ইলেক্ট্রনিক কারের সুবিধা অসুবিধা এবং ভবিষ্যৎ

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে। কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।

প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা সকল ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি নতুন নতুন সুযোগ৷ সেই সাথে প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি শিল্পেও, তৈরি হচ্ছে ইলেক্ট্রিক কার এবং গবেষণা চলছে ড্রাইভারলেস কার নিয়ে।

ইলেক্ট্রনিক কার এখন যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর আগে কখনো এমনটি ছিল না। বিভিন্ন দেশের রাস্তা গুলোতে প্রতিদিন ইলেকট্রনিক কারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ক্রমাগত ভাবে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। আর এই কারণেই মানুষ এসব গাড়ির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং গাড়ি গুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে।

ইলেক্ট্রনিক কার গুলোর যেমন প্রচুর সুবিধা রয়েছে তেমনি রয়েছে বেশ কিছু অসুবিধা আর আজকের টিউনে আমরা এই বিষয় গুলো নিয়েই কথা বলব।

ইলেক্ট্রনিক কারের সুবিধা

গতানুগতিক গাড়ি গুলোর জন্য আমরা যেমন বায়ু দূষণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, ঠিক তেমনি এই সমস্যা গুলোর সমাধান করতে পারে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রযুক্তি। চলুন প্রথমে ইলেক্ট্রনিক কারের সুবিধা গুলো জেনে নিই,

১. পরিবেশের জন্য উপযুক্ত

ইলেক্ট্রনিক গাড়ি গুলোতে কোন গ্যাস বা পেট্রোল ইঞ্জিন থাকে না ফলে সেগুলো পরিবেশের জন্য হুমকি নয়। গ্যাস বা পেট্রোল ব্যবহৃত হয় না বলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন রেট থাকে শূন্যের ঘরে।

বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি মোটর এবং ব্যাটারি দিয়ে তৈরি চালনার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় যা পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়।

সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে ইলেকট্রনিক কার পরিবেশের জন্য নিরাপদ এবং এজন্যই এখন মানুষ বৈদ্যুতিক যানগুলিতে সুইচ করছে।

২. শব্দ দূষণ হয় না

আপনি নিজের চোখ দিয়ে না দেখার আগে কোন বৈদ্যুতিক গাড়ির অস্তিত্ব টের পাবেন না। গাড়ি গুলো খুব কম শব্দ ব্যবহার করে চালিত হয় কখনো কখনো কোন ধরনের শব্দই হয় না।

মজার ব্যাপার হল Tesla এবং Xpeng এর মত কোম্পানি গুলো তাদের কিছু গাড়িতে ফেক নয়েজ ফিচার রাখে, যাতে করে রাস্তায় চলাচল করা মানুষ বুঝতে পারে আশেপাশে কোন গাড়ি রয়েছে।

৩. সস্তা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ

গতানুগতিক গাড়ি গুলোর যেখানে অনেক ধরনের ইঞ্জিন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি থাকে, ইলেকট্রনিক কার গুলোতে সেগুলো থাকে না ফলে মেইনটেইন খরচ কম লাগে।

তাছাড়া ইঞ্জিন চালিত গাড়ি গুলোর মত ঘন ঘন মেইনটেইনের প্রয়োজন হয় না। সব মিলিয়ে ট্র্যাডিশনাল গাড়ি থেকে ইলেকট্রনিক গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম হয়।

৩. গাড়ির ভেতরে বাড়তি স্পেস

ইঞ্জিন চালিত গাড়ি গুলোর মত অধিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না বলে ইলেকট্রনিক গাড়ি গুলোতে অনেক স্পেস থাকে।

বেশিরভাগ ইলেক্ট্রনিক কার গুলোতেই প্যাসেঞ্জার কম্পার্টমেন্টে lithium-ion ব্যাটারি ইন্সটল করা হয়।

৪. যাতায়াত খরচ

রিপোর্ট বলছে আমেরিকানরা ইঞ্জিন চালিত গাড়িতে প্রতি মাইল ভ্রমণের জন্য ১৫ সেন্ট করে প্রদান করে, যেখানে ইলেকট্রনিক কারে দিতে হয় এর একতৃতীয়াংশ।

বলা যায় প্রযুক্তি উন্নত হবার সাথে সাথে এই খরচ আরও কমে আসবে। তাছাড়া অধিকাংশ গাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা হচ্ছে যাতে বিদ্যুৎ খরচও কমে আসবে।

৫. সরকারী সুবিধা

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশের সরকার জনগণকে, ইলেকট্রনিক কার গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে ট্যাক্স ক্রেডিট এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রধান করছে।

জানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সরকার ৭৫০০ ডলার অবধি ফেডারেল ট্যাক্স ক্রেডিট দিচ্ছে এবং যদি আপনি ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা হন তবে অতিরিক্ত ১৫০০ ডলার পাবেন।

৬. দ্রুত গতি বাড়ানোর ক্ষমতা

বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে, ইঞ্জিন চালিত গাড়িগুলোর চেয়ে আরও দ্রুত গতি বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। এর মানে হচ্ছে ইলেকট্রনিক কার গুলোতে চালক খুব দ্রুত গাড়ির স্পীড বাড়াতে পারে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি উচ্চতর টর্ক উত্পাদন করে। এবং এই উচ্চ টর্কটি তাত্ক্ষণিকভাবে চাকার কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে, যা এটিকে পেট্রোল চালিত গাড়ির চেয়ে দ্রুত গতি বাড়ানোর ক্ষমতা দেয়। এগুলি ছাড়া, বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক গাড়িগুলিতে একটি সিঙ্গেল স্পীড ট্রান্সমিশন রয়েছে যা বিস্তৃত আরপিএমের জন্য কাজ করে এবং
দ্রুত গতি বাড়াতে সাহায্য করে।

