ফটোশপঃ টিউটোরিয়াল – বক্স তৈরী (বেসিক )

২০০৮ সালে যখন কিনা আমি এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে কম্পিউটার কিনলাম তখন থেকেই ফটোশপের প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ভালোবাসা জন্মেছে । যখন আমার বাসায় পিসি ছিলনা তখন আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছে গল্প শুনতাম যে ফটোশপ দিয়ে এটা করা যায়, ওটা করা যায় ... একজনের মাথা আরকজনের মাথায় লাগানো যায় ... এবং ইত্যাদি ইত্যাদি , তাই যেদিন একটি পিসি আমিয়া মার হাতের কাছে পেলাম প্রথমেই খোজ করেছিলাম এই সফটওয়্যারটির । কিন্তু প্রথম প্রথম অনেক বিরক্ত হতাম । কেননা নরমাল যে পেইন্ট নামের উইন্ডোজের সফট-টি ছিল ওতে ব্রাশ টুলের সাহায্যে দাগাদাগি করতে পারলেও ফটোশপে দাগাদাগিও করতে পারতাম না । তবে বিরক্ত হয়ে তখন সরে আসিনি দেখেই হয়ত আজ ফটোশপের অল্প কিছু কাজ-ট্রিক্স আয়ত্ব করতে পেরেছি । এবং আমার মতে ফটোশপকে বুঝতে পারলে যে কোন গেমের চেয়ে এটিই সবার কাছেই মজাদার হয়ে উঠবে।

তো আজ সকালে প্রথমেই ঢুকলাম টেক-টিউনসে ...। ফটোশপের উপর একটি টিউন দেখলাম ফটোশপ জোনঃ পর্ব-৩১: ফটোশপে তৈরি করুন বই (১) নামে যেটি করেছেন টিউনার মিঠু ভাই । টিউনটি ভালোই লাগল । তো সেখানে একটি কমেন্ট ছিলঃ

দ

আমি দেখলাম মিঠু ভাই যখন একটি টিউটোরিয়াল নিয়ে কাজ করছেন তাই ওনার এই বিষয়ক পোষ্ট দিতে হালকা হলেও সময় লাগার কথা ।আর আমিও আসলে টিউন করার মত বিষয় পাচ্ছিলাম না ...। তাই এই টিউনটি করে দিলাম । আমি বেসিক একটা টিউন টিউনাইতে চেষ্টা করলাম ।
-------------------------------------------------------------------
চলুন, শুরু করি ...
-------------------------------------------------------------------

প্রথমেই বলছি যে যদিও ফটোশপের সিএস ভার্শনের প্রায় সবগুলোতেই একই রকম সুবিধাই পাওয়া যায় তবুও আমি এখানে Adobe Photoshop CS3  ব্যাবহার করেছি ।
প্রথমেই আমরা ফটোশপ সফট-টি ওপেন করি । এরপর উপরের মেন্যু থেকে File>New তে ক্লিক করি অথবা Ctrl+N শর্টকাট কমান্ডটি ব্যাবহার করি । নিচের মত উইন্ডো আসবে -

২

এখানে নামের জায়গায় BOX দিয়েছি ... দতাহলে এখন আমার প্রোজেক্টের নাম BOX । আমি Width ও Height এর যায়গায় 1600 pixel এবং 1200 pixel  ব্যাবহার করেছি । রেজুলেশন 300 ...। কিন্তু আপনারা চাইলে ইচ্ছা মত এগুলো পরিবর্তন করতে পারেন । ( ছোট ক্ষেত্রফলের ক্ষেত্রে ছবির গুনগত মান খারাপ হবে । আপনি কী বিষয়ে কাজ করতে সেটির উপর আপনি নিজেই এই সাইজ এবং রেজুলেশন ঠিক করে নেবেন ) । এবার OK ক্লিক করুন । নিচের ছবিটি লক্ষ করুনঃ

OK প্রেস করার পর এই ছবিটির মত হবে আপনার সমগ্র উইন্ডোটি । এখানে টুল বক্স থেকে আপনি ব্রাশ, ইরেজার সহ সব টুল সিলেক্ট করবেন । Ur Image অংশটি হল আপনার সদ্য ওপেন করা উইন্ডো, যেখানে আপনি কাজ করিবেন । Historyতে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ জমা হবে, ভুলের ক্ষেত্রে আপ্নারা আপনাদের রিসেন্ট শেষ করা কাজ গুলো দেখতে পারবেন । Layers-এ আপনি আপনার ইমেজে ব্যাবহ্রিত Layers গুলো বিভিন্ন ভাবে মোডিফাই করবেন । এবার আপনাকে একটি নতুন লেয়র খুলতে হবে । এ জন্য Shift+Ctrl+N চাপুন একসাথে । নিচের মত একটি উইন্ডো খুলবেঃ

এই লেয়ারটির নাম দিলাম আমি Front । এই নাম দেয়ার বিষয়টা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন নয় । তবে যারা প্রোফেশনাল, তাদের প্রতিটি কাজের জন্যই অনেক সংখ্যক লেয়ার খুলতে হয় । তাই এক্ষেত্রে নামের জন্য তখন লেয়ার গুলো সহজেই তারা বুঝতে পারে । আমরা Ok করি । লক্ষ করুন লেয়ারের অংশে একটি নিউ লেয়ার যোগ হয়েছে । চিত্রে দেখুনঃ

এবার আমরা যাই টুলস মেন্যুতে এবং সেখান থেকে Rectangle Tool সিলেক্ট করি ।

সিলেক্ট করে আমরা এই টুলটির সাহায্যে নতুন লেয়ারটির উপর একটি আয়ত ক্ষেত্র সৃষ্টি করি ।

এটির রঙ প্রিসেটলি কালো হবে । আপনি ইচ্ছে করলে এটির রঙ পরিবর্তন করতে পারেন । তবে এই টিউটোরিয়ালে এটির রঙ মুখ্য বিষয় না । এবার আমরা আবার লেয়ার অপশনে যাব এবং দেখব নিউ লেয়ারটির Opacity 44% করে দেব । এখানে 44%টিও exact কিছু নয় । আমি কেন 44% দিলাম এর ব্যাখ্যা পরে করছি । সমগ্র কাজটি চিত্রের মাধ্যমে নিচে দেখুনঃ

opacity কমানোর পর আমরা আমাদের ছবির উইন্ডতে লক্ষ্য করলে দেখবো যে আমাদের বানানো আয়ত ক্ষেত্রটির রঙ পরিবর্তন হয়ে গেছে । আসলে এটি হালকা Transparent হয়ে যাওয়াতে মনে হচ্ছে যেন রঙ জ্বলে গেছে ।

এবার আমরা Ctrl+T সিলেক্ট করলে আয়তক্ষেত্রটি সিলেক্ট হয়ে যাবে । এরপর আমরা মাউসের Right বাটন ক্লিক করলে একটি ট্র্যান্সফর্ম উইন্ডো আসবে । যাতে, Preservetive অপশনটি থাকবে । আমরা Preservative সিলেক্ট করে উপরের ছবিটির ২ নং অংশে মাউসের পয়েন্টারটি রাখলে চিত্রের বাম অংশে ১ নং এ মার্ক করা তীর চিহ্ন দেখাবে । আমরা মাউসের লেফট বাটনটি চাপ দিয়ে ধরে রেখে হালকা নিচের দিকে টানি । নিচের চিত্র দেখুনঃ

এবার আমরা Ctrl+J চেপে এই লেয়ারটির কপি বানাবো ।

যেহেতু এই নতুন করা Front copy লেয়ারটি Front লেয়ারটির একটি কপি তাই এরও Opacity স্বাভাবিক ভাবেই 44% থাকবে । কিন্তু 44% অপাসিটির কারনে প্রথমটি যখন হালকা ট্র্যান্সপ্যারেন্ট ছিল তাই দুটি কপির কারনে সেই রঙ জ্বলা ভাব কেটে গিয়ে আবার কালো রঙের গারত্ব বেড়ে গিয়েছে ।এবার Front Copy লেয়ারটি উপর মাউস রেখে একটু উপরে তুলে দেই লেয়ারটা । চিত্রের মতঃ

এবার আমরা লেয়ার অপশন থেকে ড্রাগ করে Front লেয়ারটি Front Copy লেয়ারের উপরে রেখে দেই ।

এবার আবার Shift+Ctrl+N চেপে একটি নতুন লেয়ার তৈরী করি । কোন নাম না দেয়ায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে এই লেয়ারটির নাম হবে Leyar-1 ।

নতুন লেয়ারটির উপরে পূর্বের ন্যায় Rectangle Tool এর সাহায্য চিত্রের মত একটি নতুন আয়ত ক্ষেত্র আঁকি ।

