FL Studio টিউটোরিয়াল [পর্ব-০৫] :: সহজে Piano বাজানো শিখুন+ভিডিও টিউটোরিয়াল

FL Studio টিউটোরিয়াল

 যাক। অনেক জল্পনা কল্পনা শেষে এবার আপনাদের জন্য পিয়ানো বাজানোর টিউটোরিয়াল নিয়ে হাজির হলাম। পিয়ানো মূলত হারমোনিয়াম। তাই যারা হারমোনিয়াম বাজাতে পারেন তারা পিয়ানোও বাজাতে পারবেন। আর যারা দুটোর কোনোটাই বাজাতে পারেন না তাদের জন্যই আমার এ টিউটোরিয়াল। একবার যদি পিয়ানো বাজানো শিখতে পারেন তাহলে আপনি একাধারে হারমোনিয়াম, বাঁশি, মাউথ অরগান(হারমোনিকা), গিটার সব বাজাতে পারবেন। আমার কোন অ্যাকুইস্টিক গিটার নেই তাই বাজাতেও পারি না। তবে নিয়ম কানুন জানা আছে। একটা হাওয়াইয়িন গিটার আছে ওটা দিয়ে মাঝে মাঝে গানের সুর তুলি। তাও আবার আধা-নষ্ট। আর শুধু তবলা ব্যতীত সবকিছুই প্রায় বাজাতে পারি।

যাইহোক আসুন শুরু করা যাক।

বাংলা’য়, ইংরেজিতে যেমন অক্ষর আছে, তেমনি সঙ্গীতেও বিভিন্ন অক্ষর আছে। বাংলায় শিশুরা সর্বপ্রথম প,ফ,ব,ভ,ম এই ৫ টি বর্ণ উচ্চারণ করতে শেখে। কারণ এই ৫ টি বর্ণই কেবলমাত্র ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উচ্চারণ করতে হয়। আর সর্বপ্রথম শিশু মূলত ‘মা’ ও ‘বাবা’ এই দুই শব্দই বলতে শেখে। এই জন্য দেখা যায় বেশিরভাগ ভাষাতেই বাবা ও মা-এর অনুবাদ এই ৫ অক্ষরের মধ্যেই রাখা হয়।

যেমনঃ

বাবা-মা (Bengali); ফাদার-মাদার (English); প্যাড্রে-ম্যাড্রে (Spanish); পারে-মারে (Catalan); ফুচি-মুচি (Chinese); ফার-মর (Danish); ভ্যাডার-মুডার (Dutch); প্যাট্রো-প্যাট্রিনো (Espernto); পেরে-মেরে (French); ভ্যাটার-মুটার (German); পিতা-মা (Hindi) এরকম আরো অনেক দেশেই আছে। বেশ মজার না?

সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও এরকম কিছু অক্ষর আছে। যেগুলো কম্পাঙ্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এখন বলবেন কম্পাঙ্ক কি জিনিস? কম্পাঙ্ক হলো কন্ঠের তীক্ষ্ণতা। যদি আপনি গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠ শোনেন তাহলে দেখবেন তার গলা কি সুন্দর চিকন ও মিষ্টি। অর্থাৎ তার কন্ঠের কম্পাঙ্ক বেশি। সাধারণত মেয়েদের গলার কম্পাঙ্ক ছেলেদের তুলনায় বেশি হয়। এজন্য সবাই সবার সাথে ডুয়েট গাইতে পারে না। আবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান শুনবেন। দেখবেন তার কন্ঠ বেশ মোটা। অর্থাৎ তার কন্ঠের কম্পাঙ্ক কম।

আমরা যখন একটা গান গাই তখন লক্ষ করুন যে আমরা কী করি। আমরা যখন সুর পরিবর্তন করি তার অর্থ হলো আমরা ঐ লাইনের কম্পাঙ্ক পরিবর্তন করি। গানের প্রতিটা অংশেই কম্পাঙ্ক খেলা করে। অনেক সময় গানের একটা শব্দের কম্পাঙ্কেরও পরিবর্তন হয় আবার অনেক সময় একটা শব্দের প্রতিটা অক্ষরেরও কম্পাঙ্কের পরিবর্তন হয়। এটা সুরকারের উপর নির্ভর করে। তিনি যেভাবে চান ঠিক সেভাবেই সুরটা হয়।

যাইহোক এই কম্পাঙ্কের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীতে কতকগুলো বর্ণ তৈরি করা হয়েছে।

এগুলো হলো:

C-C#-D-D#-E-F-F#-G-G#-A-A#-B = মোট ১২ টি (B-এর পর আবার C থেকে শুরু)।

আর এগুলোর মধ্যে সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি হলো যথাক্রমে C-D-E-F-G-A-B যেগুলোর FL Studio’র ক্ষেত্রে বাজাতে হয় Z থেকে বা Q থেকে ডানদিকে।

এখন বলবেন যে C#-D#-F#-G#-A# এরা কী দোষ করল? আবার B ও E এর ক্ষেত্রে # (Sharp) নেই কেন? হুমম। জেনে রাখুন, সা-রে-গা-মা কোনো মন্ত্র না। কেবলমাত্র সহজে গানের সুর বাজানোর জন্য এটি মনে রাখা হয়। তাহলে আমরা ১২ টির মধ্য থেকে মাত্র ৭ টা নিলাম সা-রে-গা-মা’র জন্য। তাহলে সূত্রটা কী দাঁড়াল?