ইলেকট্রনিক কারের অসুবিধা

সুবিধা থাকার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে ইলেকট্রনিক গাড়িতে। চলুন অসুবিধা গুলো দেখে নেয়া যাক,

১. চার্জিং এ অধিক সময়

ইলেকট্রনিক গাড়ি গুলো স্ট্যান্ডার্ড চার্জার দিয়ে বাসায় চার্জ করতে প্রায় ১০ ঘণ্টার মত সময় লাগে। যদিও ফাস্ট DC চার্জার দিয়ে আপনি স্টেশন থেকে ৬০ থেকে ৯০ মিনিটে ফুল চার্জ করতে পারবেন।

অন্যদিকে গ্যাস বা পেট্রোল চালিত গাড়ি গুলো কয়েক মিনিটেই রিফিল করে নেয়া যায়। তাছাড়া ইলেকট্রনিক গাড়ি স্টেশন থেকে চার্জ দিতে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।

২. রেঞ্জ নিয়ে চিন্তা

ইলেক্ট্রনিক গাড়ি গুলোর অন্যতম একটা অসুবিধা হচ্ছে আপনি চাইলে একবার চার্জ দিয়ে অজানায় হারিয়ে যেতে পারবেন না। যদিও Tesla এর Model S এবং Model 3 এর রেঞ্জ মোটামুটি দীর্ঘ তারপরেও অধিকাংশ কোম্পানির উচিৎ তাদের গাড়ির রেঞ্জও বাড়ানো।

বেশিরভাগ কোম্পানি গুলোর গাড়ির রেঞ্জ কম থাকে বলে ক্রেতারা দুরের যাতায়াতের জন্য এসব গাড়ি কিনতে ভয় পায়।

৩. চার্জিং স্টেশন অবকাঠামোর অভাব

এখনো ইলেকট্রনিক কারের চার্জিং স্টেশন সব জায়গায় এভেইলেবল না। যদিও প্রায় সকল জায়গায় স্টেশন স্থাপনের কাজ চলতে তারপরেও এটি করতে সময় লাগবে।

যেসকল দেশে ইলেকট্রনিক গাড়ির চার্জিং অবকাঠামো এখনো তৈরি হয় নি স্বাভাবিকভাবেই সে সমস্ত দেশের কেউ ইলেকট্রনিক কার কিনবে না। প্রকৃতপক্ষে ইলেক্ট্রনিক গাড়ি সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আগে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন তৈরি করতে হবে।

৪. অধিক ব্যয়বহুল

ইলেকট্রনিক গাড়ি গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হলেও, গাড়ি গুলো কিনতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে ইলেকট্রনিক কারের দাম ৩০০০০ ডলার থেকে ৪০, ০০০ ডলার পর্যন্ত। প্রিমিয়াম গাড়ি গুলোর দাম ক্ষেত্র-বিশেষে আরও বেশি। অন্যদিকে ১৫০০০ থেকে ২০০০০ ডলারের মধ্যে ভাল গ্যাস চালিত গাড়ি কেনা যায়।

ইলেকট্রনিক গাড়ী গুলোর দাম বেশি হবার প্রধান কারণ এর ব্যাটারি। ব্যাটারি প্রযুক্তিতে আরও উন্নতি করা গেলে আশা করা যায়, গাড়ি গুলোর দাম আরও কমিয়ে আনা যাবে।

৫. ব্যাটারির ক্ষতিকর প্রভাব

আমরা জানি ইলেকট্রনিক গাড়ি গুলোর প্রধান উপাদান হচ্ছে Lithium-ion ব্যাটারি, রিপোর্ট বলছে ব্যাটারি গুলোর মাইনিং প্রক্রিয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোন ধরনের লিক মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে।

ব্যাটারি ছাড়াও অন্য উপাদান গুলোও মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে যদি সেগুলো কোন ভাবে উন্মুক্ত হয়। সুতরাং ইলেক্ট্রিক কার প্রস্তুতে সর্বোচ্চ সেফটি নিশ্চিত করা উচিৎ।

৬. পরোক্ষভাবে পরিবেশের জন্য হুমকি

ইলেক্ট্রিক কার সরাসরি পরিবেশ দূষণ না করলেও পরোক্ষ ভাবে পরিবেশ দূষণের সাথে জড়িত হতে পারে। যখন গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাবে তখন চার্জিং এর জন্য বিদ্যুৎ বেশি প্রয়োজন হবে, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রচুর কয়লা পুড়াতে হবে। আর সেই কয়লা পরিবেশ দূষণ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তবে যদি বিভিন্ন নবায়নযোগ্য উৎস যেমন, পানি, সোলার প্ল্যান্ট, এবং বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা যায় তাহলে কোন সমস্যা নেই।

শেষ কথাঃ

বর্তমানে বড় বড় কোম্পানি গুলো কার্বন নির্গমন রোধে কাজ করছে। ইতিমধ্যে গুগল সহ অনেক কোম্পানি জানিয়েছে আগামী দশ বছরের মধ্যে তারা কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্য হারে কামিয়ে আনবে। কার্বন নির্গমন রোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে ইলেক্ট্রিক গাড়ি।

সব কিছুরই ভাল মন্দ দিক রয়েছে। কিছু অসুবিধা থাকায় মানুষ ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহার করবে না এমনটি নয়, আশা করা যায় প্রযুক্তি এগিয়ে যাবার সাথে সাথে মানুষ ভবিষ্যতে ব্যাপক ভাবে চাইবে ইলেক্ট্রিক কার। যদি গাড়ী গুলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উত্পাদন সম্ভব হয় তাহলে বলা যায় এগুলো মানব জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে।

তো আজকে এই পর্যন্তই, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 487 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 110 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস