ইলেকট্রিক সার্কিট নিয়ে সংক্ষিপ্ত টিউটরিয়াল [পর্ব-৩]

[পর্ব-১|পর্ব-২] গত পর্বে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি ও ভোল্টেজ নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পর্বে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতির উপর ভিত্তি করে নোডাল অ্যানালাইসিস (Nodal Analysis) নিয়ে আলোচনা করা হবে। নোডাল অ্যানালাইসিস হচ্ছে একটি প্রণালী যার দ্বারা কোন সার্কিটের নোড ভোল্টেজ নির্ণয় করা হয়। একটি সার্কিটের নোড ভোল্টেজ জেনে গেলে সেই সার্কিটের যে কোন ব্র্যাঞ্চের কারেন্টও বের করা যায়। নোডাল অ্যানালাইসিস এর জন্য ওহমের সূত্র এবং কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, সাধারণ অর্থে দুই বা ততোধিক ব্র্যাঞ্চ এর মিলিত সংযোগস্থলকে নোড বলা হয়, তবে নোডাল অ্যানালাইসিস এর ক্ষেত্রে তিন বা ততোধিক ব্র্যাঞ্চ এর মিলিত সংযোগস্থল বিবেচনা করা হয়ে থাকে যাকে বলে এসেনশিয়াল নোড (Essential Node)। নোডাল অ্যানালাইসিস এর ক্ষেত্রে নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

ধাপ-১: প্রথমে এসেনশিয়াল নোডগুলো (তিন বা ততোধিক ব্র্যাঞ্চ এর মিলিত বিন্দু) সনাক্ত করতে হবে।

ধাপ-২: এসেনশিয়াল নোডগুলোর মধ্য থেকে একটিকে রেফারেন্স নোড হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। যে নোডে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্র্যাঞ্চ যুক্ত থাকে সেটিকে রেফারেন্স নোড ধরা সুবিধাজনক। রেফারেন্স নোড সাধারণত সার্কিটের তলদেশে থাকে। রেফারেন্স নোডের ভোল্টেজ শূন্য ধরা হয় বিধায় গ্রাউন্ড চিহ্ন দ্বারা লেবেল করা হয়।

ধাপ-৩: নন-রেফারেন্স নোডগুলোকে V1, V2, Vn দ্বারা লেবেল করতে হবে, যেখানে V1 হচ্ছে রেফারেন্স নোডের সাপেক্ষে নোড-১ এর ভোল্টেজ এবং Vn হচ্ছে নোড-n এর ভোল্টেজ। কোন নোডের ভোল্টেজ জানা থাকলে সেই নোডকে লেবেল করার দরকার নাই।

ধাপ-৪: প্রত্যেক নন-রেফারেন্স নোডে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করতে হবে। কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগের সুবিধার্থে ব্র্যাঞ্চ কারেন্টগুলোকে I1, I2, In দ্বারা লেবেল করা যেতে পারে। একটি সার্কিটে যদি দুটি নন-রেফারেন্স নোড থাকে তাহলে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করার পর দুটি সমীকরণ পাওয়া যাবে। অনুরূপভাবে, n সংখ্যক নন-রেফারেন্স নোডের ক্ষেত্রে n সংখ্যক সমীকরণ পাওয়া যাবে।

ধাপ-৫: সমীকরণগুলো সমাধান করে অজানা নোড ভোল্টেজ (V1, V2, Vn) নির্ণয় করতে হবে।

এবার দুটি উদাহরণ দেয়া যাক। নিচের সার্কিটে দুটি এসেনশিয়াল নোড আছে, যাদের মধ্যে একটিকে নন-রেফারেন্স নোড (উপরের লাল বিন্দু) এবং অন্যটিকে রেফারেন্স নোড বা গ্রাউন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (পাদদেশের লাল বিন্দু)। নন-রেফারেন্স নোডটিকে Vb দ্বারা লেবেল করা হয়েছে, যার মান নির্ণয় করতে হবে। বুঝার সুবিধার জন্য Va ও Vc দ্বারা দুটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রেফারেন্স নোডের সাপেক্ষে Va = V1 = 32 V এবং Vc = V2 = 20 V.

এবার যদি নন-রেফারেন্স নোডে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করা হয় তাহলে নিচের সমীকরণ পাওয়া যাবে (তীর চিহ্ন অনুযায়ী i1 ও i2 নোডের দিকে প্রবেশ করছে এবং i3 নোড থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে),

i1 + i2 = i3

যেখানে ওহমের সূত্র অনুযায়ী i1 = (Va - Vb)/R1, i2 = (Vc - Vb)/R2, এবং i3 = (Vb - 0)/R3 = Vb/R3. এবার i1, i2, ও i3 এর মান উপরের সমীকরণে বসিয়ে দিয়ে পাওয়া যায়,