1-1-0-1-1-1

বুঝলেন কী? আমরা C থেকে বাজাচ্ছিলাম। 1 মানে হলো এক নোট ব্যবধান পর। আর 0 নোট ব্যবধান পর অর্থাৎ ঠিক পাশের টা। তাহলে C থেকে শুরু করলে কী দাঁড়ায়? ১২ টা নোটের দিকে তাকান।

C- এরপর এর এক (1) নোট ব্যবধান পর আছে D- এরপর এক (1) নোট ব্যবধান পর আছে E- এরপর এর শূন্য (0) নোট ব্যবধান পর বা পাশেরটা হলো F- একইভাবে G-A-B

আর E ও B এর ক্ষেত্রে # নেই। এটা মূলত কম্পাঙ্কের জন্যই হয়েছে। কম্পাঙ্কের পরীক্ষায় দেখা গেছে আসলে E ও F এর মাঝখানে আলাদা স্বরবিশিষ্ট কোনো নোট পাওয়া যায় না। তাই E এর কোন শার্প বা # নেই। একইভাবে B ও C এর মাঝেও আলাদা স্বরবিশিষ্ট কোন নোট নেই। তাই B এরও শার্প বা # নেই। বিশ্বাস না হলে FL Studio-তে Q থেকে বা Z থেকে ডানদিকে বাজাতে থাকুন। Z থেকে বাজালে F আর K সুইচ দুইটিতে আপনি কোনো সাউন্ড শুনতে পাবেন না। আবার Q থেকে বাজালে 4 ও 8 সুইচ দুইটাতে কোনো সাউন্ড পাবেন না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

মূলকথা হলো একটাই। বাজানোর সুবিধার্থে আপনাকে সা-রে-গা-মা মনে রাখতে হবে। কারণ, একটা গানের সুরের উঠানামা মূলত সা-রে-গা-মা দিয়েই সংঘটিত হয়। যেমন ধরুন। সেদিন বাজিয়েছিলাম ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়’ গানটা। ঐ লাইনটা মনে আছে? ‘বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়েনা’? তবে এতবড় না আমরা শুধু ‘ছাড়েনা’ এইটুকুর মিউজিক বাজিয়ে প্র্যাকটিস করব। আচ্ছা একবার গানতো যে ‘ছাড়েনা’ এই অংশটুকুর সুর কিরকম? চিন্তা করলে দেখবেন যে ছা-ড়ে-না এই তিনটার স্বর তিন রকম। এবার তিনটার ক্ষেত্রে তিনটা সুইচ চাপবেন আর গাইবেন। কয়েকবার। ছা(W)-ড়ে(R)-না(E) অথবা ছা(X)-ড়ে(V)-না(C) দেখুন তো তিনটা সুর তিন রকম লাগছে কিনা। অবশ্যই লাগবে। তাহলে বাংলায় সা-রে-গা-মা অনুসারে কী দাঁড়াচ্ছে? ছা(রে)-ড়ে(মা)-না(গা) বা রে-মা-গা। কয়েকবার গাইতে থাকুন। দেখবেন ভাল লাগবে।

তারমানে সা-রে-গা-মা কিছুই না। শুধুমাত্র আমার বাজানোর সুবিধার্থে আমি এটি মনে রাখব। তাই আমরা চাইলে যেকোনো জায়গা থেকে সা-রে-গা-মা শুরু করতে পারি। শুধু 1-1-0-1-1-1 সূত্রটা মনে রাখবেন। প্র্যাকটিস করুন তো। ধরুন আপনি D নোট কে ‘সা’ ধরে সা-রে-গা-মা বাজাবেন।

তাহলে প্রথমে D. এরপর D এর এক (1) নোট পর আছে E. এরপর এর এক (1) নোট পর আছে F#. এরপর এর শূণ্য (0) নোট পর আছে G. এরপর এর এক (1) নোট পর আছে A. এরপর এর এক (1) নোট পর আছে B. এরপর এর এক (1) নোট পর আছে C#. (বলেছিলাম CDEFGABCDEF…….. এইভাবে চলতে থাকে)

তার মানে D থেকে শুরু করলে সা-রে-গা-মা’টা হবে এরকম। (চিত্রে ভুলবশত 'গা' মিস হয়ে গেছে)

আপনাদের জন্য একটা হোমওয়ার্ক রইল। কোথা থেকে শুরু করলে সা-রে-গা-মা’র ম্যাপ কী হবে সেটা আমাকে জানাবেন।এবার তাহলে গানটার ‘ছাড়েনা’ বাজান তো। মনে নেই? রে-মা-গা। কী? বুঝেছেন তো? কিন্তু কন্ঠটা একটু উপর থেকে গাইতে হচ্ছে তাইনা? হবেই তো একটা স্বর উপর থেকে ধরেছেন না?