এবার এই লেয়ারটি Ctrl+T দিয়ে সিলেক্ট করে রাইট বাটন ক্লিক করে Transformer menu থেকে Disort অপশনটি সিলেক্ট করে নিচের ছবির মত কাজ করি ।

আমি এখানে Disort tool সিলেক্ট করে Fron এবং Front copy লেয়ার দু'টির উপরের ২টি+২টি = ৪টি কোনার সাথে Shape 1 এর কোনা গুলি যোগ করেছি মাত্র । ( Shape 2: লেয়ার ১ -এ যখন আমরা rectangle tool টি দিয়ে একটি লম্বা আয়ত ক্ষেত্র একেছিলাম তখনই এই লেয়ারটির নাম হয়েছিল Shape-1, কেননা আমরা পূর্বে কোন নাম সিল্কট করিনি ) । এবার আমরা আরও একটি নতুন লেয়ার নেই এবং পূর্বের ক্ষেত্রফলের মত একটি ক্ষেত্রফল ( এবার লম্বাটে ) আঁকি । লেয়ার অপশনে লেয়ারটির নাম Shape-2 ।

এবার পূর্বের মত Fron এবং Front copy লেয়ার দু'টির পাশের ২টি+২টি = ৪টি কোনার সাথে Shape 2 এর কোনা গুলো যোগ করি । এবং এটি করতে Shape-2 লেয়ারটি Ctrl+T চেপে সিলেক্ট করে মাউসের রাইট বাটনে ক্লিক করে Disort টুলের সাহায্য নিতে হবে । এবার আপনাদের বলি অপাসিটি কমিয়ে দেবার কারন । লক্ষ্য করুন Shape-2 টির অপাসিটি কমিয়ে দেয়ায় নিচের ছবিতে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত অংশ গুলির ওপাশের লেয়ার গুলোও আমরা দেখতে পাচ্ছি । এতে আমাদের কোনা মিলাতে সুবিধা হবে ।

এবার আমাদের INITIAL কাজ শেষ । এটি একটি বক্স হয়ে গেছে । আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন যে বক্সটির নিচে এবং বাম পাশে তো এখনো বাকিই আছে । লক্ষ্য করুন। ওই দুটি অংশ যে বাকি আছে আপনি কিভাবে তা বুঝতে পারছেন ? বুঝতে পারছেন কারন Front লেয়ার এবং Shape 2 লেয়ার দুটি ট্রান্সপ্যারেন্ট । এখন যদি আমি এ দুটির অপাসিট ই ১০০% দেই, তখন কিন্তু আর বোঝা যাবে না, যে বক্সটি মূলত অসম্পূর্ন । যাই হোক, এবার বক্সটিকে সফটওয়্যারের বক্সে ড়ুপান্তরিত করি । মনে করুন , আমি এটিকে DJ.Hand নামের একটি কল্পিত সফট-এর প্যাক বানাব । এজন্য প্রথমেই আমরা একটি ইমেজ সিলেক্ট করব যা থাকবে আমাদের বাক্সের গায়ে । এ জন্য আমার করা একটি ইমেজই আমি বেছে নিলামঃ

ছবিটিকে ফটোশপে খুলে ড্র্যাগ করে আমাদের ইমেজ ফাইলটির উপর আনতে হবে । লক্ষ্য রাখবেন ড্র্যাগ করে আনা ছবিটি যেন লেয়ারগুলোর সবার উপরে থাকে । উপরে না থাকলে লেয়ারটিকে ড্র্যাগ করে সবার উপরে আনুন ।

দেখুন আনলাম । কিন্তু এখানেও আরেকটি কথা । ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা, বেছে নেয়া ছবিটিও সাদা ! (যদিও আপনাদের এই প্রবলেম হবেনা অন্য কালার নিলে, অথবা ব্যাকগ্রাউন্ডের কালার চেঞ্জ করে দিলে ) । যেহেতু আমি নিয়েই ফেলেছি তাই আমি ড্র্যাগ করে আনা ছবিটির লেয়ারের উপর ডাবল ক্লিক করব । নিচের মত উইন্ডো আসলে Drop shadow, Inner Shadow এবং Outer Glow তে টিক দেব । (যদিও এই ছবিতে এই কাজটি একটি ডিসঅ্যাডভান্টেজ, তবুও বেসিক টিউটোরিয়াল আর অনেক্ষন লেখার ফলে হাপিয়ে যাওয়ায় আর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না ।

