হ্যাং কি? হ্যাং কেন হয়? হ্যাং হলে করণীয় কি? হ্যাং এর হাত থেকে বাচার উপায়?

আস্-সালামু আলাইকুম। আশা করছি রমজানের এই দিন গুলো আপনার ভালোই কাটছে। এবং দিনগুলো ইবাদাতের মাধ্যমে অতিবাহিত করছেন।

আমি আজ আপনাদেরকে কম্পিউটারের এমন একটি সমস্যার সম্পর্কে আলোচনা করব যা আমরা কম্পিউটার ব্যবহারে প্রতিনিয়ত ফেস করে আসছি। আশা করছি পুরো পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

১। হ্যাং কি?

হ্যাং এমন একটি সমস্যা যা আপনার পিসির চলমান কার্য প্রকৃয়ার ব্যাঘাত ঘটায়।
এটি মূলত যখন হয়ে থাকে তখন পিসিতে চলমান কাজগুলো থেমে যায়। এক পর্যায়ে মনিটরে আমরা একটি মাত্র ছবি যা ক্যাপচার এর মত ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। পিসি তখন কোন কমান্ড এর রেসপনস্ করেনা।

যদি পুনরায় আমরা পিসিকে কোন কমান্ড করি তখন দেখা যায় মনিটরে হালকা সাদা রং এর ফ্লাসের মতো দেখায়। এক পর্যায়ে পিসি তাকে কামন্ড কৃত সকল কাজগুলো করা বন্ধ করে দেয়। এভাবে চলতে থাকে। কখনো কিছু সময় পরে হ্যাং চলে যায়, আমরা তখন মনিটরে আমাদের সকল কমান্ড গুলোর রেজাল্ট দেখতে পাই।

আবার কখনো কখনো হ্যাং পিসিকে রিস্টার্ট দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে।
মোটকথা, হ্যাং হলো পিসির অস্বাভাবিক অবস্থা যা পিসির স্বাভাবিক অবস্থার বিপরীত চিত্র প্রদর্শন করে থাকে।

২। হ্যাং কেন হয়?

হ্যাং এমন একটি সমস্যা যা যেকোন মূহুর্তেই হতে পারে। বিশেষ করে যখন রেমের উপর ভীষন চাপ পরে ঠিক তখনি এটি হয়ে থাকে।

হ্যাং মূলত একাধিক প্রোগ্রাম রান করার কারণে হয়ে থাকে। যখন রেম তার নূন্যতম স্পেস দিয়ে সবগুলো প্রোগ্রাম কে কভারেজ দিতে পারেনা ঠিক তথনি রেম এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে পিসিতে হ্যাং এর সৃষ্টি হয়।

এছাড়া আরও বিভিন্ন কারনে পিসি হ্যাং হয়ে থাকে। যেমন- কম্পিউটারে ভাইরাস থাকার কারণে পিসি হ্যাং হয়। অথবা আপনি অনেকদিন যাবত পিসি ব্যাবহার করে চলেছেন কিন্তু কখনো পিসির আবর্জনা ফাইলসমূহ যেমন অপ্রয়োজনীয় ফাইল যেগুলো পিসি ব্যবহারের ধরুন সৃষ্টি হয়ে থাকে। সেগুলো কে নিয়মিত ক্লিন না করা(যেমন- Run অপশনে গিয়ে (tree, recent, prefetch ইত্যাদি ক্লিন করা)। এ কাজ গুলো অবশ্যই যে কোন পিসি ক্লিনার সফটওয়্যার দিয়ে করতে পারেন। আমি পরবর্তীতে এরকম একটি সফটওয়্যারের সিরিয়াল কী সহ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