একইভাবে E থেকে শুরু করলে সা-রে-গা-মা কিরকম হবে তা সূত্রানুযায়ী বের করে ফেলুন আর ‘ছাড়েনা’ গাইতে থাকুন। এভাবে ডানদিকে যেতে থাকুন আর ‘ছাড়েনা’ গাইতে থাকুন। দেখবেন যতই একটা করে নোট উপরে এভাবে গাইতে থাকবেন ততই আপনার গাইতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ, আপনার গলার কম্পাঙ্ক একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যত উপরে গাইতে থাকবেন ততই গলায় চাপ পড়বে। অনেকেই দেখেছি যখন গলায় চাপ পড়ে তখন অনেকেই স্কেল পরিবর্তন করে নিচের স্কেলে গাইতে থাকে। এটা কখনোই করবেন না। হয়তো একদমই থেমে যাবেন নয়তো প্রথমেই একটু নিচ থেকে শুরু করবেন। সঠিক গাইতে গাইতে ভুল কোনো কিছু চর্চা করবেন না। এটার পরিণতি মারাত্মক।

আর হ্যাঁ পিয়ানো বাজাতে হলে আপনাকে অবশ্যই গানটির সুরটা সঠিকভাবে জানতে হবে। কারণ, একটা গানের সঠিক সুর যদি না জানেন তাহলে তো আপনি সুরটা বাজানোর কথা ভাবেন কীভাবে? তাই, যদি আপনি একটা গানের সুর ঠিকভাবে না গাইতে পারেন তাহলে রিকোয়েস্ট ভাই, মিউজিক আপনার জন্য না। তাই কোনোদিন আপনি গানই গাননি। তাহলে আপনি এটা বাজাতে পারবেন না। আর এটা বাজাতে হলে অন্তত গান বিচার করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এটা না হলে অসম্ভব। তবে হ্যাঁ। আপনি অভ্যাস করতে করতে একটা পর্যায়ে পৌছে যাবেন তখন দেখবেন যে হ্যাঁ আপনিও পারছেন। এটার কোনো শর্টকাট নেই। আপনাকে প্র্যাকটিস করে যেতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে একটা ভিডিও টিউটোরিয়াল দিলাম।

পরবর্তীতে আপনাদের আরো কিছু গানের প্র্যাকটিস করাব। স্বরলিপি, কিবোর্ড-লিপি দেব। ধীরে ধীরে শিখুন। আর প্র্যাকটিস করতে থাকুন। অবশ্যই একদিন পারবেন। আজকের মতো এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন সবাই। কোনো সমস্যা হলে ফেসবুকে জানান।

Me on Facebook>>

FL Studio Group>>

Youtube Channel>>

বিঃদ্রঃ ধর্মীয়ভাবে সঙ্গীত নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। তবে বেশিরভাগ দলিল অনুযায়ী ইসলামে বাদ্যযন্ত্র হারাম। তাই সঙ্গীতও হারাম। কারণ, তৎকালীন আরবসমাজে সঙ্গীত, মদ-জুয়া ও নারী এই তিনটি জিনিসই মানুষকে ধর্ম থেকে দুরে নিয়ে যেত। তাই অশ্লীল, খারাপ বা উত্তেজক কোনো গান শ্রবণ করবেন না। সত্য, সুন্দর ও পবিত্র গান শুনুন। আর খেয়াল রাখবেন যেন সঙ্গীত আপনাকে কোনোভাবেই যেন ধর্ম থেকে দূরে নিয়ে না যায়। অবসর সময়েই কেবলমাত্র শিক্ষার জন্যই আমার টিউনটি। এর দ্বারা কোনো পাপকাজ সংঘটিত হলে তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার। তাই নিজ দায়িত্বে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করুন।

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই সরাসরি প্রিয়তে 🙂

বাকি পর্বগুলার অপেক্ষায় রইলাম

carry on bro !

থামবেন না । চালিয়ে যান ।

    হুমম। চালানোর ইচ্ছা আছে। 🙂

আপনার টিউন লেখার স্টাইল আমার কাছে ভালো লাগছে। আর আপনার নিজের কন্ঠে কি গাওয়া ছিল সেই গানটা ‘তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে…’ ? গানটা সুন্দর ছিল। 🙂

    @এলিন: ধন্যবাদ এলিন ভাই। জ্বি। গানটা আমার নিজের কন্ঠেই গাওয়া। আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।