ধ্বসে পড়া ভবনে জীবিত আটকা পড়লে কি করবেন?

সাভারের নির্মম ট্রাজেডির পর সবাই হয়ত মনে মনে ভাবছেন কি করে এই ধরনের ট্র্যাজেডিগুলোকে মোকাবেলা করা যায়। উন্নত কাচামাল দিয়ে বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং তৈরি করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এর শিকার হচ্ছেন ভোক্তারা যারা সেই ভবনে যাতায়াত করে থাকেন।

হঠাৎ করে কোন ভবন ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলে এবং দুর্ভাগ্যবশত আপনি সেখানে থাকলে ঐ মুহুর্তে তেমন কিছু করার নেই এটা কিন্তু সত্যি নয়। ভাগ্যের জোরে যদি বেঁচে যান তাহলে প্রাথমিকভাবে যা করবেন এবং যা থেকে বিরত থাকবেন তা নিয়েই আজকে আমার এই জরুরী লেখাটি।

 

ধ্বসে পড়া ভবনে জীবিত আটকা পড়লে যা করবেনঃ

  •  হঠাৎ করেই আপনার ঘর-বাড়ি অনাবশ্যক ভাবে কেঁপে উঠছে বুঝতে পারলে তৎখনাৎ ভবন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। বহুতল ভবন হলে বাইরে বের হওয়া সম্ভব হয় না সেই অবস্থায় সাথে সাথে ঘরের সকল সদস্যকে বলুন শক্ত টেবিল, চেয়ার কিংবা ঘাটের পায়া (legs) পাশে গিয়ে অবস্থান নিতে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন চেয়ার টেবিল বা খাটের সরাসরি নিচে ঢুকে যেতে, কিন্তু আরেকদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন এতে করে আপনি চাপা পড়ে মারা যেতে পারেন। কিন্তু পায়ার কাছে অবস্থান নিলে এর উপার ছাদ ধ্বসে পড়লেও আঘাত পাবার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া সেখানে টেবিল(বা খাট) ও ছাদের ভেঙ্গে পড়া অংশের মধ্যে কিছু খালি জায়গার সৃষ্টি হবে যা আপনাকে উদ্ধার পূর্ববর্তী সময়টুকুতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রলম্বিত করতে সাহায্য করবে।

Untitled-1

  •  ভেঙ্গে পড়ছে এমন ভবনের তিনটি জায়গায় কখনোই অবস্থান নেবেন না-

ক) সিঁড়ি

খ) দরজার জানালার কাছে

গ) ঘরের একদম মাঝামাঝি (বরং দেয়ালের কাছে অবস্থান নিতে পারেন)

  •  অনেক ভুমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেন Fetal Position এ শুয়ে পড়তে। এতে করে আপনার শরীর অনেক কম জায়গা নেবে। ধ্বংসস্তুপের যেকোন ফাঁক ফোকড়ে পড়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।
  •  ভবন ধ্বসের পর আপনি সেখানে জীবিত আটকা পড়লে তৎখনাৎ যেটি করবেন তা হল নাক মুখ দিয়ে ধুলা বালি প্রবেশ বন্ধ করে আপনার শরীরের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা। আপনার দু-হাত যদি নাড়াতে পারেন, তাহলে দু-হাত কাপের মত করে মুখের কাছে এনে নাক মুখ ঢেকে দিন ও হাত ও মুখের মধ্যেকার জায়গা থেকে অক্সিজেন নেবার চেষ্টা করুন।
এইভাবে হাত দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন
এইভাবে হাত দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন
  • বোঝার চেষ্টা করুন আপনি সোজা আছেন নাকি উলটো হয়ে আছেন। এ জন্য জিহবা দিয়ে খানিকটা লালা গড়িয়ে যেতে দিন, যদি তা আপনার মুখ থেকে নাকের দিকে চলে আসে তার মানে আপনি উলটো হয়ে আছেন। সাবধানে সোজা হবার চেষ্টা করুন। উলটো হয়ে ঝুলে থাকলে অভিকর্ষ বলের কারনে আপনার মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ হবে, এটি একজন মানুষকে আধা ঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিটে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। যদি নড়াচড়া করতে না পারেন তাহলে যতটুকু পারা যায় মাথাটিকে শরীরের সাথে আনুভূমিক করার চেষ্টা করুন।
ঞ্জিহবা বের করুন
এভাবে জিহবা বের করে আপনার লালার গতিপথ বুঝুন
  •  মোবাইল ফোন কিংবা অন্য কোন যোগাযোগ মাধ্যম কাছে থাকলে তার সাহায্যে সাথে সাথে পরিচিত কাউকে কল দিন এবং সাহায্য নিয়ে আসতে বলুন। যদি মোবাইল না থাকে তাহলে চিৎকার দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করুন। কিন্তু চিৎকার করে শরীরের সব শক্তি খরচ করে ফেলবেন না, কেননা আপনি হয়ত এমন কোন কোনায় আটকা পড়তে পারেন যেখান থেকে বাইরে কোন শব্দই পৌছে না। তাই থেমে থেমে কিছুক্ষন পর পর সাহায্যের জন্য আওয়াজ তুলুন।
  •  অযথা জোরাজুরি করে শরীরের শক্তি নষ্ট করবেন না, এসব করলে শরীরের অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হয় বলে অনেক অক্সিজেন দরকার হয়। আর তাতে করে ঐ বদ্ধ স্থানে অক্সিজেন দ্রুত শেষ হয়ে আপনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবেন। ভয় না পেয়ে পারা যায় না, কিন্তু মনে রাখবেন যতটুকু পারা যায় শরীরের শক্তি সঞ্চয় করবেন। শরীর একদম ছেড়ে দেবেন। আড়ষ্ট হয়ে থাকবেন না।
  •  ভবন ধ্বসের পর আহত না হয়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম। গায়ের উপর সিলিং এর কংক্রিট, ইট, রড, আসবাব ইত্যাদি এসে পড়লে সামান্য থেকে ভয়াবহ রকম আহত হতে পারেন। তখন যদি হাত পা নাড়াতে পারেন তাহলে যেভাবেই হোক পড়নের কাপড় ছিঁড়ে হলেও সেটা দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করুন। কোন হাড় ভেঙ্গে গেছে বুঝতে পারলে সেই স্থান নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিন বা কাপড় দিয়ে গিট দিয়ে তা স্ট্যাবিলাইজ করার চেষ্টা করুন। ব্যাথায় বেশি চিৎকার করবেন না, কেননা চিৎকার করে কোন কাজ তো হবেই না, বরং শরীর আরো দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়বে।
কেটে যাওয়া অংশে হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে বেঁধে রক্ত বন্ধ করুন
কেটে যাওয়া অংশে হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে বেঁধে রক্ত বন্ধ করুন
  •  আপনার সাথে আর কোন বেঁচে যাওয়া মানুষকে দেখতে পেলে তাকে সাথে করে ধীরে ধীরে পথ খুঁজে বের হবার চেষ্টা করুন। ভাঙ্গা দেয়াল, পিলারের পাশ দিয়ে যাবার সময় খুব সাবধান। অযথা কিছু ধরে টানাটানি করে নড়ানোর করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
  •  যদি বাইরে আসার কোন ব্যবস্থাই না করতে পারেন কিংবা আপনি গুরুতর আহত হন তাহলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। সাহায্য আসা পর্যন্ত বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন।

