হৃদরোগ জানা – অজানা নানা তথ্য

হৃৎপিণ্ড ও তার কাজ: বুকের বাঁ দিকে
সারাক্ষণ ধুক্ ধুক্ করে যে- যন্ত্রটি প্রাণের অস্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছে, তারই নাম হৃৎপিণ্ড। এটি মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হৃৎপিণ্ড একটি পেশিবহুল পাম্প, যার দুই তৃতীয়াংশ থাকে বুকের বাঁ দিকে এবং এক তৃতীয়াংশ বুকের ডান দিকে। হৃৎপিণ্ডের বাঁ প্রকোষ্ঠে বিশুদ্ধ রক্ত এবং ডান প্রকোষ্ঠে দূষিত রক্ত থাকে। হৃৎপিণ্ডের মুখ্য কাজ হল-ডান প্রকোষ্ঠ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে দূষিত রক্ত গ্রহণ করে ফুসফুসে পাঠানো। ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে দূষিত রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং তা হৃৎপিণ্ডের বাঁ প্রকোষ্ঠে পাঠায়। হৃৎপিণ্ড বা প্রকোষ্ঠ থেকে এই বিশুদ্ধ রক্ত ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে সরবরাহ করে।

করোনারি হার্ট ডিজিজ: হৃৎপিণ্ড তার নিজের মাংসপেশিগুলোকে সচল রাখার জন্য যে বিশুদ্ধ রক্ত পায় তা আসে করোনারি আর্টারির মধ্য দিয়ে। যদি কোনও কারণে করোনারি আর্টারি দিয়ে আসা রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়, হৃৎপিণ্ড নিজেই অক্সিজেনস্বল্পতায় ভোগে। এ অবস্থাকেই বলা হয় করোনারি হার্ট ডিজিজ। তীব্রতার প্রকারভেদে করোনারি হার্ট ডিজিজ তিন রকমের-অ্যানজাইনা, ইসকেমিয়া ও ইনফার্কশন। এগুলোর মধ্যে ইনফার্কশনই হচ্ছে তীব্রতম এবং সাধারণভাবে একেই আমরা হার্ট অ্যাটাক বলে থাকি।

কেন হার্ট অ্যাটাক হয়: হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, এই প্রশ্নের সদুত্তর পেতে হলে হার্ট অ্যাটাকের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো জেনে নেওয়া জরুরী:

নিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্কফ্যাক্টর:

০ উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন

০ ডায়াবেটিস ০ ধূমপান

০ রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল।

অনিয়ন্ত্রণযোগ:

০ পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হওয়া

০ বংশগত কারণে

০ বয়সজনিত কারণে।

অন্যান্য:

০ স্থূল দেহ

০ অলসতা

০ মানসিক দুশ্চিš-া

০ স্বভাবজনিত।

হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ: (১) যে কোনও শারীরিক পরিশ্রমে বুকে ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট হওয়া এবং বিশ্রাম নিলে সেরে যাওয়া। (২) বিশ্রামকালেও বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হওয়া, যা তুলনামূলকভাবে খুবই তীব্র। সাধারণত এই ব্যথা বুকের মধ্যভাগে কিংবা বাঁ দিকে হয়ে থাকে। বাঁ হাতের বা গলার দিকে অথবা সমগ্র শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই সময় রোগীর শরীরে ঘাম দেখা দেয়, শ্বাস কষ্ঠ হয় এবং অনেক সময় রোগী বমিও করতে পারেন।