পিসি হ্যাং হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারন হলো নতুন ভাবে অপারেটিং সিস্টেম না দিয়ে পুরনো অপারেটিং সিস্টেম-এ বহুদিন যাবত ব্যবহার করা। সাধারনত প্রতি তিনমাস পর পর আপনাকে অন্তত একবার হলেও অপারেটিং সিস্টেম দিতে হবে। তবে সেটা মূলত আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।
কেউ কেউ প্রতি মাসে একবার হলেও অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে থাকে।

এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো হল- আপনার পিসিতে ভারী সফটওয়্যার গুলোর ব্যবহার করা। অথবা আপনার পিসির কনফিগারেশনের চেয়েও হাই লেভেলের সফটওয়্যার ব্যবহার করা। পিসির Local disk মানে C ড্রাইভে পর্যাপ্ত পরিমান খালি না রাখা।
অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল দেয়া। পিসিতে এন্টিভাইরাস ব্যবহার না করা। পিসিকে একটি কমান্ড করে তার রেসপনস্ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পুনরায় কমান্ড করা বা বার বার কমান্ড করা। একাধিক প্রোগ্রাম রান করে কাজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। বলতে গেলে হয়তো আরো অনেকগুলো কারন বলতে পারব। যাইহোক পরবর্তী প্রসঙ্গে আসা যাক।

৩। হ্যাং হলে করনীয় কি?

অনেকে আছেন যারা হ্যাং হওয়া মাত্র পিসিকে সাথে সাথে রিস্টার্ট করে দিন। এরূপ করা মোটেও ঠিক না। কেননা এর ফলে সিপিইউ এর যন্ত্রাংশের উপর ভীষন চাপ পড়ে মাঝে মাঝে এগুলো নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে প্রসেসর, রেম, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি। সুতরাং এক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন।

হ্যাং এর সমস্যা টি সাথে সাথে দূর করার জন্য আপনি যা যা করতে পারেন তা হল-

প্রথমে আপনি Taskbar এ যান। তারপর মাউসের রাইট বাটনে ক্লিক করে Start task manager এ ক্লিক করুন।
অনেক সময় হ্যাং এর মাত্রা বেশী হলে মাউস অপশনস্ পর্যন্ত কাজ করেনা। তখন Start task manager অপশনস্ টি আনার জন্য কিবোর্ড থেকে পর্যায়ক্রমে Ctrl, Alt, Del একসাথে চাপুন। তারপর Windows task manager অপশনস্ টি মনিটরে দেখতে পাবেন।

এবার সেখান থেকে Application ট্যাব টি সিলেক্ট করুন। (ডিফল্টভাবে Application ট্যাব টি সিলেক্ট করা থাকে। যদি না থাকে তাহলে এভাবে সিলেক্ট করে নিবেন।)
তারপর Task এ আপনার প্রোগ্রাম গুলোকে এবং status এ প্রোগ্রাম গুলো কি অবস্থায় আছে দেখতে পাবেন। যেমন হ্যাং অবস্থায় না থাকলে প্রোগ্রাম টির status এ Running লিখাটি দেখাবে।

আপনি সেখান থেকে আপনার যে প্রোগ্রাম টি হ্যাং হয়ে আছে সে প্র্র্রোগ্রাম টির উপর ক্লিক করুন। উল্লেখ্য যে, হ্যাং হওয়া প্রোগ্রাম টির status এ আপনি Not Responding লিখাটি দেখতে পাবেন।

এবার নিচে গিয়ে প্রথমে থাকা End Task লিখাটিতে ক্লিক করুন। কিছুক্ষনের মধ্যে আপনার সামনে একটি নাটিফিকেশন আসবে। আপনি সেখান থেকে End Now লিখাটি তে ক্লিক করুন। ব্যাস হ্যাং চলে যাবে। যদি না যায় তাহলে এভাবে কয়েকবার করতে থাকুন।

৪। হ্যাং এর হাত থেকে বাচার উপায়?

