ওপর নির্ভর করতো। বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত না রক্ত ঝরেছে তার চেয়ে শত গুন বেশি রক্ত ঝরেছে রোমের কলোসিয়াম এর এক মুষ্টি মাটিতে।

একসময় রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয় আর তারপরে আঠারো শতক সময়কাল পর্যন্ত কলোসিয়াম অবহেলিত ও পরিত্যক্ত ছিল। অনেক বেশি সময় অবহেলার কারণে এর অধিকাংশ অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত। তারপরেও এই কালজয়ী ইতিহাসের কারণে ইতালির সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট এটি। কলোসিয়াম দেখার জন্য প্রতিবছর হাজারো মানুষ ভিড় জমায় ইতালিতে।

কলোসিয়াম এর নাম পূর্বে কলোসিয়াম ছিল না। অন্যকিছু বলে ডাকা হতো। সে বিষয়টা এখনো স্পষ্ট নয়। রোমের মাঝে অবস্থিত বিশাল অ্যাম্ফিথিয়েটারটি তৈরি করা হয়েছিল বিজয়ী রোমান সৈন্যদের পুরস্কৃত করার জন্য। রোম সাম্রাজ্যের নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরার জন্য। সেইসময়ের দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য ওই কলোসিয়ামের মঞ্চে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকান্ড এবং খেলাধুলো সম্পর্কে আজকাল ছায়াছবিতে এবং ইতিহাসের বইপত্রে উল্লেখ করা হয়।

৭.তাজমহলঃ

তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি যা মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম এর জন্য তৈরি করেছিলেন। এটি তার বিয়ের আগের নাম। যিনি মমতাজ মহল নামে অধিক পরিচিত। ইনি সম্রাট শাজাহানের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন। শাজাহানের ১৪ তম সন্তান দানের সময় মৃত্যু বরণ করেন তিনি। তার স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব নিদর্শন নির্মাণ করেন। ১৬৩২ সালে সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল। ২১ বছর পর অর্থাৎ ১৬৫৩ সালে এটি সম্পূর্ণ হয়।

এটি ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রাতে অবস্থিত একটি স্থাপত্য। উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৭১ মি বা ৫৬১ ফুট। এটি স্থপতি উস্তাদ আহমেদ লাহৌরি। ত্রিশ লাখের ও অধিক পর্যটক এটি পরিদর্শন করেন।

তাজমহলকে কখন কখনো শুধু তাজ নামে ডাকা হতো। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আশ্চর্য নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়। তাজমহলের নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে বলে জানা যায়। মুমতাজ মহলের আসল সমাধিতে ক্যালিগ্রাফিক শিলা লিপি হিসেবে আল্লাহর ৯৯টি নাম লেখা রয়েছে।

তাজমহল নির্মান করতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে কাজে লাগানো হয় প্রায় একহাজার হাতি যা অনেকটা আশ্চর্যের। এটিতে ২৮ প্রকার মুল্যবান রত্নের দেখা পাওয়া যায়। দিন ও রাতের বিভিন্ন আবহাওয়ার এর রং পালটায় যা একে আরো আকর্ষণীয় করেছে। এটার কপ্লেক্সে প্রচুর কোরআনের আয়াতের দেখা পাওয়া যায়।

শাহজাহান কালো মার্বেল ব্যবহার করে আরো একটি তাজমহল বানাতে চেয়েছিলে। কিন্তু তার ছেলেদের কারণে বানাতে পারে নি। তাজমহলেরও প্রতিলিপি আছে। এগুলো হলো মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদে গড়ে তোলা বিবি কা মাকবারা। এছাড়াও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত তাজমহল। তবে আগ্রার তাজমহলের মতো চোখধাঁধানো নয় এই প্রতিলিপি গুলো।

তবে বাংলাদেশের তাজমহল নিয়ে ভারত সরকার অভিযোগ জানলেও উপযুক্ত কারনের জন্য এটা গুরুত্ব পায়নি। কারণ ছিলো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাই তাদের ভারতে গিয়ে তাজমহল দেখা সম্ভব নয়। তাই এটা নির্মাণ করা হয়। এত কিছুর পরেও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতির রাজকীয় সমাধিটিই বেশি বিকশিত।

সত্যি কথা বলতে তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য যা বোঝা একটু মুশকিল। ১৯৮৩ সময়কালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে তাজমহল কে। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম একটি হলো তাজমহল। একসময় একে বলা হতো বিশ্ব ঐতিহ্যের সর্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ঠকর্ম।

তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে জোসস দিয়ে আমাকে টিউন করতে আমাকে উৎসাহিত করবে। মন্তব্য থাকলে অবশ্যই টিউমেন্ট করে আমাকে জানবেন। শীঘ্রই আমি আপনাদের জন্য আরেকটি টিউন নিয়ে আসবো। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Level 7

আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

প্রিয় ট্রাসটেড টিউনার,

আপনার টিউনটি ‘টেকটিউনস ক্যাশ’ এর জন্য প্রসেস হতে পারছে না।

কারণ:

টিউনের শিরোনাম টিউনের সাথে প্রাসঙ্গিক, আকর্ষণীয়, ইউনিক, ইউজার এনগেজিং ও Catchy হয়নি।

করণীয়:

টিউনের বর্তমান শিরোনামটি পরিবর্তন করে টিউনের শিরোনাম ও টিউনের থাম্বনেইলের শিরোনাম হিসেবে নিচে উল্লেখিত শিরোনামটি সেট করুন:

‘পৃথিবীর নতুন সপ্তাশ্চার্য গুলো! আফসোস করবেন এখনও না জেনে থাকলে’

টেকটিউনস টিউনার হিসেবে গতানুগতিক টিউনের শিরোনাম বা টাইটেল দেওয়া যায় না। টিউনের শিরোনাম অবশ্যই আকর্ষণীয়, ইউনিক ও Catchy টিউনের শিরোনাম বা টাইটেল তৈরি করতে হয়।

আপনার পরবর্তি টিউন গুলোতে যেন এই একই ভুল না হয় সে দিক পূর্ণ সতর্ক থাকুন।

উপরের নির্দেশিত সংশোধন করে এই টিউমেন্টের রিপ্লাই দিন।

খেয়াল করুন, এই টিউমেন্টের রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করে রিপ্লাই না করে টিউনে টিউমেন্ট করলে তার নোটিফিশেন ‘টেকটিউনস কন্টেন্ট অপস’ টিম পাবে না। তাই অবশ্যই এই টিউমেন্টের রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করে রিপ্লাই করুন।

দারুন লিখেছেন