সিল্কেট করে ওকে করার পর আমি ছবিটিকে Front লেয়ারের শেপটির উপর পারফেক্টলি বসিয়েছি । এটিও Disort টুলএর মাধ্যমেই ... । নিচের চিত্রে দেখুন ।

এবার আবার একটি নতুন লেয়ার নিয়ে একটি লম্বা আয়তক্ষেত্র টানি Rectangle টুল দিয়ে , এবং এটির কালার কাস্টোমাইজ করি ।

কালার কাস্টোমাইজ করার পর আমি Text টুলের সাহয্যে DJ.Hand লেখি ঠিক মাত্র আকা আয়তক্ষেত্রের উপরে, যার লেয়ার হল shape-3 ।

এবার layer মেনু থেকে Ctrl চেপে ধরে Shape-3 and Dj-hand লেয়ার দুটি সিলেক্ট করে Ctrl+T চাপি এবং পরবর্তীতে ট্রান্সফর্মার menu থেকে Rotate 90 ডিগ্রী সিলেক্ট করি ।

রোটেট করে ঠিক আগের মতই Disort টুল ব্যাবহার করে নিচের মত কাজটি করিঃ

এবার আমরা DJ.hand লেয়ারটিকে কপি করে প্রথম লেয়ারটির সামনে এনে রাখি ...। ব্যাস ...। হয়ে গেল ...।
আরও অনেক কাজ করা যাবে এই ছবিটিতে ।। কিন্তু এমুহুর্তে মেরুদন্ডই ব্যাথা করছে ... তাই আর এগুচ্ছি না আজ ।

তবে বক্সটির একটি লাস্ট ফিনিশিং এমন হতে পারেঃ

যাই হোক ...আমি জানি অনেক অনেক ভালো ফটোশপ বোদ্ধা আছেন এখান, তাদের জন্য একটি অনুরোধ যে আমার এই ছোট্ট কাজটি দেখে হাসবেন না ...। এটি আমার করা ফটোশপ নিয়ে প্রথম টিউন এবং এ কারনেই লেখায় অনেক ধরনের ত্রুটি থাকতে পারে ।আসলে লেখার আগে কল্পনাও করিনি এওত ঝামেলা হবে ।

ফটোশপ সফট-টি আসলে বিশাল একটি সফট ...। এর সাইজটা এর গুনগত কাজের ধারা থেকে অনেক অনেক ছোট । সবাই ফটোশপ সফট এর কাজ শিখতে চেষ্টা করুন , আর মজার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় কাজ গুলোও শিখে ফেলুন ।

ভালো থাকুন ।।

আজ আর একটি কথাও নয় ...।

Level 0

আমি রুমার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 243 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

টিপস এন্ড ট্রিকস খুঁজে ফিরি ... :)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

খুব ভালো। মনে হয় দ্রুত করার চেষ্টা করেছেন।

Level 0

খুব ই ভাল ।প্রিয়তে রাখলাম ।অনেক ধর্য্য নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ ।

ধন্যবাদ ভাই, অনেক ভাল লাগল

Level 0

আসলে যেকোনো টিউনই কমেন্টের মধ্যেই তার স্বার্থকতা খুজে পায়। আপনার কষ্ট করে করা এই টিউনটিও তার দাবিদার। ভালো হয়েছে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত সহজভাবে বোঝানোর জন্য। ফটোশপ দেখে মাথা ঘুরে যেত, কারণ প্রচুত অপশন। আজ এই সহজ বিষয় জানলাম। প্রথম টিউন হিসেবে খুব সুন্দর হয়েছে। 🙂

Level 0

খুব ভাল লেগেছে । আরও কিছু জানতে চাই।

http://bdstockmarket24.blogspot.com/

apnar tune shundor hoiche. chalia jan.

ami banglay comment korbo kivabe? um using Firefox 4.
ami photoshop cs5 video tutorial kori, apnar bandwith valo hole visit korte paren,
http://www.youtube.com/me2resan or http://www.me2resan.blogspot.com
all tutorial are in HD

    @রিছান: আপনি avro সফটওয়্যারটি ব্যাবহার করে খুব সহজেই বাংলায় মন্তব্য করতে পারেন ।

    আর আপনার ভিডিও গুলো দেখার প্রচন্ড ইচ্ছে শর্তেও আমি ভিজিট করতে পারছিনা …। কেননা আমার ব্যান্ডউইথ অতিমাত্রায় নিম্নমানের বলা চলে । আপনি সময় করে একদিন নিশ্চয়ই একটি সুন্দর টিউটোরিয়াল আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন এই আশায় রইলাম ।