ইন্টারন্যাশনাল লিনিয়ার কোলাইডার বা আইএলসি -১!

কঠিন কথা আসলেই কঠিন। তাই বলে কঠিন জিনিসের জন্য মানুষ বসে থাকে না কখনো।তাকে সহজভাবে বুঝার চেস্টা করে এগিয়ে নিয়ে যায় নতুনের দিকে। বিজ্ঞানীরা অনেক বিষয়েই এড়িয়ে যান, এমন না যে তিনিতা জানেননা, কিন্তু ব্যাপারটা হলো এমন যে জিনিসটা জানলেও এটা কতটুকু সত্য সেটা সম্পর্কে সন্দিহান। জীবনটাকে অনেকে একটা পাজলের মতো বর্ণনা করেন, আসলেই জীবনটা একটা বড় গোলক ধাধা। আর এই ধাধার উত্তর কিন্তু আছে মানুষের কাছে। তবু মানুষ পারে না এসব ধাধার উত্তর দিতে কারন মানবজাতী খুবই কনফিউজড। সে সত্যের কাছে এসেও দেখা যায় দিশেহারা।

সেদিন এক বালকের সাথে দেখা যায়। তুখোড় বলবো না, তবে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে সে ৪র্থ অর্ডার সিমলটেনিয়াস ইকোয়েশনের সলভ করতে পারে, রেসিডিউ দিয়ে কন্ট্যুরের ব্যাখ্যা দিতে পারে।আমি অবশ্য এখনও ওতে কাচা। তার সাথে বসেছিলাম লিনিয়ার আর ননলিনিয়ার ওয়ার্ল্ডের ক্যারেকটারিস্টিকস নিয়ে কথা বলতে। অনেকটা এমন যে আমি নিজেই গিয়েছি জানতে ওর কাছে।
ওর ধরনাটা ছিলো অনেকটা এরকম: আমাদের পৃথিবীটা মোটেও লিনিয়ার ওয়ার্ল্ডের মধ্যে পরে না, তাই এখানকার ডাইমেনশন গুলো খুব বেশী চেন্জ্ঞ হয়। আর চেন্জ্ঞের সাথে সামন্জস্য রেখেই আমাদের গ্রোথ গুলো ডিপেন্ড করছে! ট্রানজিশনে যদি কেউ পড়ে হকিং যেটা বলে গেছেন, যে জীবিত বস্তুর জন্য ওখানে বেচে থাকা মূলত অসম্ভব হয়ে যাবে।
তবে এখানে মূল বিষয় হচ্ছে এ বিশ্বটাকে সামগ্রীকভাবে যদি একটা ইকোয়েশনে দেখানো যেতে পারে তাহলে বোঝা যেতো আসলেই এই মহাবিশ্ব কতটুকু স্ট্যাবল আর যেহেতু এটা ননলিনিয়ার সেহেতু এটার বক্রতা কত! তবে এই বক্রতা আর আলোর বক্রতা নিয়ে কনফিউজড হবার কোনো উপায় নেই!

তখন আমার মনে হলো যদি বিগ ব্যাং এর পূর্ব থেকে চিন্তা করা যায়, এবং ধরে নেয়া যায় তখন সব কিছু লিনিয়ারলীই ঘটবে, সেখানে তাহলে একটা জীবিত বস্তুর অবস্হা হবে অনেকটা গ্রোথহীন অথবা অপরিবর্তনশীল!আমাদের বর্তমান অবস্হায় গতি বলতে সময়ের সাথে পরিবর্তনকেই বুঝি নিউটনীয় বিশ্বে। সেখানে ঐ অবস্হায় তখন একটা জীবিত বস্তুর অনুভূতি বলতে কিছুই থাকবে না আশা করা যায়!