(৩) ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ: বুকের ব্যথা ছাড়াই কেবল শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। অনেক সময় বয়স্ক বা ডায়াবেটিক রোগীদের পেটের উপরিভাগের ব্যথাকে বদহজম বা গ্যাস্ট্রিক ভেবে উপেক্ষা করা হয়, যা আসলে হার্ট অ্যাটাকেরই উপসর্গ। এই উপেক্ষার কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর অনেক লোকের মৃত্যু হয়। (৪) পা ফুলে যাওয়া। (৫) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য, কোনও রকম উপসর্গ ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ ধরনের হার্ট অ্যাটাককে বলা হয় সায়লেন্ট ইনফার্কশন। শেষরাত এবং সকাল ৯টার আগ পর্যš- হার্ট অ্যাটাক হওয়ার হার অনেক বেশি। একে বলা হয় সারকেডিয়ান রিদিম। শেষ রাতের দিকে অনুচক্রিকার রক্ত জমাট করার ক্ষমতা বেশি থাকে এবং এ সময় রক্তে এডরিনালিন ও করটিসোল হরমোনের পরিমাণ দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। এগুলো হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে সহায়ক। তাই শেষ রাতের বা ভোরের দিকের বুক ব্যথাকে অবহেলা করা অনুচিত।

হার্টের রোগীদের জানা উচিত: (১) নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা (২) রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো এড়িয়ে চলা (৩) মাসে একবার হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া এবং তার পরামর্শ মেনে চলা (৪) হার্ট অ্যাটাকের যে কোনও উপসর্গ দেখা দিলে কালক্ষেপণ না করে রোগীকে পরিচিত হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনে ঐ হাসপাতাল থেকে রোগীর নিজের হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা। এরপর চিকিৎসার ভার হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপরই ছেড়ে দেওয়া। মনে রাখতে হবে-হার্ট অ্যাটাক একটি মৃত্যুব্যাধি, ৮-১০% রোগী আধুনিক চিকিৎসাতেও মৃত্যুবরণ করতে পারেন। এই মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ ঘটে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই এবং আরও এক তৃতীয়াংশ হাসপাতালে নেওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে।

হৃদরোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা: পঁয়ত্রিশোর্ধ পুরুষ এবং চল্লিশোর্ধ মহিলারা বছরে একবার হৃদরোগ সংক্রাš- পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করিয়ে নিয়ে হৃদরোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারেন। হৃদপিণ্ড একটি যন্ত্র, যা বিকল হওয়ার আগেই বছরে একবার পিরিওডিক মেইনটেইনেন্স ও চেকআপের দাবি রাখে। কম্প্রিনেসিভ কার্ডিয়াক চেকআপ (সিসিসি) এ ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এছাড়া আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে, যেমন-থ্যালিয়াম স্ক্যান, করোনারি এনজিওগ্রাফি, ডবুটামিন স্ট্রেস ইকো, ট্রান্সএসোফেজিয়াল ইকো। অ্যাডভান্সড হার্ট ডিজিকে করোনারি এনজিওগ্রাফিকে গোল্ড স্টান্ডার্ড ধরা হয়।

হৃদরোগের চিকিৎসা: শারীরিক ও মানসিক অভ্যাসের পরিবর্তন: (১) চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা (২) প্রতিদিন বা সপ্তাহে ৫ দিন ১৫-২৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা (৩) ধূমপান না করা (৪) দুশ্চিš-া না করা।

ওষুধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক বা একাধিক ওষুধ সেবন।

ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিচের পরীক্ষাগগুলো করা; (১) এনজিওগ্রাম (২) এনজিওপ্লাস্টি (৩) পেসমেকার প্রতিস্থাপন (৪) এআইসিডি (৫) ইলেকট্রোফিজিওলজি।

কার্ডিয়াক সার্জারি: (১) সিএবিজি (২) ভাল্ব প্রতিস্থাপন (৩) হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠের দেওয়ালে জন্মগত ছিদ্র থাকলে তা বন্ধ করা (৪) হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন।

Level 0

আমি এএইচ রিপন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

গবেষণাধর্মী পোস্ট। ধন্যবাদ।

Level 0

Hi Ripon vi

This post really Awesome. Can you please inform me : Are you madical student or blogger. You have only BDTravels site or more site. I need some article writer sicence educaton related for my blog site. . like this post. Waiting for respond……………Thanks

http://www.scienceeducationblog.com/

    Hello,

    How are you?
    I am only blogger and I have many website.
    my skype ah.ripon92

    Thank you

Level 0

Thanks Bro. for ur valuable post. carry on.