(Va - Vb)/R1 + (Vc - Vb)/R2 = Vb/R3

এই সমীকরণে একমাত্র Vb ছাড়া সবগুলো চালকের মান যেহেতু দেয়া আছে সেহেতু সমীকরণটি সমাধান করলে Vb = 24 V পাওয়া যাবে। Vb এর মান পাওয়া গেলে ব্র্যাঞ্চ কারেন্ট i1, i2, ও i3 এর মানও সহজেই বের করা যাবে। মানগুলো হচ্ছে: i1 = (Va - Vb)/R1 = (32 - 24)/20 = 0.4 A, i2 = (Vc - Vb)/R2 = (20 - 24)/40 = - 0.1 A, i3 = Vb/R3 = 24/80 = 0.3 A. উল্লেখ্য যে, তীর চিহ্ন দ্বারা কারেন্টের যে দিক নির্দেশ করা হয়েছে সেগুলোর নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নাই। ইচ্ছেমতো দিক নির্দেশ করা যায়, তবে সে অনুযায়ী সমীকরণ লিখতে হবে এবং সমাধান একই হবে। আরো উল্লেখ্য যে, সমাধান সঠিক হয়েছে কিনা তা প্রথম সমীকরণের দ্বারা যাচাই করা যাবে।

দুই নোড বিশিষ্ট সার্কিট ভাল করে বুঝার পর নোডের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। নিচের সার্কিটে মোট তিনটি এসেনশিয়াল নোড আছে, যাদের মধ্যে দুটিকে নন-রেফারেন্স নোড (দুটি লাল বিন্দু) এবং একটিকে রেফারেন্স নোড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (পাদদেশ)।

এই সার্কিটের দুটি নন-রেফারেন্স নোডে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করা হলে নিচের সমীকরণ দুটি পাওয়া যাবে,

(V1 - 2)/2 + V1/3 + (V1 - V2)/1 = 0 (বাম পাশের নোডের জন্য)

এবং

(V2 - V1)/1 + V2/5 - 2 = 0 (ডান পাশের নোডের জন্য)

এবার উপরের সমীকরণ দুটি সমাধান করলে V1 ও V2 এর মান যথাক্রমে - 2 V ও - 4/3 V পাওয়া যাবে।

নোট: দুটি নন-রেফারেন্স নোডের মধ্যে যদি শুধু ভোল্টেজ সোর্স থাকে তাহলে সেই নোড দুটিতে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করা যায় না, যেহেতু এই নীতির ক্ষেত্রে ওহমের সূত্র প্রয়োগ করতে হয়; আর ওহমের সূত্রের ক্ষেত্রে অবশ্যই রোধ থাকতে হবে। ফলে এই ধরণের ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সুপারনোড (Supernode) পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে, অর্থাৎ দুটি নোডকে একটি নোড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবে তার আগে সুপারনোড ছাড়াই তিন/চার নোড বিশিষ্ট বেশ কিছু সার্কিট সমাধান করে নোডাল অ্যানালাইসিস সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করতে হবে।

Level 0

আমি এস. এম. রায়হান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 27 টি টিউন ও 123 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

লোকজন তেমন বুঝতে পারছেনা মনে হয়… 😕

    একই লাইনের না হলে তো বুঝতে পারার কথা না। জানি না এই ব্লগে কতজন ইলেকট্রিক্যালের ছাত্র আছে।

রায়হান ভাই প্লিজ কনটিনিউ করে যাবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে যথা সময়ে ৩য় টিউনটা দেয়ার জন্য।

আপনার টিউন গুলু কিন্তু ভাল হইতেছে,তাই চালিয়ে যাবেন আশা করছি,
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ টিউনের জন্য।

    পড়ার এবং উৎসাহ দেয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। আশা করি চলবে।

ভাই স্যারেরা যখন প্রেম দিয়ে হিসাব বিজ্ঞান বুঝান তখন ছাত্র তারাতাড়ি বুঝে এই টিউন টা সেভাবে বুঝালে ভালো হত কারণ এই বিষয় সম্পর্কে ধারনা না থাকলে কেউই বিদ্যুৎ নিয়ে কোন হিসাব করতে পারবে না। কারণ, সব সময় তো সব দিকের বা সব লোড বা সব দিকের ইনপুট/আউটপুট দেয়া থাকে না।

তবে টিউন টা সুন্দর হইছে চলাইয়া যান।

আমি ইলেকট্রনিক সার্কিট ও ডিভাইস সম্পর্কে অত জানি না। একটু আকটু পড়ছিলাম যদি মন্তব্যটা ভূল হয় তবে আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন (মানুষ মাত্রই ভূল) ।

চালাইয়া যান।

ধন্যবাদ।

    আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যে ভুল হওয়ার মতো কিছু নেই, ভুল হলেও কোন সমস্যা নেই। তবে প্রেম দিয়ে যে কী করে ইলেকট্রিক সার্কিট বুঝানো যাবে তা কখনো ভেবে দেখিনি ভাই! আর আপনি যদি এই বিষয়ে পড়ালেখা কিংবা কাজ না করেন তাহলে এগুলো নিয়ে মাথা ঘামিয়েও কোন লাভ নাই।

প্রেম দিয়ে হিসাব বিজ্ঞান বুঝানোর কথা বলছি ইলেকট্রিক সার্কিট না তবে বলছেন যখন প্রেম দিয়ে ইলেকট্রিক সার্কিট বুঝানো যায় কিনা দেখবো।
আর আপনি বলেছেন "আর আপনি যদি এই বিষয়ে পড়ালেখা কিংবা কাজ না করেন তাহলে এগুলো নিয়ে মাথা ঘামিয়েও কোন লাভ নাই।" কিন্তু ভাই কম্পিউটার হার্ডওয়ার সিস্টেম তো সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক্যাল সর্কিট বেইসড।