হঠাত করে মনে হলো এসব কথা গুলো আসলেই অতটা বিশ্বাস যোগ্য নয় কারন অধিকাংশ এ্যাজম্পশনই ধারনার উপর হতে পারে বা হবে হয়তো টাইপ!
তবে আশার কথা হলো এখন সারা বিশ্বই পড়ে আছে লার্জ হেড্রন কোলাইডার আর ইন্টারন্যাশনাল লিনিয়ার কোলাইডারের দিকে।সবাই উৎসুক হয়ে আছে এর দ্বারা সম্পাদিত পরীক্ষার উপাত্তগত দিক গুলো জানার জন্য! আসলে কি আছে এটার মধ্যে যার জন্য সবাই তাকিয়ে আছে:

১) নতুন করে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সাথে পরিচয় হওয়া:

এর প্রথম কাজটা হবে নতুন কিছু নয় বরং পুরোনো ধারনাগুলোকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা।এই কোলাইডারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমানে প্রয়োজনীয় চার্জ এবং শক্তি সম্পন্ন মৌলিক কণার (উদহরন স্বরূপ নির্দিস্ট পরিমাণের দশা সম্বিলিত কোয়ার্ক পার সেকেন্ড) উৎপাদন করা এবং তারপর এগুলোকে পর্যবেক্ষন করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষার যার মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্ত গুলো নানা যাচাই বাছাইয়ের পর উদাহরন হিসেবে রাখা হবে।এই মেশিনের লক্ষ্য শুধুই পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে না বরংচ এমনকিছু বেন্ঞ্চমার্ক প্যারামিটারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যার মাধ্যমে বোঝা যাবে আসলেই নতুন কোনো মাত্রা (ডাইমেনশন) বা নতুন কোনো মৌলিক ইউনিটের প্রয়োজন আছে কিনা!

২) দুর্বলতড়িৎ সিমেট্রির ভঙ্গুরতার কারন সমূহ নির্নয়:

এই কোলাইডার প্রথমে হিগস বোসনকে পর্যবেক্ষন করবে এবং এর প্রোপার্টিজগুলোকে প্রাকটিক্যালি নির্ণয় করে প্রচলিত থিওরীর সাথে মিলিয়ে দেখা হবে।হিগস বোসন হচ্ছে এক ধরনের হাইপোথ্যটিক্যল পার্টিক্যাল যেটা দিয়ে ভরহীন ফোটন আর অপেক্ষাকৃত বড় ডব্লিউ এবং জেড বোসনের মধ্যকার পার্থক্যকে ব্যাখ্যা করা যায়!ডাব্লিউ আর জেড বোসন পার্টিক্যালই মূলত দুর্বল তড়ীৎশক্তির জন্য দায়ী বলে ধরে নেয়া হয়!
এই কোলাইডার মূলত যে প্রশ্নটা খুজবে সেটা হলো হিগস পার্টিক্যাল কি শুধুমাত্র ডাব্লিউ এবং জেড পার্টিক্যালের ভরের জন্য দায়ী নাকি কোয়ার্ক আর লেপটনের জন্যও সমভাবে এর ব্যাখ্যাগুলো প্রযোজ্য?

৩) প্রকৃতিতে বিদ্যমান নতুন মৌলিক শক্তির খোজে:

নির্দিস্ট পরিমান বলসম্পন্ন নতুন পার্টিক্যাল যেগুলো আনবিক বিন্যাস বা সংঘর্ষের উপজাত হিসেবে তৈরী হয়, সেগুলো খুব দ্রুত ক্ষয় হতে হতে ইলেক্ট্রন এবং অন্যান্য এ্যান্টিম্যাটার পার্টিক্যাল পজিট্রনে রূপ নেয়!এরকম বল সমূহ প্রকৃতিতে নতুন কোনো বল বা শক্তির সিম্যাট্রীর খোজ দিতে পারে এবং পদার্থবিদেরা হয়তো খুজে পেতে পারে কোনো এক একীভূত চিন্তার মিথস্ক্রীয়া!

৪) উপহার দিতে পারে ডার্ক ম্যাটার প্রতিযোগী:

এসবগুলো পর্যবেক্ষনই করা হবে সেই সব নিরপেক্ষ স্হির কণাসমূহকে ঘিরে যেগুলোর সৃস্টি কৃত্রিম ভাবে ঘটানো কোনো এক উচ্চ শক্তির সংঘর্ষের মাধ্যমে, যার ফলে হয়তোবা জানা যাবে এস্ট্রোনমির সবচেয়ে বড় পাজল বিগ ব্যাং এর পর পরই আসলে কি হয়েছিলো, যেটা মূলত ব্যাখ্যা করা হয়েছে আপাতত প্রথম তিন মিনিটের পর!