-নানান বিদেশি ভূমিকম্প ও ভবন ভাঙ্গা বিশেষজ্ঞদের লেখা থেকে সকলিত। কার্টুনগুলো খুব তাড়াহুড়ো করে আমার আঁকা, শুধুমাত্র একটি পিকটোরিয়াল গাইড দেবার জন্য। কোন তথ্যগত ভুল থাকলে ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ হব।

Level 2

আমি দিহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 66 টি টিউন ও 2202 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

পড়াশোনা করছি MBBS ৩য় বর্ষ। স্বপ্ন টেকনলজি জগতেই ডুবে থাকব।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 2

Very helpful tune…thanks Dihan bhai…Tobe sobai k bolsi r amar sob online friender uddesse bolsi j Rana plaza te j koy jon mara gasen tader prottek family k Rana plaza land er sob ongso tuku, jara sekhane mara gase tader name likhe deya hok even govt. jeno sekhane notun kore multi-storied building toiri kore dey…. jara oi building er prottekei plot pabe……0nly sekhane jara accident e mara gase…arek ta kotha, Rana k fasi dilei to sob mite jabe na, r jara mara gasen tader family aktu holeo vule thakte parben jodi tader k oi land er purota tader name likhe dey….ami atai sobcheye nejjo bichar mone korsi…plz, bondhura, apnara amr idea ti sothik hole janniye din sobaike othoba,, apnara amr ideati notun kore likhe status diye share korun online er sob gulo blog e……plz….plz….R akhoni ata chhorie deya uchit sobar majhe…..

    @Shuvro333: দেখা যাক কি করে। কিন্তু ২০,০০০ টাকায় তারা তিন মাসও চলতে পারবেন না সেটা বোঝাই যাই। এই বিশ হাজার তাদের প্রতি এক প্রকার উপহাস।

      @দিহান: Dutch Bangla Bank নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা দেবার কথা ঘোষনা করেছে। তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

    @Shuvro333: Good idea !!!!!!!!!!!!!!!

SHARE KORLAM……

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার এই পোস্টটির জন্য।

ধন্যবাদ দিলে মনে হয় কম হয়ে যাবে তবুও ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি ছাড়া আর কোন শব্দ এই মূহুর্তে মাথায় আসছে না!!! অসংখ্য ধন্যবাদ এত গোছানো একটি সচেতনতামূলক টিউন করার জন্য।

চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট। 🙂

Level 0

সময়োপযোগী পোষ্ট. ধন্যবাদ ।

অনেক কাজের একটি টিউন করলেন। ধন্যবাদ।

যুগোপযোগী post, ধন্যবাদ..

নির্বাচিত করা হউক। দিহান ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভাল লাগল ভাই।

খুব ভালো লিখেছেন ভাই। সময়োপযোগী একটি পোষ্ট। টিউনটি নির্বাচিত করার জন্য মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

টিউনটি নির্বাচিত করার জন্য মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনেক কাজের একটি টিউন করলেন। ধন্যবাদ।

সময়োপযোগী খুব ভালো একটি টিউন!!!

টিউনটি নির্বাচিত করার জন্য মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

Level 0

সাভারের এই ঘটনার সর্বচ্চ সাজা হচ্ছেঃ-
বাংলাদেশে দন্ডবিধির 304 (ক) ধারা অনুযায়ী সর্বচ্চ সাজা 5 বছর।
তাহলে আমাদের এখন করা উচিৎ

Level 0

Fine !

খুবই ভাল টিউন হয়েছে।সময়োপযোগী টিউনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Really a nice post.

Level 0

Great tune Thanks so much 🙂