হ্যাং যেসব কারণে হয়ে থাকে সেই কারণ গুলো নজরে রাখলে আপনি হ্যাং এর হাত থেকে সহজেই বাচতে পারবেন। যে কারণ গুলো আমি ২ নম্বর ধাপটিতে বর্ণনা করেছি সেগুলো।

যাইহোক, আপনাদেরকে বিষয়টি আরো সহজ করে দেওয়া যাক।

আপনার লোকাল ডিস্ক সি ড্রাইভে অন্তত ৮ জিবির উপরে খালি রাখুন। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

ভারী সফটওয়্যার গুলোর কাজ যখন করবেন তখন তা ইনস্টল দিবেন এবং কাজ শেষে তা আবার আনইনস্টল বা রিমোভ করে দিবেন।

একসাথে একাধিক প্রোগ্রাম ব্যবহার করবেন না। পিসিকে সবসময় ক্লিন রাখুন। পিসি ক্লিন রাখার জন্য যেকোন ক্লিনার সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে পারেন।

একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করার পর আপনার পিসিকে একবার রিস্টার্ট দিয়ে নিন। বিশেষ করে প্রতি ২-৩ ঘন্টা পর পর।

প্রয়োজনে রেম ক্লিনার এবং রেম অপটিমাইজার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।

ইন্টার নেট ব্যবহার কারিরা ফায়ারওয়াল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া একটি আপডেট করা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।

প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর একবার হলেও উইন্ডোজ সেটআপ মানে অপারেটিং সিস্টেম পিসিতে দিয়ে নিন।

সর্বোপরি, পিসিকে যখন কোন কমান্ড করবেন উক্ত কমান্ড এর জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করুন। যদি রেসপনস্ না পান তারপর পুনরায় কমান্ড করুন। কিন্তু একসাথে অথবা একই সময়ে বার বার কমান্ড করবেন না। কেননা অতিরিক্ত কমান্ড হ্যাং হওয়ার মূল কারণ হিসেবে গন্য করা হয়।

আমার এই লিখাগুলো যদি আপনাদের সামান্যতম উপকারে আসে তাহলেই কেবল আমি স্বার্থক হব। যদি লিখাগুলো কারো ভাল লাগে তাহলে মন্তব্য করতে ভূলবেন না যেন।

এছাড়াও উপরের কোন বিষয় যদি আপনার বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাতে পারেন। আমি সে বিষয়ে আপনাকে সাহায্যে করব।

এরকম আকর্ষণীয় সব পোষ্ট পেতে নিচের পেজটিতে লাইক দিয়ে সবাইকে শেয়ার করুন।

ITsolution page

সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।

Level 0

আমি Shariful Islam। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 50 টি টিউন ও 157 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

valo post

Level 0

প্রতি মাসে মাসে উইন্ডোজ দিলে মানুষের মাথা+পিসির মাথা ঠিক থাকে ?? পিসিতে শুধু গান শুনা আর মুভি দেখার কাজ করলে মাসে মাসে উইন্ডোজ দেওয়ার যুক্তি ঠিক আছে !! ২-৩ ঘন্টা পর পর রিস্টার্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা ।

    @Skylark: ভাইয়া, পোষ্ট টি সকল ইউজারের কথা বিবেচনায় রেখে করা হয়েছে। অন্যদিকে, কম্পিউটারের এসব বিষয়ের উপর খুব এক্সপার্ট লোকও বাংলাদেশে অনেক রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্য রকম।
    যাইহোক, প্রতি মাসে উইন্ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি শুধু এটাকে উদাহরণস্বরুপ হিসেবে দেখিয়েছি, তবে দিতে হবে সেটা বলিনি। আমদের মাঝে এমন অনেকে আছেন যারা এরকমটি করে থাকেন।
    শুধু গান শুনা আর মুভি দেখা এবং ২-৩ ঘন্টা পর পর রিস্টার্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বলতে চাই, আপনার পিসিতে যদি ওরকম সমস্যা না হয় তাহলে আপনি এরকমটি করার তো প্রশ্নই ওঠেনা। সব পিসি তো আর একই রকম নয়.. তাইনা?
    গান শুনা আর মুভি দেখার মতো পিসি ইউজারেরা বাংলাদেশে সম্ভবত খুবই কমই রয়েছেন।
    এছাড়া এসব পিসিতে হ্যাং এর মত সমস্যা সচরাচর হয়না।
    মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