৫) সর্বোপরি: আবিস্কার!:

এই কোলাইডারে সম্পাদিত পরীক্সাগুলোর মাধ্যমে খুজে বের করা যাবে লুকায়িত সেই স্হান-কাল ডাইমেনশনের মিথসমূহ যার জন্য লেখা হয়েছে হাজার গল্প অথবা দেখা হয়েছে কত না স্বপ্ন! অথবা নতুন শক্তিশালী অন্য কোনোমিথস্ক্রিয়া (যেখানে হয়তো বা কেউ হাতের কাছে গড়ে তুলবে কোনো শক্তিশালী ব্লাক হোল) অথবা সুপার সিমেট্রি অথবা এমন কিছু যা প্রত্যাশীত নয় মানে কল্পবিজ্ঞানের বাস্তব উদাহরন!
এখন গঠন নিয়ে কিছু কথা বলা যায়:

এলএইচসি বা লার্জ হেড্রন কোলাইডার হলো ইন্টারন্যশনাল লিনিয়ার কোলাইডারের উত্তরসুরী যেখানে মূলত একটা সুযোগ বা জায়গা করে দেয়া হয়েছে ইলেক্ট্রন আর পজিট্রনের প্রচন্ড সংঘর্ষ নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষন চাক্ষুসভাবে!এই আইএলসি ডিজাইনে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটা হলো ১১.৩ কিলোমিটার বিস্তৃত বিশাল দুটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর যেটার মধ্যে প্রচন্ড শক্তিশালী ইলেক্ট্রিক ফিল্ড ব্যাবহার করার সুবিধা রয়েছে এবং এটার মাধ্যমে পার্টিক্যালগুলোকে একটা ক্যাভীটি বা বায়ূশুন্য স্ট্রিং আকৃতির চেম্বারের মাধ্যমে ত্বরনায়িত করা চালিত করা হবে।এই ক্যাভিটি গুলো মূলত তৈরী এক মিটার লম্বা নিওবিয়ামের মেটাল (সংকেত Nb এবং এর এ্যাটমিক নম্বর হলো ৪১) যা দেখতে অনেকগুলো ছোট ছোট চেম্বারের এর মতো যেটা অনেকটা ছোট বলের আকৃতির এবং এর মধ্যে অনেকগুলো ছিদ্রের মতো করে গর্ত করা।যখন খুব নিম্ন তাপমাত্রায় এই চেম্বারগুলোকে ঠান্ডা করা হয়, তখন এগুলো সুপার কন্ডাক্টরের মতো কাজ করে এবং তখন বেশ শক্তিশালী ইলেক্ট্রিক ফিল্ডের সৃস্টি হয় যেটা দরকার মূলত ইলেক্ট্রন আর পজিট্রন কনাগলোকে ত্বরনায়িত করার জন্য!

চলবে...

Level 0

আমি অশ্রুগুলো রিনকে দেয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 104 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

ছেলেটি পথে নেমেছিলো একদিন নীল মায়ার হাতছানিতে। নিঃসঙ্গতায় হেটে যেতে আবিস্কার করে নিঃশব্দ চাদ তার একান্ত সঙ্গী। এখন সে হাতড়ে বেড়ায় পুরোনো সুখস্মৃতি, ঘোলা চোখে খুজে ফেরে একটি হাসি মুখ!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ফিচারটা একটু ভিন্ন ধরনের কিন্তু খুবই ভাল লাগল । দয়া করে এধরনের লেখা চাই এ সাইটে ।

এটা সিরিজ আকারে সময় নিয়ে একটু ডীপে গিয়ে লিখতে থাকবো! তবে ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং কমেন্টের জন্য!

ত ভালোই লাগল পড়ে….. আরো লিখেন..

অনেক ধর্য্য নিয়ে লেখাটা পড়লাম । অন্যরকম একটা লেখা। চালিয়ে যান আরও লিখুন। গ্রেইট।।

আসলে আমার লেখাগুলো সবগুলোই অতি বোরিং এবং দুর্বোধ্য বাক্যের গঠন ব্যাবহারের জন্য কখনোই সুখপাঠ্য নয়, তবে চেস্টা করে যাচ্ছি আরো সরল এবং আরো বেশী ব্যাখ্যা সহকারে লিখতে তাহলে হয়তো “সবার জন্য পদার্থবিজ্ঞান” এই কথাটার সফল প্রতিফলন ঘটবে! ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য!

খুবই ভাল । আমি দুইটা ফিচার পড়লাম । ভাল লাগলো । আরো জানতে চাই এ বিষয়ে