অনেক সুন্দর টিউন। আশা করি আগামীতে আরও সুন্দর টিউন উপহার দিবেন ।

ভার্সচুয়াল র‌্যাম বাড়িয়ে উপকার পাওয়া যায়। আমার তো তিন খানা পিসি তার মধ্য এক খানা বন্ধ র‌্যাম ১ জিবি ফ্রি পইরা আছে তার পর ও তো ব্যাবহার করতেছি না। ১ জিবি র‌্যাম ব্যাবহরা করি পিসি সব সময়
xp ব্যাবহার করি আমার কাছে বেস্ট মনে হয়। চলন্ত অবসথায় সেটাপ দেই ৩ মিনিট লাগে।
ডিপ করি না। ডিপ আমার কছে বন্ধি মনে হয়। বেশী সফট ইন্টশল দিলে service গিয়ে মেনুয়েল রান করাবেন। তাহলে হাজার হাজার সফট স্লে করবে না কম্পিউটার।

    @তারেক চাদপুর: ধন্যবাদ, চাদপুরী ভাইয়া। অনেকদিন পর বাড়ির কাছের একজন মানুষ কে কমেন্টে দেখতে পেলাম। আমি তোমার কুমিল্লার ভাইয়া। যাইহোক, অনেকগুলো মূল্যবান তথ্য শেয়ার করলে। খুব ভালো লাগলো পড়ে। ভালো থেকো ভাইয়া।

Level 2

টিউনটা মনোযোগ সহকারে পড়লাম। ভাল লাগলো, তবে একটা বিষয় আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না বলে দুঃখিত। প্রতি তিন মাস পরপর উইন্ডোজ সেটআপ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। আমার মতে বছরে একবার দিলেই হয়। আর প্রতি 3-4 ঘন্টা পরপর রির্স্টাট দেয়ারও প্রয়োজন নাই। কারণ আমার অফিসের পিসি প্রায় বছর ধরে চলিতেছে আমি রির্স্টাট বা সর্টডাউন করি নাই। এটা অবশ্য পিসি কনফিগারেশন এবং বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভর করে। খুবই সুন্দর টিউন। আপনার মঙ্গল কামনা করি।

    @kabirul: ভাইয়া, আমিও আপনার সাথে একমত। কিন্তু এমন অনেক পিসি রয়েছে যেগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয় সেসব পিসির ক্ষেত্রে অনেকেই ভারী সফটওয়্যার গুলোর ব্যবহার করে থাকেন। সেসব পিসির জন্য প্রতি ৩মাস অন্তর অন্তর উইন্ডোজ সেটআপ দেওয়ার প্রয়োজন পরে। কেননা এমনিতেই সেসব পিসির অপারেটিং সিস্টেম ৪-৫মাসের মধ্যেই অচল হয়ে পরে।
    প্রকৃতপক্ষে উইন্ডোজ সেটআপ টা নির্ভর করে মূলত পিসির আচরণের উপর। আপনার পিসিতে যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে আপনি শুধু শুধু উইন্ডোজ দেয়ার মানেই হয়না।
    আমি নিজেও তো পুরো বছর জুরে মাত্র ২বার উইন্ডোজ সেটআপ দিই।

amar majhe majhe emon hoy j task manger open hoy na. baddho hoye restart.

    @পথের পথিক: @পথের পথিক: Task manager ওপেন করার পদ্ধতি দুটি বলেছিলাম। তার মধ্যে দ্বিতীয় টি দিয়ে তো ওপেন হওয়ার কথা। ট্রাই করে দেখেছেন কি?